বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
আলাপন

ভিউয়ের কবলে পড়ে গেছি আমরা

ভিউয়ের কবলে পড়ে গেছি আমরা

একুশে পদকপ্রাপ্ত ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত। যিনি পাঁচ যুগেরও বেশি সময় ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। শুধু অভিনেতাই নন, নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক হিসেবেও তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন সুনামের সঙ্গে। এ অভিনেতার কর্মময় জীবনের বিশালতা ও অবদান অনেক বেশি। এ নাট্যজনের সঙ্গে একান্ত আলাপনে- পান্থ আফজাল

 

জন্মদিনে ফেসবুকে অনেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে আপনাকে...

ভাগ্যটা মাশাল্লাহ আমার ভালো। জন্মদিন দুটো, একটা কাগুজে, একটা আসল। আমার জন্মদিন ২৫ জুন নয়; এইটা কাগুজে জন্মদিন। আমার আসল জন্মদিন হচ্ছে ৭ সেপ্টেম্বর।

 

৮০ তমর মধুর ক্ষণটার উদযাপন, কেমন হবে?

আমি জানি না কেমন হবে! সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- সেই বইটা যেটা ১০ বছর ধরে লিখছি সেটা ভাবছি এবার যেমন করেই হোক প্রকাশ করব। জানি না পারব কি না!

 

৮০ বছর! কম কথা নয়...

সেটা তো বটেই। আল্লাহর কাছে আমি সবসময় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। আল্লাহকে বলি, ‘আল্লাহ, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! এতদিন আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। দুনিয়ার অনেক কিছুই দেখেছি, আল্লাহর যত নিয়ামত সব দেখতে পাচ্ছি। আমি কাজ করতে পারছি ভালোবাসার জায়গায়।

 

দীর্ঘদিন মঞ্চে দেখা নেই...

মঞ্চে অভিনয় অনেক আগেই আমি থামিয়ে দিয়েছি বলা চলে; কিন্তু মঞ্চের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা আছে। আমি লিখছি। আমার লেখা নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে, এটা একটা বড় কথা। আমি তো সবসময় একটা কথা বলেছিলাম যে, আমি মঞ্চেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। এটা আমার ভালোবাসার জায়গা। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি মঞ্চনাটক দেখি এবং ১০ বছর বয়স থেকে আমি অভিনয় করি মঞ্চে। একটা সময় ছিল যখন আমার আর্থিক কারণেই মঞ্চ প্রায় ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম টেলিভিশনে। সিনেমাতেও কাজ করেছি। রেডিও, বিজ্ঞাপন বিভিন্নভাবে কাজ করেছি। কিন্তু মঞ্চের জায়গাটা যেটা অভিনয়ের আঁতুড়ঘর, ওটাকে আমি কখনো ভুলতে পারি না। আমার মনের ভিতর একটা কষ্ট হয় যে, কেন আমি ছেড়ে এসেছি মঞ্চ! এটাই তো আমার আসল জায়গা। আসলে এটাই আমার জায়গা। প্রতি মুহূর্তেই আমি আশা করি থিয়েটারে ফিরব। মাঝখানে রিহার্সেলও শুরু করেছিলাম একটা নাটকের। সেই সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। যে কারণে তখন আর আমি করতে পারিনি। তারপর কভিড এসে গেল। যে কারণে বাধাগ্রস্ত হলো। এখন মঞ্চে নামতে চাচ্ছি। হয়তো পরিচালকের ভূমিকায় নামব সম্ভবত আর কি।

 

এ ইন্ডাস্ট্রিতে আপনাদের মতো গুণী নাট্যজনরা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন। এটা নিয়ে কি কখনো মন খারাপ হয়?

অনেক সময় মন খারাপ হয়। আসলে আমরা যখন কিছু শিখলাম, যখন আমরা অভিজ্ঞ হলাম তখন আমাদেরকে অলমোস্ট বাতিল করার মতো একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে মিডিয়াতে আর কি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা অন্যান্য দেশে যেমন দেখি, উদাহরণ হিসেবে বললে ইন্ডিয়াতে যদি দেখি তাহলে দেখব, যতই সিনিয়র হয় তাদের নিয়েই তারা কাজ করে। তাদের নিয়ে নাটক লেখে। আর এখানে আমাদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। ভিউয়ের কবলে পড়ে গেছি আমরা। লাইক অ্যান্ড ভিউর কবলে পতিত হয়েছি। এখান থেকে আমাদের শিল্পটা কবে যে বেরিয়ে আসবে সেটা এখনো জানি না।

 

প্রবীণদের পারিশ্রমিকও ঠিকমতো দিতে চায় না...

পারিশ্রমিক বিষয়টা বড় কথা নয়। আমি যদি প্রফেশনাল হই তাহলে পারিশ্রমিক তো দেবেই। আমি যদি কাজ করি প্রফেশনাল ওয়েতে তাহলে তারা পারিশ্রমিক দেবেই। সেটা বড় কথা না। আমাকে ইউটিলাইজ করতে হবে। আমার এত বছরের, তাও প্রায় ৭০ বছরের অভিজ্ঞতা- সেটাকে কাজে না লাগাতে পারলে আর কি! এটা তাদের জন্য দুর্ভাগ্য, আমার জন্য নয়। আই অ্যাম হ্যাপি। আই অ্যাম অলওয়েজ ডুয়িং মাই জব।

সর্বশেষ খবর