রবিবার, ২৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
আলাপন

আমি ভাইরাল-ভার্চুয়ালের দৌড়ে নেই

আমি ভাইরাল-ভার্চুয়ালের দৌড়ে নেই

বাংলা সংগীত সমুদ্রকে উত্তাল করা ‘আমার একটা নদী ছিল’ গানের স্রষ্টা পথিক নবী। ত্রিমাত্রিক জীবনবোধ থেকে কুড়ানো ‘শব্দের মেলা’ দিয়ে এ আধ্যাত্মিক গানের গায়ক সাজান তার গানের একেকটি পঙ্ক্তি। সব ছেড়ে গানকে সঙ্গী করে যে মানুষটি পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন দিনের পর দিন। বোহেমিয়ান প্রকৃতির এ শিল্পীর সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

১৫ বছর ধরে নতুন গান প্রকাশ করেননি, কেন?

আমি আছি আমার জগৎ নিয়ে। আমি নিজের মতো লিখি, সুর করি, গাই। হয়তো সেগুলো প্রকাশ করিনি। আমি আমার মতো গান গাই। স্টেজ প্রোগ্রাম করি অনেক বেশি। এটা আত্মার শান্তি। হয়তো গান বের হচ্ছে না; নতুন গান নেই। সেই হুলুস্থূল হয়তো আমাকে নিয়ে নেই, তবে মাসপিপলের আমাকে নিয়ে যে আগ্রহ সেটা অনেক শান্তি দেয়। নতুন গান বাজারে নেই তবুও গান করেই বাঁচি। এটা মহান আল্লাহতায়ালার এক বড় নেয়ামত। গানকে এখনো আঁকড়ে ধরে আছি। গানের সঙ্গে আছি। কে স্বীকৃতি দিচ্ছে আর কে দিচ্ছে না তাতে কোনো যায়-আসে না। আর আগের মতো সেই অডিও-সিডি মার্কেট নেই। আছে হয়তো সে-ও ভার্চুয়াল মার্কেট। এখন তো শিল্পীরা ঘরে বসেই গান করে। কিন্তু আমি ভাইরাল-ভার্চুয়ালের দৌড়ে নেই। যতগুলো গান করেছি সেগুলো নিজের ভিতর থেকেই এসেছে। ভালো লাগা থেকে করেছি। এখন যে গান হচ্ছে সেগুলো আমার টাইপের না। আমার টাইপ অন্যরকম। তবে গান করছি প্রচুর। গত ১৫ বছরে শত শত গান তৈরি করেছি নিজের কথা-সুরে। তবে প্রকাশ হয়তো হচ্ছে না।

 

গানের বাজার পরিবর্তনে শিল্পীরা দিশাহারা...

যখন গানের বাজার চেঞ্জ হলো, ওই সময় আমি এসেছি। বাংলাদেশে অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ক্যাসেটটি ছিল শেষ ক্যাসেট। অডিও ক্যাসেট ইন্ডাস্ট্রি প্রায় শেষ। সিডি জগৎ শুরু। এরপর ক্ষণিক পরেই পেনড্রাইভ, মেমোরি কার্ডের সময় এলো। গানের পরিবর্তন হতে দেখলাম, বুঝলাম, শিখলাম। তবে গা ভাসিয়ে দিইনি।

 

শিল্পীরা ভাইরাল-ভিউ বাণিজ্যের চক্করে, ঠিক কি?

ভিউয়ের চক্করে পড়ে গেছে সবাই। কিন্তু জনগণকে ভিউ দেখিয়ে চক্করে ফেলা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। যেভাবে সবাই কাজ করে সেভাবে আমি পারি না। আমি আমার জায়গা থেকে সরে উঠতে পারিনি। সাপোর্টও নেই, পরিচয় নেই, কারও সঙ্গে সম্পর্কও নেই। এখন তো অনেক ব্যাপার-স্যাপার! আগে অডিও কোম্পানির ওপর সবাই নির্ভরশীল ছিল। এখন তো কে কোনটার ওপর, কার ওপর নির্ভর বোঝা বড় দায়! আমাদের এখানে সত্যিকারের শিল্পীদের মূল্যায়ন কিন্তু কম। তার মানে এই না যে আমি একেবারে শিখে আসা শিল্পী। আমার সেরকম প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই গানের। আমি যন্ত্রসংগীতশিল্পী নই। নিজের ভিতরে গুনগুন করতে করতে সুর-কথায় একান্ত নিজের জগতে গান করি। আমি জনগণের মধ্যে আছি। জনগণের ভালোবাসায় গান করি। আমি মানুষের সঙ্গে ন্যাচারেলি মিশি, ফায়দা নিতে মিশি না।

 

শিল্পীরাও গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত এখন...

সেটা অবশ্য এখন সব সেক্টরেই দেখা যাচ্ছে। দুই-একজন শিল্পী, ব্যান্ড, চ্যানেল, হাউস বা ম্যানেজমেন্টকে কেন্দ্র করে গান হচ্ছে। অন্য কেউ ভালো কাজ করলেও স্বীকৃতি দেওয়ার মানসিকতা নেই এখন। আগে তো এমনটা ছিল না। আগে ভালো কাজ হতো। শিল্পচর্চা হতো। সৃষ্টিশীল কাজ হতো, যা সবাই সমর্থন করত। সেই চর্চা এখন আর নেই। ঘরে বসেই এখন গান তৈরি করতে পারে দু-তিনজন মিলে। কিন্তু কথা হচ্ছে সেসব গান কয়জন শুনছে? তবে হ্যাঁ, প্রশংসার জায়গায় বলেন আর ভিউ বাণিজ্য বলেন, প্রচুর ভালো কাজও কিন্তু হচ্ছে। আসলে যাদের ভালো কাজ করার তারা কিন্তু করছেই।

 

মানুষ আপনাকে খোঁজে...

মানুষের এ ভালোবাসাই বড় স্বীকৃতি। মানুষের ডাকে আমি যাই, গান করি। লাইভ প্রোগ্রাম বা স্টেজ শোগুলো করি। আমার প্রতি কখনো কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ ছিল না। তবুও আমি গান করেই খাই। অনেক স্টেজ শো করি। কারণ, মানুষের ভালোবাসা আছে বলেই।

 

গান প্রকাশ পাবে? আর লেখালেখি?

প্ল্যান আছে। আমি তো কোম্পানি না। যদি কপালে থাকে তাহলে।

সর্বশেষ খবর