রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বিভক্ত শিল্পীরা

বিভক্ত শিল্পীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন শোবিজ জগতের শিল্পীরা। একটি দল ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে, অন্য দল সরকারের পক্ষে। তাই শিল্পী সমাজের মধ্যে তৈরি হয়েছে মতের অমিল। রাজপথ কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দ্বিধাবিভক্ত শিল্পীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, আন্দোলন করতে দেখা গেছে গত কয়েক দিনে। এরই মধ্যে ছাত্রদের পাশে অবস্থান নিয়ে একদল রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় বৃষ্টির মধ্যেও কথা বলতে জড়ো হন। একই দিনে আরেক দল শিল্পী যান বিটিভি পরিদর্শনে। সেসব নিয়ে প্রতিবেদন লিখেছেন আলাউদ্দীন মাজিদ পান্থ আফজাল

 

ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি

ছাত্রদের ওপর চলা হত্যা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জোর অবস্থান নিয়েছেন শোবিজের বেশির ভাগ শিল্পী ও তারকা। ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাঁধন, মোশাররফ করিম, সিয়াম, মিথিলা, জাকিয়া বারী মম, সাবিলা নূর, নাজিয়া হক অর্ষা, কাজী নওশাবা আহমেদ, সজল, নায়লা আজাদ নূপুর, প্রিন্স মাহমুদ, মামুনূর রশীদ, জেমস, পার্থ বড়ুয়া, নীল হুরের জান, আরমিন মুসা, অমিতাভ রেজা, নূরুল আলম আতিক, আশফাক নিপুণ, আদনান আল রাজীব, সৈয়দ শাওকী, খিজির হায়াত খান, আসাদুজ্জামান আসাদ, বুবলী, পরী, শাকিব খান, সৈকত নাসির, শঙ্খ দাশগুপ্ত, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, রেদোয়ান রনি, শহিদুল আলম, ইরেশ জাকের, ওয়াহিদ তারেক, ঋতু সাত্তার, দীপক সুমন, রাকা নওশিন নওয়ার, নাদিয়া, শাহানা রহমান সুমি, তাহসান, সাফা কবির, জিয়াউর রহমান, সুমি (চিরকুট), রুকাইয়া চমক, জয়া আহসান, আরশ খান, আজাদ আবুল কালাম, হাসান, মাকসুদুল হক, মানাম আহমেদ, বাপ্পা মজুমদার, জন কবির, ন্যান্সি, এলিটা করিম, বিজরী বরকতুল্লাহ, ইপসিতা শ্রাবন্তী, দিলরুবা দোয়েল, দিলরুবা রুহি, জয় শাহরিয়ার, রুনা খান, প্রবর রিপন, লতিফুল ইসলাম শিবলী, তানভীর তারেক, জাহিদ আকবর, মনিরা মিঠু, সালমান মুক্তাদির, সাইফুল জার্নাল, মিজান, খৈয়াম শানু সন্ধি, থিয়েটার বাতিঘর, ব্যান্ড মাইলস, জলের গান, শিরোনামহীন, আর্টসেল, ব্ল্যাকসহ নানা অঙ্গনের শিল্পী সমাজ।

 

আজমেরী হক বাঁধন

সাধারণ জনগণের সঙ্গে যা হয়েছে এবং হচ্ছে সেটা কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি হতে পারে না। আমি এসব অন্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত চাই এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক।

 

মোশাররফ করিম

যে অবস্থা শুরু হয়েছে আমরা ঘরে বসে থাকার অবস্থায় নেই। আমরা শান্তি চাই, রক্ত দিতে চাই না।

 

সিয়াম আহমেদ

যখন দেশের মানুষ একটা ন্যায্য দাবি রাখে তখন বোঝা উচিত, এটা ফেলে দেওয়ার মতো না। যে ভাই-বোনেরা মারা গেলেন, এটা মেনে নেওয়ার মতো না।

 

নাজিয়া হক অর্ষা

এতগুলো মেধা এভাবে মৃত্যুর জায়গায় পৌঁছে যাওয়া, এত রক্ত, এত ক্ষত, এটা আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে পারি না।

 

জয়া আহসান

এত এত তাজা প্রাণের দাম তো অনেক। এত মৃত্যু এত কান্না আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতার রক্ত-ঘামের বাংলাদেশে বইবে কেমন করে। যে জীবন গেছে তা আর ফিরে আসবে না। যে ক্ষত আমাদের মনে সৃষ্টি হলো, তা অমোচনীয়। কেমন করে পথ চলব আমরা!

