বুধবার, ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রের সাফল্য ধরে রাখতে করণীয়

আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্রের সাফল্য ধরে রাখতে করণীয়

কমপক্ষে ২০২২ সাল থেকে ঈদের ছবি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাফল্য পাচ্ছে, সিনেমা হলের উন্নয়নে সরকার ঋণ দিচ্ছে, বিভিন্ন সিনেমা হল ভেঙে সিনেপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। ২০২২ সালে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। সরকার দেশে সীমিত আকারে ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছে। এফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। সরকারি অনুদানে চলচ্চিত্র নির্মাণে অর্থ ও সংখ্যা উভয়ই বাড়ানো হয়েছে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এতসব উদ্যোগের পর এখন যে ‘ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে চলচ্চিত্রের’ তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে বলছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, এ উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন চলচ্চিত্রকারদের ঐক্যবদ্ধতা এবং সম্মিলিত প্রয়াস।

এদিকে স্বস্তি মিলেছে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে। কারণ এবারের ঈদের ছবিও সাফল্য পেয়েছে। ২০০০ সালের প্রথম দিক থেকেই নানা প্রতিকূলতায় ছবির ব্যবসা একেবারেই তলানীতে এসে ঠেকেছে। চলচ্চিত্রকাররা এখন ভাবছেন এবারের ঈদের ছবির সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা কীভাবে ধরে রাখা যায়। এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘তুফান’ ছবিটি দেশে দর্শক মাতানোর পর বিদেশেও ভালো চলছে। ২০২২ সাল থেকে ঈদের ছবি এবং মাঝেমধ্যে কয়েকটি ছবি ব্যবসাসফল হওয়ায় সিনেমা হল মালিকরা চলচ্চিত্র ব্যবসা নিয়ে নতুন করে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য ঈদে দর্শকদের হলমুখী হওয়ার বিষয়টি ‘সিনেমা ঘুরে দাঁড়ানোর সবুজ সংকেত’ হিসেবে দেখছেন চলচ্চিত্রের মানুষ। তারা বলছেন, হলমুখী এই দর্শকদের এখন নিয়মিত হলে আনতে পরিচালক ও প্রযোজকদের ভাবতে হবে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে সিনেমার সুদিন ফিরবে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াৎ বলেন, ‘এই ঈদেও ছবি দেখার জন্য দর্শক হলে ফিরেছে- এটা চলচ্চিত্রকারদের জন্য দারুণ খবর। এ ধারাবাহিকতা কীভাবে রক্ষা করা যায়, এর জন্য সবাই মিলে এগোতে হবে। দেশের সিনেমা বাঁচাতে আমাদের শেষ লড়াইটা এবার করা প্রয়োজন। তাই এখন দর্শকদের জন্য সেরা গল্পের সেরা ছবি নির্মাণ করতে হবে।’ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, সিনেমা হলে সব শ্রেণির ও সপরিবারে দর্শক আবার ফিরেছে। কারণ তারা পছন্দের ছবি পেয়েছে। এখন পরিচালক ও প্রযোজকদের উচিত ভালো ছবি নির্মাণ অব্যাহত রাখা। আরেকবার প্রমাণ হলো, চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরানোর একমাত্র পথ হলো পর্যাপ্ত ও মানসম্মত দর্শক পছন্দের ছবি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মতিন রহমান বলেন, দর্শক এবার ঈদের সুনির্মিত ছবিগুলো দেখে আনন্দিত। এটা সুখবর। গল্প বাছাই ও গল্প বলার ধরন ভালো ছিল বলেই প্রেক্ষাগৃহে এসে ঈদে সিনেমা দেখছেন দর্শক। এ সুনির্মাণের ধারা বজায় রাখতে হবে। তাহলে সিনেমা হলে দর্শক ফেরার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে অশ্লীলতা, পাইরেসি, মানসম্মত ছবির অভাব ও নকল ছবির কারণে দর্শক সিনেমা হল বিমুখ হয়ে পড়ে। এতে ব্যবসায়িক লোকসান গুনতে গুনতে সিনেমা হল মালিকদের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন থেকেই সিনেমা হল বন্ধ করা শুরু হয়। নব্বই দশকের শেষ ভাগ পর্যন্ত দেশে থাকা প্রায় ১ হাজার ৪৫০ সিনেমা হল বন্ধের কবলে পড়ে। এখন আছে মাত্র অর্ধশতাধিকের মতো। সিনেমা হল মালিকদের একটিই দাবি ছিল, মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি চাই। না হলে সিনেমা হল বন্ধ রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এর জন্য হল মালিকরা বিদেশি ছবিও নিয়মিত আমদানির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। যা সরকার পূরণ করেছে।

২০২২ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করেছে সরকার। এতে তথ্য সচিবকে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। যুক্ত হয়েছেন নতুন সদস্যরাও। চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে মোট ১৩ জন সদস্য রাখা হয়েছে। কর্মকর্তা ছাড়াও এতে আছেন চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও সাংবাদিক। সেন্সর বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন আপাদমস্তক কয়েকজন চলচ্চিত্রের মানুষ। চিত্রনায়িকা রোজিনা বলেন, আমি চাইব আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্বমানের হোক। বর্তমানের চলচ্চিত্রের ধস এক দিনে হয়নি। সবাই মিলে চাইলে এই চলচ্চিত্রকে আবার মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সবার মিলিত চেষ্টায় চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

সর্বশেষ খবর