শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকার : রিজিয়া পারভীন

একজন প্লেব্যাক সিঙ্গারকে অলরাউন্ডার হতে হয়

একজন প্লেব্যাক সিঙ্গারকে অলরাউন্ডার হতে হয়

প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রিজিয়া পারভীন। সাত বছর বয়স থেকেই তাঁর সংগীত জীবন শুরু হয়। দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে আগের মতো করে নতুন গানে নিয়মিত নন তিনি। বেশির ভাগ সময় আমেরিকায় থাকেন। এরই মাঝে ঢাকায় এসেছেন, অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিয়মিত আয়োজন ‘প্রতিদিনের প্রিয়জন’ আড্ডায়। তাঁর সঙ্গে আড্ডায় মুখোমুখি হন- পান্থ আফজাল

 

এবারকার বাংলাদেশের সফর কত দিনের?

এসেছি তো খুবই অল্প সময়ের জন্য। ঈদ করেছি ফ্যামিলির সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে। তবে এবারে আসার মূল কারণ হচ্ছে আমার একটা নতুন ফ্যামিলি মেম্বার এসেছে। ওর বয়স এখন ১১ মাস। আমার একটা নাতনি হয়েছে। আমি দাদি হয়েছি। আই ফিল প্রাউড যে দাদি হয়েছি আমি। ওকে দেখিনি আমি। যার জন্য এবারকার আসা। আসলে প্রতিটা মানুষের সেটা ছেলেদের কী হয় জানি না তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে এক একটা অধ্যায় এক এক রকম লাগে। এই ফিলিংসটা অন্যরকম। যেন ছেলে-মেয়ের থেকে বেশি আপন, বেশি আদর-ভালোবাসা এখন নাতি-নাতনিদের জন্যই হয়।

 

ফিরে গিয়ে নিশ্চয়ই শোতে ব্যস্ত হয়ে যাবেন?

এটা ঠিক। আমার বেশকিছু শো আছে। সেটা জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে। তিন মাস ধরে শো রয়েছে ওখানে, ওজন্যই যাব। তবে আবার নভেম্বরে ফিরে আসব।

 

সাত বছর বয়সে আপনার সংগীত জগতে বিচরণ...

(মৃদু হাসি দিয়ে) আসলে আমার বাবা শখে গান করতেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করতে পারতেন। বাবা ওরকম কিছুই জানতেন না। ওই সারেগামাটুকু পর্যন্তই। তবে বাবার কাছেই প্রথম আমি গান শিখেছি হারমোনিয়াম বাজিয়ে। এরপর বাবা আমাকে ওস্তাদজি ধরে গান শেখাতে দিলেন এবং আমার যখন ১০-১২ বছর তখন আমার জন্য কিন্তু পাঁচজন ওস্তাদ! গানের টিচার ছিলেন চারজন আর একজন তবলা শেখাতেন। মানে তালে যেন আমি ঠিকঠাক শিখতে পারি। আমি তো তখন ছোট মানুষ। সে সময় আমি খেলার সময়ই পেতাম না। তখন খুবই মেজাজ খারাপ হতো বাবার ওপর। এখন ফিল করি। তবে বাবার ইচ্ছা, মায়ের ইচ্ছা, ভাইবোনের ইচ্ছা তারপর একটু যখন বড় হলাম তখন ফ্যামিলির সবাই খুবই উৎসাহ দিতেন গান গাইতে। আমি তো রাজশাহীতে বড় হয়েছি; সেখানকার আত্মীয়-স্বজনসহ আরও অনেকেই গানের বিষয়ে খুবই ইনকারেজ করতেন। আমি অন্য ভাইবোনদের থেকে বেশ ছোট। তাদের অনেক ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে গেছে। তো আমি যখন গান শিখি তখন অন্যরা গান শেখে নাই। আমিই শুধু শিখেছি।

 

অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী আপনি। এ সময়ে এসেও আপনার জনপ্রিয়তাকে কীভাবে দেখছেন?

