সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

দর্শক কেমন গল্পের চলচ্চিত্র চায়

দর্শক কেমন গল্পের চলচ্চিত্র চায়

প্রচলিত কথা ‘দর্শক রুচির পরিবর্তন ঘটেছে, তারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্মাণ আর গল্প চায়’। কিন্তু এ কথার সঙ্গে একেবারেই একমত হতে পারছেন না আমাদের  নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। তাদের কথায় দর্শক এখন কেমন গল্পের চলচ্চিত্র চায় তা তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

বাস্তবধর্মী গল্পের সিনেমা চায় : রায়হান রাফি

আমরা আসলে এতদিন যেসব চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি তা করতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। কারণ সেন্সর বোর্ডের সেকেলে নীতি এখনো আমাদের দেশে স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে। আমি জানি রাজনীতি বা ধর্মের এমন কিছু ছবিতে দেখানো উচিত নয় যা মানুষের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত হানে। অশ্লীলতাও কারও কাম্য হতে পারে না। তবে বাস্তবধর্মী পরিছন্ন ঘটনার গল্পের ছবি নির্মাণে কেন সেন্সর বোর্ড অযৌক্তিকভাবে কাঁচি চালাবে। তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রকৃত  প্রতিচ্ছবি আমরা কীভাবে চলচ্চিত্রে তুলে আনব। যেমন অপরাজনীতি অপসংস্কৃতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠার গল্পের ছবি। দর্শক যেহেতু বাস্তবধর্মী ও সমসাময়িক গল্পের ছবি দেখতে চায়, যে ছবিটি দেখে তারা ভাববে ‘আমরা তো মনে মনে এ গল্পটির কথাই ভেবেছিলাম’। সুতরাং আমরা সেরকম গল্পের ছবিই নির্মাণ করতে চাই। আর এক্ষেত্রে সেন্সর বোর্ডের নীতিমালাকে সময় উপযোগী করতেই হবে।

 

মৌলিক অধিকারের গল্প চায় : তপু খান

দর্শক আসলে এখন চলচ্চিত্রে তাদের চিন্তা-চেতনা ও মননের প্রতিফলন দেখতে চায়। তাদের মৌলিক অধিকারের কথা গল্পে চায়। এর মধ্যে প্রেম ভালোবাসা, রাজনীতি, প্রতিবাদ সবই থাকতে পারে। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, আমার নির্মিত ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমাটির গল্পের সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কাকতালীয়ভাবে হুবহু মিলে গেছে। আমি বলব, বর্তমান সময়ে রাজনীতি নিয়ে মানুষের মনে যে চাঁপা ক্ষোভ ছিল তার চিত্র এখন দর্শক সিনেমার পর্দায় দেখতে উন্মুুখ হয়ে আছে। যে ক্ষোভ এক সময় শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যদিও এমন সিনেমা নির্মাণে সেন্সর বোর্ডের নীতিমালার প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন অনেকেই, তাই দর্শক যেমন সিনেমা দেখতে চায় সেই পথ প্রশস্ত করে দিতে সময় উপযোগী সেন্সর গ্রেডেশন বোর্ড চাই।

 

বৈচিত্র্যময় গল্প দরকার : সৈকত নাসির

সাম্প্রতিক সময়ে যত দেশীয় সিনেমা হিট হয়েছে তার প্রায় সবই বিভিন্ন ধরনের গল্পে নির্মিত হয়েছিল। আসলে দর্শক গল্পে বৈচিত্র্য চায়। আর বৈচিত্র্যের সঙ্গে যোগ করতে হবে সুনির্মাণ। এতে সিনেমাতে প্রাণ আসবে আর এমন প্রাণময় সিনেমা দেখে দর্শকের প্রাণেও ছবিটি দেখার বাসনা জাগবে। এখনকার দর্শক শুধু ক্লাসিক্যাল বা কমার্শিয়াল সিনেমা দেখতে চায় না। তারা সব ধরনের গল্পের সিনেমাই দেখতে চায়। সমসাময়িক বৈচিত্র্যপূর্ণ গল্পের সিনেমা বানাতে গেলে সেন্সর বোর্ডের আধুনিক নীতিমালা প্রয়োজন। না হলে বাস্তবধর্মী গল্পের সিনেমা নির্মাণ করে যদি সেন্সর বোর্ডের খড়গের শিকার হতে হয় তাহলে আগের মতো এখনো ভয়ে নির্মাতারা ভালো মানের সিনেমা বানাতে চাইবে না। যেমন আমার ‘দেশা দ্য লিডার’ ও ‘সুলতানপুর’ সিনেমা দুটিতেই সেন্সর বোর্ডের সেকেলে নীতিমালার অযৌক্তিক কাঁচি চালানো হয়েছে বলে পরিপূর্ণভাবে সিনেমাগুলো দর্শক উপভোগ করতে পারেনি। তাই দর্শক পছন্দের ছবি নির্মাণে সমসাময়িক গল্প এবং সেন্সর বোর্ডে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়া দরকার।

 

দর্শক গল্পের সিনেমা চায় : হিমেল আশরাফ

আমি ব্যক্তিগতভাবে গল্পের সিনেমা বানাতে পছন্দ করি। কারণ দর্শক গল্পের সিনেমাই চায়। সুলতানা বিবিয়ানা, প্রিয়তমা কিংবা এ রাজকুমার, সবই গল্পনির্ভর সিনেমা। আমার প্রধান টার্গেট দর্শক মধ্যবিত্ত, যারাই আসলে আমাদের বড় অংশ, এর মধ্যে ফ্যামিলি দর্শক আমার প্রধান নিশানা। তবে আমি চেষ্টা করি সব ধরনের দর্শকের পছন্দের কিছু রাখতে। যেমন ধরেন রাজকুমারের ‘বরবাদ’ গান আর টাইটেল ট্র্যাক ‘আমি একাই রাজকুমার’ এর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। দুটি গান একেবারে আলাদা রুচির মানুষের জন্য তৈরি। এক গান যার কাছে ভালো লাগবে, অন্যটা তার কাছে ভালো লাগার কোনো কারণ নেই। আপনি যখন একটি গান নিয়ে ট্রল করছেন সেটা আবার অন্য কারও কাছে সবচেয়ে পছন্দের। এ দুই দর্শকই কিন্তু টাকা দিয়ে আমাদের সিনেমা দেখবে, তারা দুই পক্ষই আমার জন্য জরুরি।

সর্বশেষ খবর