সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার : হানিফ সংকেত

ভাইরাল এখন ভাইরাস, ভিউ এক ধরনের রোগ

ভাইরাল এখন ভাইরাস, ভিউ এক ধরনের রোগ

জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেতের অনন্য কীর্তি ‘ইত্যাদি’। তাঁর ৪৩ বছরের মিডিয়া জীবনে টানা ৩৬ বছর ধরেই করে যাচ্ছেন এ অনুষ্ঠানটি। শুরু থেকে এখনো একই চ্যানেলে-একই মানে, বাংলাদেশ টেলিভিশনে। তিনি তাঁর নিরলস প্রয়াস, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে মিডিয়াতে কাজ করে যাচ্ছেন।  আপসহীন, স্পষ্টবাদী ও সমাজসচেতন সৎ মানুষ হিসেবে সবাই তাঁকে ভালোবাসেন। হানিফ সংকেত আজ নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। ইত্যাদির মাধ্যমে হানিফ সংকেতের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের।  ইত্যাদি হয়ে ওঠে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় ভরা বাংলাদেশ। ইত্যাদি ও নানা বিষয় নিয়ে এ জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হয়েছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

ঈদের সঙ্গে ইত্যাদির ঐতিহ্যের সম্পর্ক রয়েছে। ঈদে ইত্যাদি থাকবে এটা সময়ের দাবি, দর্শকদের দাবি-তারপরও কোরবানির ঈদে ইত্যাদি নেই কেন?

এর জন্য আমি নই, দায়ী সময়। একটি ঈদের ইত্যাদি নির্মাণ করতে যে পরিমাণ সময় ও শ্রম দেওয়া প্রয়োজন সেই সময়টা কোরবানি ঈদের আগে পাওয়া যায় না। তাছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠান সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে অনুষ্ঠানের মানের দিকে একটু বেশি গুরুত্ব দিই।

 

প্রতি ঈদেই দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে আপনার নাটক। বিশেষ করে রুচিশীল দর্শকদের কাছে, নিয়মিত নাটক করছেন না কেন?

আমি শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে ব্যবসাটাকে গুরুত্ব দিই না। নাটক প্রতি মাসেই করা সম্ভব। কারণ ইত্যাদির ১ মিনিটের একটি নাট্যাংশ লিখতে অনেক সময় মানে ২/৩ দিনও লেগে যায়। আর নাটক শুরু করলে দুই দিনেই লিখে শেষ করা যায়। ধারণ-সম্পাদনা শেষে এক সপ্তাহেই একটি নাটকের নির্মাণকাজ শেষ করা যায়। কিন্তু ওই যে আমি একটি নীতি মেনে চলি, ‘সংখ্যা নয়’, ‘মান’, তাই করি না। তাছাড়া আমি নাটকের চেয়ে ইত্যাদিকেই বেশি গুরুত্ব দিই।

 

এবারের নাটকে নতুনদের নিয়ে কাজ করলেন, কারণ কী?

কারণ ওদের অনেকেই ভালো কাজ করে। আর ওদেরও উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। ওদের অভিনয়গুণের প্রমাণ ‘ব্যবহার বিভ্রাটেই’ দর্শকরা পেয়েছেন।

 

এবারের ঈদেও আপনার নাটকটি প্রশংসিত হয়েছে, আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

আমি আনন্দিত, কারণ আমি জানি আমার নাটকটি সবাই পরিবার নিয়ে দেখেছেন। তাই প্রতিক্রিয়া আনন্দের এবং তৃপ্তির। আমার নাটকটি গালিমুক্ত, নোংরামিমুক্ত, ভিউরোগমুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন পারিবারিক নাটক। আমার ফ্যানপেজে দর্শকদের চমৎকার মন্তব্যগুলো এ নাটকের প্রাপ্তি।

 

অবশ্যই আপনার নাটক সবসময়ই সমাজ সচেতনতামূলক এবং শিক্ষণীয় হয়, কিন্তু আপনি ভিউকে রোগ বলছেন?

অবশ্যই। এ রোগের উদ্দেশ্য শারীরিক ক্ষতি নয়, মানসিক ক্ষতি-সামাজিক ক্ষতি। ভিউ চিন্তায় অর্থ লাভের প্রত্যাশায় একশ্রেণির দর্শককে আকর্ষণ করার জন্য অশ্রাব্য গালি এবং অশোভন দৃশ্য সংযোজন করা হয়, যা পরিবার নিয়ে দেখা যায় না। ভিউচর্চার প্রধান উদ্দেশ্য শিল্পচর্চা নয়, অর্থ উপার্জন। এসব নাটকের কোনো সেন্সর হয় না, সেলফ সেন্সরও হয় না। কী প্রচার করা উচিত, কী উচিত নয় এ বোধশক্তি এখন অনেকে হারিয়ে ফেলেছেন। কারণ- ব্যবসা। দুঃখের বিষয় কিছু শিল্পী যারা একসময় নোংরামিকে ঘৃণা করতেন তারাও এখন অর্থ লোভে ভিউর পথে পা বাড়িয়েছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, শিল্প-সংস্কৃতি এখন কনটেন্ট হয়ে গেছে। অথচ কিংবদন্তি শিল্পী রাজ্জাক, শাবানা, ববিতা, আলমগীর, হুমায়ুন ফরীদি- এমনই শতাধিক শিল্পী রয়েছেন যাদের কেউ-ই ভিউশিল্পী নন। তাদের মোবাইল ফলোয়ার ছিল না। তাদের দর্শকরা ফলো করতেন অন্তর দিয়ে।

 

ভাইরাল সম্পর্কে আপনার মতামত কী, আপনার ইত্যাদির অনেক কিছুই নিয়মিত ভাইরাল হচ্ছে?

আমার কাছে ভাইরাল হচ্ছে এক ধরনের ভাইরাস। কোনো কিছু ভাইরাল হওয়া মানে এটা নয় তা মানসম্পন্ন। অনেক খারাপ জিনিসও ভাইরাল হয়। তাই বলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ইত্যাদির যা কিছু ছড়িয়েছে বা ছড়ায় তা রুচিশীল দর্শকদের ভালো লাগে, অন্তর ছুঁয়ে যায় বলেই তা সব বয়সি, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ছড়িয়ে যায়।  শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই তা পছন্দ করেন। কিন্তু তথাকথিত ভাইরালের অনেক কিছুই পরিবার নিয়ে দেখা যায় না। শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেখাও ঠিক নয়।

 

এক কথায় এখনকার মিডিয়া সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানতে চাইলে কী বলবেন?

মিডিয়া এখন অস্থির। প্রয়োজন স্বস্তির।

সর্বশেষ খবর