রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুনেত্রার মৃত্যুর অন্তরালের ঘটনা...

আলাউদ্দীন মাজিদ

সুনেত্রার মৃত্যুর অন্তরালের ঘটনা...

মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বিছানায় সুনেত্রা

মৃত্যুর ৫৪ দিন পর গত ১৫ জুন জানা গেল সুনেত্রা মারা গেছেন। আশি ও নব্বইর দশকে যে অভিনেত্রী ঢাকাই চলচ্চিত্র মাতিয়েছিলেন, দর্শক মন হরণ করেছিলেন, তিনি চিরতরে চলে গেলেন অথচ কেউই তা জানল না-এটি কীভাবে হয়। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল তাঁর জীবনের করুণ সব কাহিনি, যা চলচ্চিত্রের গল্পকেও হার মানায়। ঢাকার চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময়েই এক ব্যবসায়ী শামসুল হক মোহনকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের কিছু দিন পরে সংসারে জ্বলে ওঠে অশান্তির আগুন। মোহনের কবল থেকে রক্ষা পেতে নব্বই দশকের মাঝ সময়ে তিনি বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বিনা পাসপোর্টে পালিয়ে গিয়েছিলেন নিজ দেশ কলকাতায়। পালানোর সময় পাসপোর্ট না থাকায় ঝামেলায় পড়েন তিনি। তবে বিএসএফের অফিসারকে কনভিন্স করে কলকাতায় নিজের বাড়ি ফিরে আসেন। যে বাড়িটি তাঁর উপার্জনের পয়সা দিয়েই কিনেছিলেন। পারিশ্রমিকের টাকা কলকাতায় মায়ের কাছে পাঠাতেন। সেই টাকা দিয়ে মায়ের মাধ্যমে বাড়ি কিনেন। কলকাতা যাওয়ার পর এক বিএসএফ অফিসার সুরেশ কুমারের সঙ্গে তার মন দেওয়া-নেওয়া হয়। সুরেশ ছিলেন পাঞ্জাবি। সুনেত্রাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি। তবে সুনেত্রা তার দ্বিতীয় সংসারেও কোনো সন্তানের মুখ দেখেননি। সুরেশ কুমারের পরিবার পুত্রবধূ হিসেবে বাঙালি সুনেত্রাকে মন থেকে গ্রহণ করতে পারেননি। কিন্তু সুরেশ কুমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন। সুনেত্রার ভাই মোহর মন্ডল বোনের এ বিয়ে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে। কিন্তু স্বার্থ হাসিলের জন্য কখনো পিছপা হয়নি মোহর। ভাইয়ের ছেলে বাবাইকে সুনেত্রা সন্তানের মতো দেখতেন ও নিজের বাড়িতে রাখতেন। মোহর ও তার স্ত্রী জানতেন সুনেত্রা নিঃসন্তান বলে তার অর্থসম্পদের ভবিষ্যৎ মালিক হবে তাদের ছেলে বাবাই। সুনেত্রার অনুপস্থিতিতে মোহর ও তার স্ত্রী বাড়িতে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যেত। এ নিয়ে ভাইয়ের ওপর মহাবিরক্ত ছিলেন তিনি। একবার আলমারি খুলে সুনেত্রার স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় মোহর। তখন আর চুপ থাকতে পারেননি সুনেত্রা। তিনি তার মামার কাছে বিচার দেন। এটা নিয়ে পারিবারিক বৈঠক বসে সুনেত্রার মামার বাড়িতে। সেখানে সুনেত্রার গায়ে হাত তোলে মোহর। কপাল কেটে রক্ত ঝরে সুনেত্রার। বহুদিন তার কপালে কাটা দাগটি ছিল। কেউ জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দিতেন, বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম। এমনকি স্বামী সুরেশ কুমারকেও তা জানতে দেননি। এক সময় সুনেত্রার হার্নিয়া হয় কিন্তু হার্নিয়া অপারেশনের আগেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তার। সূত্র জানায়, তার কিডনি ও লিভার ড্যামেজ হয়ে গিয়েছিল। সূত্র জানায়, সুনেত্রার দ্বিতীয় স্বামী সুরেশ খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সুনেত্রার মৃত্যুর সময় সুরেশ তার পাশে ছিলেন। গত ২০ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় জীবন যন্ত্রণায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেত্রী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তাঁর মূল নাম রীনা সুনেত্রা কুমার। ডাকনাম ছিল মিঠু। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৭০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন সুনেত্রা। সুনেত্রাকে ঢাকাই সিনেমায় নিয়ে আসেন বাংলাদেশের পরিচালক মমতাজ আলী। বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায় এই পরিচালক নির্মিত সুনেত্রার প্রথম ঢাকাই ছবি ‘উসিলা’। এরপর সাফল্য ও জনপ্রিয়তার পথ ধরে তরতর করে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। কিন্তু ভুল মানুষের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ে তার জীবনে বিষাদ ডেকে আনে। সেই বিষাদেরই জেরে তছনছ হয় তার সোনালি জীবন। এক সময় পতিত হন অনাকাক্ষিত মৃত্যুকূপে।

সর্বশেষ খবর