শিরোনাম
বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

সিনেমা হলের বিকল্প ওটিটি?

নির্মাতা ও শিল্পীদের প্রশ্ন

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমা হলের বিকল্প ওটিটি?

দর্শকদের পাশাপাশি এখন নির্মাতা-শিল্পীদেরও প্রশ্ন, ‘সিনেমা হলের বিকল্প কি ওটিটি?’। তারা আবার এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। বাংলাদেশে সিনেমা আগের মতো এফডিসিকেন্দ্রিক নেই। সিনেমা হল ছাড়াও ওটিটি প্ল্যাটফরমের জন্য চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে। নন্দিত অভিনেত্রী জয়া আহসান ওটিটিকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘ওটিটি একটি দারুণ মাধ্যম। বিশেষ করে আগে দর্শক টানতে শুধু বড় তারকাদের নিয়ে কাজ হতো বেশি। ওটিটি প্রমাণ করে দিয়েছে, চরিত্রনির্ভর দুর্দান্ত অভিনয়শিল্পীদের দিয়েও দর্শককে আকৃষ্ট করা যায়। ওটিটির এ দিকটি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে।’ নির্মাতাদের দাবি ওটিটিতে কাজের স্বাধীনতা অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে একটু বেশি। এমন অবস্থা যতদিন থাকবে ততদিন এর উন্নতি হবে বলে মনে করেন তারা। ওটিটিসহ ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য তারা এখন বেশি সময় দিচ্ছেন। ফলে শিল্পীদের আয়ের নিশ্চয়তা অনেকাংশে বেড়েছে। অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ ডয়েচে ভেলেকে বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই যারা অভিনেতা-অভিনেত্রী তাদের অনেকেই অনেক দিন ধরে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। যাদের কথা আমরা প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম কিংবা অনেক দিন ধরে যাদের দেখিনি তাদের প্রত্যাবর্তনের খুব ভালো একটা সুযোগ হয়েছে ওটিটির সুবাদে। এটি অভিনয় জানা শিল্পীদের উপযোগী মাধ্যম। যারা অভিনয় জানেন, তারা এখন সুবিধা করতে পারছেন। তাছাড়া যেসব কন্টেন্ট নির্মাতা একটু অন্যভাবে ভাবেন, তারা এতদিন হয় সিনেমার বাজেট পাচ্ছিলেন না কিংবা নাটকে তাদের পোষায়নি। তারা এখন ওটিটিতে নিজেদের কাজ দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী এখন ওটিটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। সেই জায়গা থেকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে ওটিটি।’ নির্মাতা রায়হান রাফী বলছেন, সিনেমায় বেশি বাজেট থাকে। ফলে বড় পরিসরে গল্প বলা যায়। ওটিটিতে বাজেট থাকে মোটামুটি। তবে চরকির কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি আলাদা করে বাজেটের কোনো সীমাবদ্ধতা দেখেন না, তার কথায় ‘বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফরমগুলোর কন্টেন্টের বাজেট কিন্তু সিনেমা হলের চেয়েও বেশি হয়। আমাদের দেশীয় বাজারের আকার হিসাব করেই ওটিটির জন্য কত বড় স্কেলে কন্টেন্ট সাজাব সেটা নির্ধারণ করি। সেক্ষেত্রে বাজারের আকার যখন বাড়তে থাকবে তখন সিনেমা হলের জন্য যত পরিমাণ বিনিয়োগ হয়, ওটিটি কন্টেন্টের জন্য তার চেয়েও বেশি বাজেট থাকতে পারে। বিশ্বব্যাপী এটাই কিন্তু ট্রেন্ড।’  রেদওয়ান রনি নির্মাতা হিসেবে সফল হয়েছেন। টেলিভিশন চ্যানেলের গন্ডি পেরিয়ে সিনেমা হলের জন্য বানিয়েছেন ‘চোরাবালি’ ও ‘আইসক্রিম’। এখন ওটিটি প্ল্যাটফরমে কাজ করছেন। তার কথায়, ওটিটি প্ল্যাটফরম যেহেতু অনেক, কাজেই গুণমান নিশ্চিত করার তোড়জোড় থাকে। যার কন্টেন্ট ভালো তার সাফল্যের হারও বেশি। এখানে প্রতিযোগিতা চূড়ান্ত। কন্টেন্টের মানের ব্যাপারে আপোস করার সুযোগ নেই। কন্টেন্টের মান ভালো হলে দর্শক আটকে রাখা সহজ হয়।’ রায়হান রাফীও বলেন, ‘যেখানেই মুক্তি দেন না কেন, কনটেন্ট ভালো হতেই হবে। এর বিকল্প নেই। সিনেমা হলে দর্শককে এমন কিছু দেখাতে হয় যাতে তারা মুগ্ধ হয়ে অন্ধকার পরিবেশে পর্দায় তাকিয়ে থাকে। আর ওটিটির গল্পে চমক খুব জরুরি।

