শিরোনাম
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার : আবুল হায়াত

মঞ্চেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই

মঞ্চেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই

একুশে পদকপ্রাপ্ত ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত। যিনি পাঁচ যুগেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শুধু অভিনেতাই নন, নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক হিসেবেও তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সুনামের সঙ্গে। এই অভিনেতার কর্মময় জীবনের বিশালতা ও অবদান অনেক বেশি। এই নাট্যজনের সঙ্গে একান্ত আলাপনে- পান্থ আফজাল

 

সম্প্রতি নাট্যজন সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন সম্মাননা পেয়েছেন। এ সম্মাননা পেয়ে কেমন বোধ হচ্ছে?

সম্মাননা মানেই এক ধরনের স্বীকৃতি। ডেফিনেটলি এটা আমাকে অনেক ইন্সপায়ার তো করবেই। আসলে নতুন করে আবার এই বয়সে এসে অনেক অনুপ্রেরণা পাচ্ছি। একটা আবেগ কাজ করছে। মঞ্চে অভিনয় অনেক আগেই আমি থামিয়ে দিয়েছি বলা চলে। কিন্তু মঞ্চের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা আছে। আমি লিখছি। আমার লেখা নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে, এটা একটা বড় কথা। আমি তো সবসময় একটা কথা বলেছিলাম যে, আমি মঞ্চেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। এটা আমার ভালোবাসার জায়গা। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি মঞ্চ নাটক দেখি এবং ১০ বছর বয়স থেকে আমি অভিনয় করি মঞ্চে। একটা সময় ছিল যখন আমার আর্থিক কারণেই মঞ্চ প্রায় ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম টেলিভিশনে। সিনেমাতেও কাজ করেছি। রেডিও, বিজ্ঞাপন বিভিন্নভাবে কাজ করেছি। কিন্তু মঞ্চের জায়গাটা যেটা অভিনয়ের আঁতুড়ঘর, ওটাকে আমি কখনো ভুলতে পারি না। সেখান থেকে যখন আমি একটা স্বীকৃতি পাই সেটা আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে। আমার মনের ভিতর একটা কষ্ট হয় যে, কেন আমি ছেড়ে এসেছি মঞ্চ। এটাই তো আমার আসল জায়গা। আসলেই এটাই আমার জায়গা। আমি অত্যন্ত আপ্লুত ও আবেগে আক্রান্ত এবং অনুপ্রাণিত, আবার যদি কিছু করতে পারি।

 

তাহলে আমরা আশা করতেই পারি, আপনি থিয়েটার মঞ্চে ফিরছেন?

প্রতি মুহূতেই আমি আশা করি থিয়েটারে ফিরব। মাঝখানে রিহার্সেলও শুরু করেছিলাম একটা নাটকের। সেই সময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। যে কারণে তখন আর আমি করতে পারিনি। তারপর কভিড এসে গেল। যে কারণে বাধাগ্রস্ত হলো। এখন মঞ্চে নামতে চাচ্ছি। হয়তো পরিচালকের ভূমিকায় নামব সম্ভবত আর কি।

 

আপনার সঙ্গে প্রয়াত নাট্যজন মান্নান হীরাকেও সম্মাননা (মরণোত্তর) জানানো হয়েছে...

এটা অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার যে, মান্নান হীরা নেই। আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন ও ভালো একজন মানুষ। হীরার কথা মনে হলেই একজন ভালো মানুষের চেহারা আমার চোখে ভাসে।

 

দেখতে দেখতে ৮০তম বসন্তে পৌঁছেছেন। সামনেই এই মধুর ক্ষণটার উদযাপন, কেমন হবে?

আমি জানি না কেমন হবে! সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সেই বইটা যেটা ১০ বছর ধরে লিখছি সেটা ভাবছি এবার যেমন করেই হোক প্রকাশ করব। জানি না পারব কি না!

 

জন্মদিনের বিশেষ দিনটি কীভাবে কাটে?

ছোটবেলা থেকেই কখনো আয়োজন করে জন্মদিন করা হয়নি। আর জন্মদিন নিয়ে আমার আলাদা কোনো পরিকল্পনা থাকে না। তবে পরিবারের সদস্যরাই ঘরোয়াভাবে আমার জন্মদিনটি আয়োজন করে। রাত থেকেই আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, শুভাকাক্সক্ষীরা ফোন করে, খুদেবার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানায়। এদিন আমার নাতনি শ্রীষারও জন্মদিন।

 

৮০ বছর! কম কথা নয়...

সেটা তো বটেই। আল্লাহর কাছে আমি সবসময় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। আল্লাহকে বলি, ‘আল্লাহ্, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! এত দিন আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। দুনিয়ার অনেক কিছুই দেখেছি, আল্লাহর যত নিয়ামত সব দেখতে পাচ্ছি। আমি কাজ করতে পারছি আমার ভালোবাসার জায়গায়।

 

এই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাদের মতো গুণী নাট্যজনরা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন। এটা নিয়ে কি কখনো মন খারাপ হয়?

অনেক সময় মন খারাপ হয়। আসলে আমরা যখন কিছু শিখলাম, যখন আমরা অভিজ্ঞ হলাম তখন আমাদেরকে অলমোস্ট বাতিল করার মতো একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে মিডিয়াতে আর কি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা অন্যান্য দেশে যেমন দেখি, উদাহরণ হিসেবে বললে ইন্ডিয়াতে যদি দেখি তাহলে দেখব, যতই সিনিয়র হয় তাদের নিয়েই তারা কাজ করে। তাদের নিয়ে নাটক লেখে। আর এখানে আমাদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। ভিউজের কবলে পড়ে গেছি আমরা। লাইক অ্যান্ড ভিউ- এটার কবলে আমরা পতিত হয়েছি। এখান থেকে আমাদের শিল্পটা কবে যে বেরিয়ে আসবে সেটা এখনো জানি না।

 

প্রবীণদের পারিশ্রমিকও তো ঠিকঠাক দিতে চায় না...

পারিশ্রমিক বিষয়টা বড় কথা নয়। আমি যদি প্রফেশনাল হই তাহলে আমার পারিশ্রমিক তো দেবেই। আমি যদি কাজ করি প্রফেশনাল ওয়েতে তাহলে তারা পারিশ্রমিক দেবেই। সেটা বড় কথা না। আমাকে ইউটিলাইজ করতে হবে। আমার এত বছরের, তাও প্রায় ৭০ বছরের অভিজ্ঞতা- সেটাকে কাজে না লাগাতে পারলে আর কি! এটা তাদের জন্য দুর্ভাগ্য, আমার জন্য নয়। আই অ্যাম হ্যাপি। আই অ্যাম অলওয়েজ ডুয়িং মাই জব।

 

তাহলে সামনে নির্দেশনায় আপনাকে আমরা পাচ্ছি?

ইনশা আল্লাহ। ইনশা আল্লাহ। হ্যাঁ, স্টেজেই আমি আসছি ডিরেক্টর হিসেবে। ইনশা আল্লাহ।

সর্বশেষ খবর