রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
আলাপন

এখনকার গান ওয়ানটাইম গ্লাসের মতো

এখনকার গান ওয়ানটাইম গ্লাসের মতো

নব্বই দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠ তারকা মনি কিশোর। যার গাওয়া পুরনো গানগুলো আজো শ্রোতাপ্রিয়। নব্বই দশকের শুরুতেই ‘চার্মিং বউ’ অ্যালবামের  ‘কি ছিলে আমার’ গানটি তাঁকে দাঁড় করিয়ে দিল বাজারকাটতি অ্যালবামের শিল্পী হিসেবে। এরপর করেছেন একে একে ৩০টির বেশি একক অ্যালবাম। পাঁচ শতাধিক গানের এই শিল্পীর সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

শুনেছি আপনার জনপ্রিয় গান কি ছিলে আমার নতুন করে শ্রোতাদের সামনে আনছেন। কথাটি সত্য?

হ্যাঁ। গানটি তো আমার লেখা ও সুরে গাওয়া। এবার নতুন সংগীতায়োজনে গানটি প্রস্তুত করছি। তবে এর সঙ্গে আরেকটা অন্তরা শুধু বাড়িয়েছি আমার মতো করে। নব্বই দশকের যারা গানটি শুনেছিলেন তাদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় ছিল গানটি। ২০২৪ সালে এসেও শ্রোতারা গানটি ভুলেনি। অবশ্য মাঝে একটু গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। এই গ্যাপটা পূরণ করার জন্য লায়নিক মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার রণক ইকরাম আমাকে বুদ্ধি দেওয়ার পর গানটি করছি। ইতোমধ্যে গানটির রেকর্ডিংও শেষ। নতুন করে সংগীতায়োজন করেছেন খায়েন আহমেদ। আশা রাখছি, গানটিতে সবাই আগের সেই আবেশই পাবেন।

 

নতুন কোনো গানের সুখবর?

নতুন গান করছি। বেশ কিছু গান আমার ইউটিউব চ্যানেল ‘মনি কিশোর’-এ প্রকাশও করেছি। দেড়শ-দুইশ’র মতো নতুন-পুরনো মিলে গান রয়েছে চ্যানেলটিতে।

 

এখনকার গান আর সেই পুরনো দিনের গানের মধ্যে কি পার্থক্য খুঁজে পান?

বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ৯০ দশকের গানগুলো কিন্তু এখনো মানুষের মুখে মুখে ফিরে আলোচনায়। সেই সময় শিল্পীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ছিল। যেকোনো গান করার আগে সেই গানটি নিয়ে আলোচনা হতো। মিল্টন খন্দকার, আজাদ মিন্টু, প্রণবদার মতো গুণীজনের সঙ্গে আমরা গান নিয়ে বসতাম। কোন গানটি গ্রহণযোগ্য হবে, কোন গানটি শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাবে- সেসব নিয়ে ব্যাপক কথা হতো। আর এখন তো হোয়াটস আপ, ইমেইল কিংবা ইনবক্সে গান পাঠায়। কত সস্তা আর সহজ হয়ে গেছে গান করা-গাওয়া। এখনকার গান হচ্ছে ওয়ানটাইম গ্লাসের মতো যেটিতে পানি বা ড্রিংকস থাকে। এরপর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দেয়। এখনকার গান শোনা শেষ, দেখা শেষ এরপর ভাগাড়ে। এখনকার গানের কী কথা! কি শুনবে শ্রোতা? আগামাথা কিছুই তো বুঝি না! আমি মনে করি, গান হচ্ছে গুরুমুখী বিদ্যা। আমার সংগীতগুরু ছিলেন প্রণব ঘোষ। আমি ধন্য যে, আমার করা আগের গানগুলোর অনুভূতি ২০২৪-এ এসেও রয়ে গেছে। এর চেয়ে আর কি চাওয়া আছে একজন শিল্পীর?

 

এত পেশা থাকতে সংগীতশিল্পী কেন হলেন?

আমি জীবনে ধরাবাঁধা নিয়মে চলতে চাইনি। চলতে ভালো লাগে না। স্বাধীনভাবে সব কিছু নিজের মতো করতে চাই। যখন ঘুমাতে ইচ্ছে করে ঘুমাব, যখন খেতে ইচ্ছে করে খাব। সময় মেনে কখনো চলিনি। আর সরকারি চাকরি তো করতে হয় নিয়মের মধ্যে, যা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। ’৯০-এর আগে থেকেই গান করি।

’৮০ সাল থেকে পাড়া-মহল্লায় গান করতাম। আমি ভালো ফুটবল খেলতাম। জাতীয় পর্যায়ে খেলেছি। রাজবাড়ী রেলওয়ে মাঠে খেলেছি। আর আমার বাবা ছিলেন ফরিদপুর পুলিশের এসপি। আমি নিউ টেনে যখন উঠেছি তখন আমি ফরিদপুর জেলা ফুটবল দলের নিয়মিত সদস্য। ওখান থেকে জাতীয় দলে। যখন ঢাকায় এলাম তখন এয়ারফোর্সে চাকরিতে প্রবেশ করলাম। এয়ারফোর্সের আগা খান গোল্ডকাপ খেলেছি। আমি মাদারীপুর জুট মিলস, খুলনা শিপইয়ার্ডেও চাকরি করেছি। তবে শেষমেশ গানকেই ভালোবেসে গেছি। আসলে আমি বাস্তবতাটাকে মেনে চলতে ভালোবাসি। স্বপ্ন আমার কাছে মনঃপুত না।

 

স্টেজ শো করছেন?

স্টেজ শো কম করছি। আগের মতো না। আগে তো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কনসার্টের ধুম পড়ে যেত। গান হতো পাড়া-মহল্লায়।

 

শ্রোতাদের কাছে প্রত্যাশা কী?

যতদিন শরীর ভালো থাকে, গলায় সুর থাকে ততদিন গান গাইব। যতদিন গান গাইলে শ্রোতারা শুনবে, আবেশ-অনুভূতি হবে ততদিন আমি মনি কিশোর আপনাদের জন্য আছি। তবে যেদিন গান বাজনা আর ভালো লাগবে না, তখন থেকে আর গাইব না।

সর্বশেষ খবর