এর মাধ্যমে যত বেশি আটকে রাখা যায় মানুষকে। আমার কাছে দুটোই সমান পরিশ্রমের।’ ওটিটি প্ল্যাটফরম সিনেমা হলের ব্যবসায় ধস নামাবে বলে শঙ্কা করা হয়েছিল। তবে অভিনয়শিল্পী-নির্মাতারা ওটিটির পক্ষে।

তাসনিয়া ফারিণ বলেন, ‘একটি নতুন মাধ্যমের ফলে আমাদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। ওটিটিতে সাবস্ক্রিপশন করে কনটেন্ট দেখতে হয়। সেক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ বেড়েছে। এখন আমাদের কাজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এ প্ল্যাটফরম অবশ্যই আমাদের জন্য লাভজনক ও সুবিধাজনক।’ রায়হান রাফী  বলেন, ওটিটি থাকলে আমাদের সিনেমার জন্যই তা ভালো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যারা ‘পরাণ’ দেখেছেন, তারা কিন্তু অনেকদিন সিনেমা হলে যাননি।

ওটিটিতে আমার কাজ দেখে তারা হলমুখী হয়েছেন। ‘হাওয়া’র সাফল্যের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। যারা এখন সিনেমা হলে আসে তারা কিন্তু ওটিটি দেখে। তাই ওটিটি যত বিস্তৃত হবে, ততই সিনেমার দর্শক তৈরি হবে।’ একদিক দিয়ে সিনেমা হলের চেয়ে ওটিটিকে এগিয়ে রাখছেন নির্মাতা আশফাক নিপুণ। তিনি বলেন, একইসঙ্গে ১০০টির বেশি দেশে হইচই দেখা যায়। ফলে সেখানে বাংলা ভাষাভাষি ছাড়াও অন্য দর্শকরা সাব-টাইটেল দেখে আমাদের কন্টেন্ট উপভোগ করছেন। কিন্তু আমাদের সিনেমা দেশের বাইরে এখন যদিও উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য অনেক দেশে যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলো খুব সীমিতসংখ্যক সিনেমা হল পায়। আমাদের পাশের দেশেও বাংলা সিনেমা নেওয়া খুব কঠিন।’ এদিকে জয়া আহসান এও বলেন, বড় পর্দার আবেদন বরাবরই অন্যরকম। তার কথায়, ‘নানান প্রযুক্তি এলে আমাদের সেসব মেনে নিতে হয়।

তবে আমি অবশ্যই চাই, দর্শকরা যেন বড় পর্দার রস আস্বাদন করতে পারে।

আমার ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী’ মুক্তির পরও দেখেছি, সিনেমা হলে বসে সবাই একসঙ্গে হাততালি দিচ্ছে, কাঁদছে, হাসছে। এসব বড় পর্দার ক্ষেত্রেই সম্ভব। আমি চাই বড় পর্দায় আমার কাজ থাকুক। কিছু বিষয় বড় পর্দার জন্যই। ওটিটির আদল একটু ভিন্ন হয়। আমার কাছে দুটোই খুব প্রয়োজন। আমি বলব, দর্শক তার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী মাধ্যম বেছে নেবে।’

 

সর্বশেষ খবর