সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদীর জন্মদিন আজ

‘সেই সময় পাব কি না জানি না’

আলাউদ্দীন মাজিদ

‘সেই সময় পাব কি না জানি না’

 কেউ বলতে পারবে না পৃথিবীতে আমার জীবন পরিপূর্ণ।  সে অর্থে আমারও কিছু অপূর্ণতা রয়েছে। মনে হয়, আরও ভালো করতে পারতাম। কিন্তু সেই সময় পাব কি না জানি না।’

 

‘আছেন আমার মোক্তার, আছেন আমার ব্যারিস্টার, শেষ বিচারের হাই কোর্টে যে তিনি আমায় করবেন পার’... গানে গানে এমন আকুতি এদেশের একজন বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীর। যার দরাজ কণ্ঠের জাদুতে বুঁদ হয়ে আছেন শ্রোতারা। তিনি হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। আজ তার ৮৪তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের ১ জুলাই তার জন্ম হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে। ‘শুভ জন্মদিন। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনার দীর্ঘজীবন কামনা করছি।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার পক্ষ থেকে অনন্তকালের এ কামনা আমাদের।

 

সংগীতজীবন

সৈয়দ আবদুল হাদীর বাবা গান গাইতেন এবং কলেরগানে গান শুনতে পছন্দ করতেন। বাবার শখের গ্রামোফোন রেকর্ডের গান শুনে কৈশোরে সংগীত অনুরাগী হয়ে ওঠেন আবদুল হাদীও। তখন থেকেই গাইতে গাইতে তিনি গান শিখেছেন। দেশাত্মবোধক গানের জন্য বিখ্যাত। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাইছেন। ১৯৬০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু। ১৯৬৪ সালে তিনি একক কণ্ঠে প্রথম বাংলা সিনেমায় গান করেন। নাম ‘ডাকবাবু’। বেতারে গাওয়া তার প্রথম জনপ্রিয় গান ‘কিছু বলো, এই নির্জন প্রহরের কণাগুলো হৃদয় মাধুরী দিয়ে ভরে তোলো’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত হয় এ শিল্পীর প্রথম রবীন্দ্র সংগীতের একক অ্যালবাম ‘যখন ভাঙলো মিলন মেলা’।

 

সম্মাননা

চলচ্চিত্রে গান গেয়ে সেরা গায়ক ক্যাটাগরিতে সৈয়দ আবদুল হাদী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক। এছাড়া বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান থেকে পেয়েছেন আরও অনেক সম্মাননা।

 

সলিল চৌধুরীর সঙ্গে গাইবার ইচ্ছা ছিল

সৈয়দ আবদুল হাদী তার সংগীতজীবনের অপূর্ণতা নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার একটি ইচ্ছা ছিল; কিন্তু সেটা পূরণ হওয়া এখন আর সম্ভব না। কারণ তিনি জীবনের ওপারে চলে গেছেন। তিনি হলেন সলিল চৌধুরী। তার সুরে আমার একটি গান করার খুব ইচ্ছা ছিল’।

 

শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম

এক সাক্ষাৎকারে এ দেশবরেণ্য শিল্পী বলেছিলেন, আমি হতে চেয়েছিলাম শিক্ষক, কিন্তু ভাগ্যের কালচক্রে হয়েছি গায়ক। ছোটবেলা থেকেই ছিলাম বাউন্ডুলে ধরনের, স্কুলের পর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাই ছিল আমার প্রধান কাজ। কলের গান শুনেই সংগীতের প্রতি জাগে অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই ধীরে ধীরে গানের জগতে প্রবেশ। গানের টানে শিক্ষক আর হওয়া হলো না আমার।’

 

সুরকার হলাম

আবদুল হাদী বলেন, কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি সুরকার হিসেবেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। রফিকউজ্জামানের লেখা ‘হাইওয়ে ধরে ছুটছে’ গানটি রেকর্ডিং করেছি। গানের সুর করেছি। এটা করার পর মনে হয়েছে, অনেক দিনের যে তৃষ্ণা তা মিটে গেল।

 

সেই সময় পাব কি না জানি না...

প্রখ্যাত এ কণ্ঠশিল্পী বলেন, ‘একজন শিল্পীর জীবনে কিছু না কিছু অপূর্ণতা থেকেই যায়। কেউ তা থেকে মুক্ত নয়। কেউ বলতে পারবে না পৃথিবীতে আমার জীবন পরিপূর্ণ। সে অর্থে আমারও কিছু অপূর্ণতা রয়েছে। মনে হয়, আরও ভালো করতে পারতাম। কিন্তু সেই সময় পাব কি না জানি না।’

সর্বশেষ খবর