 

চঞ্চল চৌধুরী

তরুণ তাজা যে প্রাণগুলো অকালে ঝরে গেল, তার দায় কে নেবে? যে মায়ের বুক খালি হলো, তাঁর আর্তনাদ কি কোনো জনমে শেষ হবে? নোংরা রাজনীতির নামে এই রক্তপাত বন্ধ হোক।

 

সাবিলা নূর

কোটা আন্দোলনে যারা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছে, তাদের মুক্তি চাই এবং যারা এ আন্দোলনে হত্যার শিকার হয়েছে সেসব হত্যার বিচার চাই।

 

আবদুন নূর সজল

চাই না দেখতে আর রক্ত, সমাধান হোক দ্রুত।

 

প্রিন্স মাহমুদ

‘এক অস্থির জেনারেশন সূর্যোদয় দেখে না, সূর্যাস্ত দেখে না। এরা না বোঝে সিনিয়রিটি, না বোঝে জুনিয়রিটি।’ কিন্তু সত্যের জন্য নির্দ্বিধায় প্রাণ দিতে একবিন্দু দ্বিধা করে না।

 

নওশাবা আহমেদ

আয়নার মতোন সময় আগেও এসেছে পৃথিবীর ইতিহাসে! আবারও এলো। এমন সময়গুলোতে নিজেদের সত্তার শূন্যতাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় কিছু মানুষ, বন্ধু, শিক্ষক এবং কিছু শিশু!

 

পার্থ বড়ুয়া

আর কিন্তু চুপ থাকা উচিত হবে না মনে হচ্ছে।

 

আশফাক নিপুণ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহতদের জন্য বড় একটা স্যালুট। যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের ত্যাগের সঙ্গে আর কারও তুলনাই হয় না। আন্দোলনকারীরা নতুন করে আগামী দিনের পথ দেখাচ্ছেন।

 

রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস নয়

বিটিভি প্রাঙ্গণে ‘সব সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ স্লোগান নিয়ে উপস্থিত হন সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র নায়ক ফেরদৌস, সুজাতা, রিয়াজ, অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, শুভ্র দেব, গুলজার, এস এ অলিক, খোরশেদ খসরু, নুনা আফরোজসহ নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা

 

ফেরদৌস

ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল সেই কোটার পক্ষে আমরা সবাই ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদের ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলব কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল, সেগুলো আর কোনোদিন ফিরে পাব না। আজ বিটিভিতে এসেছি, আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সেই বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নিসন্ত্রাসী কারা? তাদের বিচার চাই। সব সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা।

 

শমী কায়সার

আগস্ট মাস একটি প্রতিবাদের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। টেলিভিশনে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মর্মাহত হয়েছি। এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার চাই। বাংলাদেশে এ রকম নৃশংসতা, এমন ধ্বংসযজ্ঞ, এত প্রাণহানি আমরা আর চাই না।

 

রোকেয়া প্রাচী

বাংলাদেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল সব সময় থাকে। এই গণতান্ত্রিক দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা সবাইকে তার অধিকারের কথা বলতে, দাবির কথা বলতে সুযোগ দিয়েছেন। ছাত্রদের আন্দোলনকে ঘিরে জঙ্গি হিসেবে, দুষ্কৃতকারী হিসেবে যারা সহিংসতার রাজনীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চাই।

 

শুভ্র দেব

বিটিভি ছিল বাংলাদেশের প্রখ্যাত সব শিল্পীর পদচারণামুখর একটি পবিত্র জায়গা। আমি বিশ্বাস করি, কোনো বাংলাদেশি এই বিটিভিতে আক্রমণ করতে পারে না, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচার হবে এটাই আমার কাম্য।

 

আাজিজুল হাকিম

বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি এ আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যেসব প্রাণ হারিয়েছি, তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।

 

সুজাতা

সন্ত্রাসীরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে এর বিচার হোক। আমরা শিল্পীরা যেন ঐক্যবদ্ধ হই এবং তাদের বিরুদ্ধে যেন রুখে দাঁড়াই। যখন দেশটা উন্নতির দিকে তখনই শত্রুরা আঘাত হানে, ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করে দেশ। আমরা শিল্পীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি, থাকব। দেশজুড়ে জ্বালাও, পোড়াও সন্ত্রাস আমরা চাই না, আমরা মানি না।

 

মামুনুর রশীদ

গণমাধ্যমকে মামুনুর রশীদ বলেন, আমি মনে করি সর্বস্তরে সংলাপে বসা উচিত। তরুণরা একরকম করে ভাবছে। আমরা একরকম ভাবনা ভাবছি। রাজনৈতিক নেতারা একরকম ভাবছেন। সরকার ভাবছে একরকম। সরকারের ভাবনার পরিবর্তন দরকার। সংকট দূর করার জন্য দ্রুত সরকারের উচিত সংলাপে বসা। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা দরকার। আমাদের রাজপথে দাঁড়ানো দরকার। আমাদেরও কিছু বলার আছে। শিল্পী হলেও আমি একজন মানুষ, এই দেশের নাগরিক, সেই তাড়না থেকে রাজপথে নেমেছি। আমি শুধু রাজপথে যাইনি, বাংলাদেশ টেলিভিশনেও গিয়েছিলাম। ওখানে যেভাবে ধ্বংস চালিয়েছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ছাত্র আন্দোলনে শুধু চাকরি নয় পুরো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন করলে আরও ভালো হতো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর