সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা
কী ঘটেছিল সেদিন ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র সেটে

উত্তম কুমারের মৃত্যুর জন্য কি মৌসুমী দায়ী?

আলাউদ্দীন মাজিদ

উত্তম কুমারের মৃত্যুর জন্য কি মৌসুমী দায়ী?

সত্যি কি মৌসুমীর কারণেই উত্তম কুমারের মৃত্যু হয়েছিল? কলকাতার প্রখ্যাত সাংবাদিক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক লেখায় উঠে আসে এ প্রশ্ন। তিনি লেখেন- বাঙালির চিরকালের ম্যাটিনি আইডল মহানায়ক উত্তম কুমার। তাঁর স্থান আজও সবার ওপরে। তিনি চার দশক আমাদের মধ্যে নেই, তবু তিনি সবসময়ই আমাদের সঙ্গে আছেন তাঁর কালজয়ী সব চলচ্চিত্র দিয়ে। উত্তম কুমারের অকাল প্রয়াণ আজও মেনে নিতে পারে না দর্শকরা। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কালো দিন। সেদিনই প্রয়াত হন বাংলা ছবির স্বপ্নের হিরো উত্তম কুমার। ১৯৮০ সালের ২৩ জুলাই সলিল দত্তের ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির সেটে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন উত্তম কুমার। পরের দিন সব শেষ। এ ছবিতে উত্তম কুমারের সহনায়িকা ছিলেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র শুটিংয়ের সময়ে এমনই একটি কথা রটেছিল, যাতে নাম উঠে আসে উত্তম কুমার আর মৌসুমীর। তার কদিন পরে মারাও যান উত্তম কুমার। তখন অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী মৌসুমীকেই দায়ী করেছিলেন উত্তম কুমারের মৃত্যুর জন্য। সুপ্রিয়ার মতে, মৌসুমীর দেওয়া আঘাত নাকি উত্তম সহ্য করতে পারেননি। তাতেই এমন অকাল মৃত্যু। কী ঘটেছিল সেদিন? যা মেনে নিতে পারেননি উত্তম কুমার। জানা যায়, অন্যদিনের মতোই সেদিন একসঙ্গে শুট ছিল উত্তম কুমার ও মৌসুমীর। উত্তম কুমারের নিজস্ব মেকআপ রুমটিতে সেদিন কোনো এক সমস্যা ছিল, যে জন্য তাঁকে অন্য একটি মেকআপ রুম ব্যবহার করতে বলা হয়। উত্তম কুমার যখন সেই অন্য মেকআপ রুমটিতে ঢুকতে যাবেন তখন তাঁকে বলা হয়, ‘দাদা এখন ঢোকা যাবে না। ভিতরে একজন বড় অভিনেত্রী মেকআপ করছেন। তিনি কাউকে মেকআপ রুমে ঢুকতে বারণ করেছেন। সেই অভিনেত্রী ছিলেন মৌসুমী। উত্তম কুমার সেদিন খানিকক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন, তাঁর সময় কি ফুরিয়ে আসছে, তাই এ অপমান। এ ঘটনার কদিন পরেই প্রয়াত হন উত্তম কুমার। মহানায়ক মারা গেলে সুপ্রিয়া দেবী শোকবিহ্বল কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘নিজের স্টুডিও পাড়ায় মেকআপ রুমে না ঢুকতে পারার অপমানটা মেনে নিতে পারেনি উত্তম, তাও এক জুনিয়র অভিনেত্রীর কাছ থেকে। এত স্পর্ধা। শেষ জীবনে এ প্রাপ্তি ছিল আপনাদের দাদার।’ এ ঘটনার কথা জানতে পেরে মৌসুমী তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। মৌসুমী বলেন, ‘আমার কাছে উত্তম কুমার শুধু নায়ক নন- তিনি আমার উত্তম কাকু। তিনি আমার শ্বশুরমশাই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বন্ধু। আমাকে ইন্দু বলে কত ভালোবাসতেন উত্তম কাকু। কেন আমি তাঁকে মেকআপ রুম থেকে তাড়িয়ে দেব? আমার কাছে খবর এসেই পৌঁছায়নি উত্তম কাকু সেদিন মেকআপ করতে আমার ঘরেই এসেছিলেন। তাঁকে চলে যেতে বলব এত স্পর্ধা বা সাহস আমার নেই। ২৪ জুলাই উত্তম কুমার আমাকে বলেছিলেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে দেখতে আসবেন পরশু দিন। কিন্তু সেই পরশু দিনটা আর এলো না। সেদিন রাতেই উত্তম কাকু মারা গেলেন।’ শোনা যায়, উত্তম কুমারের মৃত্যু হয়েছিল ভীষণ কাজের চাপ, সাংসারিক জীবনের চাপ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’র সেট থেকে তিনি সেই রাতে একটি পার্টিতেও গিয়েছিলেন। সেই রাতে তাঁর সঙ্গে সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন না বাড়িতে। তখনই অসুস্থতা বাড়ে। বেলভিউ নার্সিংহোমে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। মৌসুমীর আঘাত হয়তো গৌণ। কিন্তু স্টারডম ফুরিয়ে এলে বহু স্টারকেই অনেক কিছু সইতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়,  এ কথা সত্যি। কিন্তু সেদিনের মেকআপ রুমের ঘটনাকে সত্য ভেবে ভুল বুঝে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারেননি মহানায়ক উত্তম কুমার, আর তাই অভিমান আর শংকায় অকাল প্রয়াণের কাছে হার মানেন তিনি।

সর্বশেষ খবর