বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছয় মাসে ২৬ ছবির ভালোমন্দ

ছয় মাসে ২৬ ছবির ভালোমন্দ

রাজকুমার

ভালোমন্দ মিলিয়েই চলছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের দিনকাল। নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগ থেকে ২০২০-২০২১ সালের করোনাকাল পর্যন্ত দেশীয় চলচ্চিত্র পার করেছে এক মহাক্রান্তিকাল। ২০২২ সাল থেকে এ অবস্থার কোনোরকম উন্নতি সাধিত হতে শুরু করে। দর্শক আগ্রহে কিছুটা হলেও ফিরে আসে ঢালিউড। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মুক্তি পেয়েছে ২৬টি ছবি। এসব ছবির সার্বিক ভালোমন্দের চিত্র তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির তথ্য মতে, এ বছর বিগত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) মুক্তি পেয়েছে ২৬টি ছবি। এরমধ্যে প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ছবির সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। পরবর্তী তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) এ সংখ্যা ২১টি। এসব ছবির মধ্যে অধিকাংশই ভালো মন্দ মিলিয়ে ব্যবসা করেছে। তবে দুটি ছবি ‘রাজকুমার’ ও ‘তুফান’ সবচেয়ে ভালো ব্যবসা করেছে, দেশ বিদেশে দর্শক নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। অন্য ছবিগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটি গল্প বা গান অথবা শিল্পীদের অভিনয়ের কারণে সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছে। প্রথমেই শীর্ষ ব্যবসাসফল দুটি ছবি ‘রাজকুমার’ ও ‘তুফান’-এর চিত্র তুলে ধরা যাক

রাজকুমার : গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় শাকিব খান অভিনীত প্রণয়ধর্মী গল্পের ছবি ‘রাজকুমার’। এটি পরিচালনা করেন হিমেল আশরাফ। এতে শাকিবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মার্কিন অভিনেত্রী কোর্টনি কফি। ভার্সেটাইল মিডিয়ার ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেন আরশাদ আদনান। ছবিতে বালাম ও কোনালের গাওয়া ‘রাজকুমার’ গানটি বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। স্টার সিনেপ্লেক্সের সিনিয়র বিপনন কর্মকর্তা মেসবাহউদ্দীন আহমেদ জানান, ছবিটি ঈদে রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করেছে। এ ছবির প্রযোজনা সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে ‘রাজকুমার’-এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৮ কোটি টাকা। নানা সূত্রের খবর অনুযায়ী দেশ-বিদেশ মিলিয়ে মোট ২৬ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ‘রাজকুমার’।

তুফান

তুফান : শুধু বাংলাদেশ নয়, বিদেশের মাটিতেও দারুণ সাড়া জাগিয়ে চলছে ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ ছবিটি। ২০২১ সালের পর সবচেয়ে আলোড়ন তোলা ছবি এটি। এ ছবির মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গন অকেটাই প্রাণ ফিরে পেল। মাল্টিপ্লেক্সের পাশাপাশি সিঙ্গেল স্ক্রিনের হলগুলোতেও দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, এ ছবিকে ঘিরে বহু বছর পর সিনেমা হলগুলোতে আবারও টিকিট কালোবাজারিদের তৎপরতা দেখা গেছে। এ ছবির নির্মাতা রায়হান রাফীও ইতোমধ্যে তুফানকে ব্লকবাস্টার বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এতে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন নাবিলা ও ওপার বাংলার অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। এ ছবিতে গাওয়া কনার কণ্ঠে ‘দুষ্টু কোকিল’ ও প্রীতম হাসান-দেবশ্রী অন্তরার গাওয়া ‘লাগে উড়াধুরা’ গান দুটিও ছবিটির মতো ঝড় তুলেছে। তুফান ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মতে, ছবিটির নির্মাণ ব্যয় ১০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের দেওয়া আরও তথ্যমতে, মুক্তির প্রথম ১০ দিনে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে এ ছবি। ঢাকাই চলচ্চিত্রের জন্য স্বস্তির খবর হলো অনেকদিন পর মুক্তির প্রায় চার সপ্তাহ পরেও ছবিটির প্রদর্শনীর টিকিট অগ্রিম বিক্রয় হচ্ছে। চলচ্চিত্র গবেষক ও সাংবাদিক অনুপম হায়াতের মতে, সময়পোযোগী গল্প গান ও নির্মাণ পেলে যে একটি ছবি সহজেই দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ‘তুফান’ ছবিটি। তার কথায় এর আগেও বেশকিছু ছবি এ কারণেই দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রচণ্ড খরার মাঝে স্বস্তির বৃষ্টি এনেছে। তাই এ উদাহরণ মাথায় রেখেই নির্মাতারা যদি ছবি নির্মাণ করেন তাহলে আমাদের চলচ্চিত্র আবার সুদিন ফিরে পেতে বেশি দেরি হবে না।

