শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

জন্ম বাংলাদেশে ভারতে গিয়ে বিখ্যাত

জন্ম বাংলাদেশে ভারতে গিয়ে বিখ্যাত

বিখ্যাত হয়েছেন ভারতে, অথচ জন্ম তাঁদের বাংলাদেশে। সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে এমন অনেক বিখ্যাত মানুষের তালিকা দীর্ঘ। তাঁরা দুই দেশেরই মুখ উজ্জ্বল করেছেন।  তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হলো-

 

সুচিত্রা-সৌমিত্র

রমা সেন বা কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের জন্ম বাংলাদেশের পাবনায়। তাঁর জন্মসাল নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা আছে। কোনো উৎসমতে তিনি জন্মেছিলেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল, আবার কেউ বলেন তার জন্মসাল ১৯৩৪। তাঁর বাবার নাম করুণাময় দাশগুপ্ত, তিনি ছিলেন স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সুচিত্রা পাবনা শহরেই পড়াশোনা করেছিলেন। অন্যদিকে প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মও বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায়। পরে পরিবারের সঙ্গে কলকাতা পাড়ি দেন।

 

কিশোর-শচীন-সাগর সেন

গায়ক কিশোর কুমারের জন্ম বাংলাদেশের  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কিংবদন্তি শচীন দেব বর্মণের জন্ম কুমিল্লায়। সাগর সেনের জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে। তাঁরা তিনজনই কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত হন।

 

উৎপল দত্ত-মিঠুন

অভিনেতা, পরিচালক, লেখক, নাট্যকার উৎপল দত্তের জন্ম বরিশালে। অন্যদিকে বাংলা ও হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর জন্ম বরিশালে। মিঠুনের জন্ম দেশভাগের পর, ১৯৫০ সালে। পড়াশোনা করেছিলেন বরিশাল জিলা স্কুলেই। এরপর চলে যান কলকাতায়, সেখানে স্কটিশ চার্চে ভর্তি হন। তারপর একসময় অভিনয়ে জনপ্রিয় হন।

 

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়

কৌতুকাভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মেছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে ১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিস হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে শিক্ষা শেষ করে কলকাতায় যান ১৯৪১ সালে। এরপর টালিগঞ্জে অভিনেতা হিসেবে আত্মকাশ করে খ্যাতি লাভ করেন।

 

ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেন

বাঙালি পরিচালকদের মধ্যে দুই দিকপাল ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনের জন্ম বাংলাদেশে। মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে তৎকালীন ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুরেই তিনি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি পড়াশোনার জন্য কলকাতায় যান এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্ম ৪ নভেম্বর, ১৯২৫। তাঁর জন্ম ঢাকার ঋষিকেশ দাস লেনে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তাঁর পরিবার কলকাতা চলে যায়।

 

হেমাঙ্গ বিশ্বাস

ভারতীয় গণসংগীত ও গণসংস্কৃতি আন্দোলনের অবিস্মরণীয় নাম হেমাঙ্গ বিশ্বাস। ১৪ ডিসেম্বর ১৯১২ সালে বৃহত্তর সিলেটের বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার মিরাশী গ্রামে এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম। আর ১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর কলকাতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৭৫ বছরের জীবনে হেমাঙ্গ বিশ্বাস তাঁর শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন হবিগঞ্জে, সিলেটে, যৌবনে আসামে আর প্রৌঢ় বয়সে কলকাতায়।

 

পিসি সরকার

বাঙালি জাদুকরদের মধ্যে দুনিয়া কাঁপিয়েছেন পিসি সরকার। তাঁর নাম কমবেশি সবারই জানা। তিনি নিজেকে ‘দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জাদুকর’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এ পিসি সরকার বা প্রতুল চন্দ্র সরকারের জন্ম ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে। ১৯৩৩ সালে পিসি সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক হন। এরপর নানা জায়গায় জাদু দেখাতে শুরু করেন। তখনই তিনি নিজেকে ভারতের শ্রেষ্ঠ জাদুকর দাবি করতে শুরু করেন, কিছুদিন পর ‘দুনিয়াসেরা’।

 

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়; তিনি ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্ম নেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগ পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বা এখনকার বাংলাদেশেই ছিলেন। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে ভারতে চলে যান। শীর্ষেন্দুর এক বছর আগে জন্মেছিলেন বাংলা সাহিত্যের আরেক খ্যাতিমান পুরুষ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জন্মেছিলেন এ বাংলাতেই। বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার মাইজপাড়া গ্রামে ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর।  ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর তাঁর পরিবার কলকাতায় চলে যায়। শৈশবেই সুনীল এই বাংলা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান।

সর্বশেষ খবর