ভালো লাগাটা তো সবারই ভালো লাগে। ঠিক তেমনি আমারও ভালো লাগে। আমার গান যখন অন্যরা গায়, আমি খুবই এপ্রিসিয়েট করি। আমার খুব ভালো লাগে। আসলে অনেকে আছে না, আমি এখানে আছি তাহলে ও কেন আমার গান করবে? আমি আবার এইটা না। আমার কথা হলো আমি থাকলেও গাও, না থাকলেও গাও। মানে নতুনরা যখন গায় আমাদের গান। আমরা নিজেরাও গাই। শাহনাজ আপা, সাবিনা-রুনা আপার গান তো আমরাও গাই। স্বাভাবিকভাবেই এটা অনেক ভালো লাগার বিষয়।

 

 

প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান রয়েছে। শুরুটা কীভাবে হয়েছিল প্লেব্যাকে?

আমার সিনেমায় আসাটা শ্রদ্ধেয় নায়করাজ রাজ্জাক ভাইয়ের কারণেই। তিনি একবার রাজশাহীতে নাটক করতে গিয়েছিলেন। সেখানে মফস্বলে যেমন নাটকের আগে সংগীতানুষ্ঠান হয় সেরকম অনুষ্ঠানে আমি গান করি। তারপর উনি আমার গান অনেক পছন্দ করেন। উনি গান শেষে সবার সামনে বললেন, আমি তোমাকে দিয়ে সিনেমায় গান করাব। আমি তো এ কথা শুনে মহাখুশি। সিক্স-সেভেনে পড়ি তখন। আসলে ওই সময় সিনেমাতে গান করাটা বিশাল এক ব্যাপার!

 

এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে মনে হয় বেশি সিনেমায় গান করা হয়েছে?

হ্যাঁ। আর আমার সিনেমায় যত হিট গান আছে তার ম্যাক্সিমামই এন্ড্র্রুদার সঙ্গে গাওয়া। এন্ড্রুুদা আমার গুরুভাই। আমরা কিন্তু একই ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী। এন্ড্রুদা, খালেক, আমি একই ইউনিভার্সিটির। আমি এন্ড্রুদার কাছে গান শিখেছি।

 

আপনাকে দিয়ে সিনেমায় সব ধরনের গান করানো হয়নি বলে অভিমান ছিল আপনার, সত্যি কি?

আমি অনেক হাই পিচে গান গাইতে পারি। তার মানে এই না, আমি অন্যান্য গান গাইতে পারি না। আমি একজন ক্লাসিক্যাল বেজড আর্টিস্ট। ক্লাসিক্যাল গাইতে পারি, রাগ প্রধান গান করতে পারি, মেলোডি গান গাইতে পছন্দ করি। এখন যদি ফিল্ম ডিরেক্টররা সব সময় মনে করেন, হাই স্কেলের গানই শুধু আমাকে দিয়ে করাবে। একটু ফাস্ট স্কেলের ধুম-ধারাক্কা গানই আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে। তবে আমার অভিমানটা ছিল যে, আমি সিনেমায় মেলোডি গান গাইতে চাই। আমি একটু সেমি ক্লাসিক্যাল গান করতে চাই। কিন্তু উনারা কেমন জানি! হয়তো হয়ে উঠে নাই, কপালে নাই আমার। আমি মনে করি, একজন প্লেব্যাক সিঙ্গারকে অলরাউন্ডার হতে হয়।

 

এখনকার সিনেমায় গান গাওয়ার অফার এলে করবেন?

গান গাওয়ার ব্যাপারে আমি সব সময়ই আগ্রহী। সেটা সিনেমা হোক, স্টেজ হোক বা যে কোনো ধরনের গানই হোক না কেন। এখন অ্যালবামও হয় না। একটা-দুইটা গান করে নিজের ইউটিউবেই ছাড়তে হয়। আগে একটা মজা ছিল, ঈদ এলে আমরা পাল্লা দিয়ে অ্যালবাম বের করতাম। ওই মজাটা এখন আর নাই। সে সময়টাকে খুব মিস করি।

সর্বশেষ খবর