আহারে জীবন

এবার দেখা যাক চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মুক্তি পাওয়া বাকি ২৪টি ছবির ভালোমন্দের চিত্র। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি থেকে পাওয়া তথ্যমতে এ ভালোমন্দের চিত্র তুলে ধরা হলো। জানুয়ারি মাসে মুক্তি পেয়েছে দুটি ছবি। এগুলো হলো- শেষ বাজি এবং কাগজের বউ। এগুলোর একটিও দর্শক নজর কাড়তে পারেনি। কারণ সব দিক দিয়ে ছবিগুলো ছিল দুর্বল। ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পায় তিনটি ছবি- ট্র্যাপ দ্য আনটোল্ড স্টোরি, ছায়াবৃক্ষ, পটু। এগুলোও নানা দুর্বলতার কারণে দর্শক নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়। রমজানের কারণে মার্চ মাসে কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। এপ্রিল মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুক্তি পায় রেকর্ড সংখ্যক ১১টি ছবি। চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে, প্রতিটি ছবিই ছিল কোনো না কোনো দিক দিয়ে সমৃদ্ধ। তার পরেও ঈদে দর্শক যেমন নির্মল বিনোদনের সুস্থ রসবোধের ছবি চায় এগুলোর প্রতিটিতে তা ছিল না। যেমন- সোনার চর, কাজলরেখা, দেয়ালের দেশ, মায়া দ্য লাভ, মেঘনা কন্যা, ওমর, আহারে জীবন, মায়া ছবিগুলোর গল্প, বক্তব্য, অভিনয় নির্মাণ এগুলো কোনো না কোনো দিক দিয়ে প্রশংসনীয় ছিল, তার পরেও ঈদের ছবি হিসেবে দর্শক এগুলোকে গণ্য না করায় ছবিগুলো ঈদে দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে।

লিপস্টিক

প্রদর্শকদের কথায়, এই ছবিগুলো ঈদের বদলে সাধারণ সময়ে মুক্তি দিলে ইতিবাচক ব্যবসায়িক সুফল পেত। যেমন- প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদের ‘আহারে জীবন’ ছবিটি ঈদে সুবিধা করতে না পারলেও ঈদের পরে ইউটিউবে মুক্তি পেয়ে সাড়া জাগায় এবং গল্প, নির্মাণ ও নায়ক ফেরদৌসের অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়াচ্ছে। ঈদে সাড়া জাগানো তিনটি ছবি হলো- রাজকুমার, জ্বীন টু ও লিপস্টিক। মে মাসে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো হলো- ডেডবডি, শ্যামা কাব্য, ফাতিমা, ময়নার শেষ কথা, সুস্বাগতম। এরমধ্যে শ্যামা কাব্য ও ফাতিমা বিকল্প ধারার ছবি হিসেবে দর্শক আগ্রহে ছিল। জুন মাসে অর্থাৎ ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে- তুফান, ময়ূরাক্ষী, আগন্তুক, ডার্ক ওয়ার্ল্ড এবং রিভেঞ্জ। মানে পাঁচটি ছবি। এর মধ্যে একমাত্র তুফানকেই দর্শক বিপুলভাবে গ্রহণ করেছে। অন্য ছবিগুলো দর্শকের কাছে উৎসবের ছবি মনে না হওয়ায় কোনো না কোনো দিয়ে উন্নত হওয়া সত্ত্বেও দর্শক সেগুলো গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রেও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির অভিমত হলো, ঈদে মুক্তি না দিয়ে সাধারণ সময়ে এসব ছবি মুক্তি দিলে হয়তো নির্মাতা ও সিনেমা হল মালিকরা ব্যবসায়িকভাবে সুফল পেত, দর্শকও আগ্রহ নিয়ে ছবিগুলো দেখত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর