হাতেখড়ি সাংবাদিকতায়, পরে হয়ে গেলেন জনপ্রিয় শোবিজ তারকা। দেশবিদেশের এমন কয়েকজন জনপ্রিয় তারকার কথা তুলে ধরা হলো-
অপর্ণা সেন
অপর্ণা সেন ১৯৬১ সালে ‘তিন কন্যা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে পদার্পণ করেন। এরপর ১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতে অভিনয় করে বাংলা সিনেমার জগতে নিজেকে প্রথম সারির নায়িকার স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর ১৯৮১ সাল থেকে অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘৩৬ চৌরঙ্গি লেন’। অভিনেত্রী ও নির্মাতা হিসেবে জাতীয়সহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৮৭ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টে সম্মানিত হন।
শুধু অভিনয় কিংবা ছবি পরিচালনাই নয়, তার বহুমুখী এ প্রতিভার বিকাশ ঘটে সংবাদপত্রজগতেও। ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি জনপ্রিয় পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘সানন্দা’র সম্পাদক ছিলেন। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপ থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক সানন্দা পত্রিকাটি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে সমান জনপ্রিয় ছিল। এ ছাড়া তিনি প্রায় এক বছর তথ্য ও বিনোদননির্ভর টিভি চ্যানেল ‘কলকাতা টিভি’র ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ব্রাড পিট
হলিউড অভিনেতা হিসেবে খুবই জনপ্রিয় একটি নাম ব্রাড পিট। তার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল তিনি একজন দক্ষ সাংবাদিক হবেন। সে স্বপ্ন পূরণে একসময় ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরিতে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনাও করেন। এরপর কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেন। পরে অবশ্য চলে আসেন অভিনয়ে।
ডেনজাল ওয়াশিংটন
হলিউডের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা ডেনজাল ওয়াশিংটন। যিনি কিনা দুবার অস্কার পুরস্কার জিতে নেন, তিনিও কিন্তু সাংবাদিকতার ছাত্র ছিলেন। সাংবাদিকতা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফরধাম ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রিও নিয়েছিলেন। তবে অল্প সময় সাংবাদিকতার পর চলে আসেন অভিনয়ে।
হেলি বেরি
‘এক্স ম্যান’ খ্যাত হলিউড অভিনেত্রী হেলি বেরিরও ইচ্ছা ছিল ব্রডকাস্ট জার্নলিস্ট হওয়ার। এ বিষয়ে তিনি আমেরিকার কিউয়াহোগা কমিউনিটি কলেজ থেকে ডিগ্রিও নেন। তারপর কিছুদিন সাংবাদিকতা করে শুরু করেন অভিনয়।
ওয়েল ফ্রিল
হলিউড অভিনেতা ওয়েল ফ্রিল ছিলেন স্পোর্টস জার্নালিস্ট। এ বিষয়ে তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ডিগ্রিও নেন। পরে একসময় এ পেশা ছেড়ে অবিনয়ে মনোনিবেশ করেন।
জর্জ ক্লুনি
হলিউড অভিনেতা জর্জ ক্লুনিও ছিলেন সাংবাদিক। তিনি আমেরিকার নর্দান কেন্টকি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্রডকাস্ট জার্নালিজমের ওপর উচ্চতর ডিগ্রিও নেন। পরে অভিনয়ে চলে আসেন।
আসাদুজ্জামান নূর
অভিনেতা, আবৃত্তিশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মন্ত্রী-অনেক পরিচয়ে মহিমান্বিত একটি নাম আসাদুজ্জামান নূর। তবে হয়তো অনেকেই জানেন না একজন সাংবাদিক হিসেবেই নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। ১৯৭২ সালে বহুলপ্রচারিত সাপ্তাহিক চিত্রালীতে সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। তিনি মূলত সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতেন।
মাহফুজ আহমেদ
জনপ্রিয় অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ। নাটক ও চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয় মুখ। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুুরস্কার। মজার ব্যাপার হলো, মাহফুজ আহমেদও তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনাকালে বিনোদন পাতায় লিখতেন। কাজ করেছেন তিনি সাপ্তাহিক ‘পূর্ণিমা’য়। সেখানে কাজের সুবাদে ইমদাদুল হক মিলনের সঙ্গে পরিচয়। তাঁরই পরামর্শে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘কোন কাননের ফুল’-এ ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করার মধ্য দিয়ে টিভিনাটকে নাম লেখান।
ফেরদৌস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন অভিনেতা ফেরদৌস। ‘আনন্দ আলো’ ম্যাগাজিনেও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। ফেরদৌস অভিনীত মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ১৯৯৭ সালে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের অসমাপ্ত কাজ ‘বুকের ভিতর আগুন’।
মৌসুমী
প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী মৌসুমী। তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। নিউজ পোর্টালটির নাম ‘ইয়েসনিউজবিডিডটকম’। নব্বই দশকে অভিনয় জীবনের শুরুতে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন পত্রিকা ‘প্রিয়জন’-এ সাংবাদিকতা করেন তিনি।
সঞ্জীব চৌধুরী
কথাপ্রধান গান আর গানে গানে মানুষের সুখদুঃখ ফেরি করে বেড়ানো এক শিল্পীর নাম সঞ্জীব চৌধুরী। ‘আমি তোমাকেই বলে দেব’, ‘ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও’, ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায়’সহ বহু জনপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়েছেন। প্রয়াত এ শিল্পী একজন খ্যাতনামা সাংবাদিকও ছিলেন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিন-এ কাজ করেছেন। আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সঙ্গে।
হাসান মাসুদ
নিউ নেশন, ডেইলি স্টার, বিবিসি-সব মিলিয়ে ১৫ বছরের অধিক সময় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অভিনেতা হাসান মাসুদ। ১৯৯২ সালে তিনি নিউ নেশন এবং পরে ডেইলি স্টারে ক্রীড়া প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ব্যাচেলর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রজগতে তাঁর পথচলা শুরু। পরে অনেক চলচ্চিত্র এবং টিভিনাটকে অভিনয় করেন। তাঁর প্রথম সংগীত অ্যালবাম ‘হৃদয়ঘটিত’ ২০০৬ সালে প্রকাশ পায়। বর্তমানে অভিনেতা হিসেবেই অধিক পরিচিত তিনি।
তাজিন আহমেদ
প্রয়াত অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। তাজিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর করে ভোরের কাগজে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। এরপর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। আনন্দ ভুবন ম্যাগাজিনের কলামিস্টও ছিলেন তিনি।
এলিটা করিম
গানের জগতের জনপ্রিয় মুখ এলিটা করিম। নিয়মিতই গান গেয়ে যাচ্ছেন তিনি। সংগীতশিল্পী ছাড়া তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’- এ দীর্ঘদিন ধরেই সাংবাদিকতা করছেন তিনি।
আরও যাঁরা সাংবাদিকতায়
হলিউড অভিনয়শিল্পী লিসা হাওয়ার্ড, ভারতের শশী কুমার, রবি বেলাগেয়ার এবং বাংলাদেশের সৈয়দ হাসান ইমাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৈনিক ইত্তেফাকসহ বাংলাদেশ বেতারে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মামুনুর রশীদ মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আলী যাকেরও মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসিতে যুদ্ধপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। নির্মাতা ও নাট্যকার অরুণ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ম্যাগাজিন আনন্দধারার। চ্যানেল আইতে এখন কাজ করছেন তিনি। মুশফিকুর রহমান গুলজার ১৯৮৭ সালে ‘বাংলার বাণী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে।
বিনোদন সাংবাদিকতা করতে গিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন।
অভিনেতা সুমন পাটোয়ারি গানের মানুষ হিসেবেও পরিচিত। তবে তিনি সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছেন অনেকদিন। দৈনিক প্রথম আলোতে সাংবাদিকতা করেছেন তিনি। অভিনেত্রী ফালগুনী হামিদ, শমী কায়সার, গায়ক বাপ্পা মজুমদারও সাংবাদিকতায় কাজ করেছেন।
