শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

আমার কাছে চিঠি এলো ওপারে যাবার

প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমার কাছে চিঠি এলো ওপারে যাবার

‘চিঠি এলো জেলখানাতে অনেক দিনের পর, হায়রে অনেক দিনের পর, এই দুনিয়া ছাড়তে হবে এসেছে খবর, হায়রে এসেছে খবর’। ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিতে সালমানের লিপে গাওয়া এ গানটি যে অল্প সময়ে সত্যি হয়ে যাবে তা কি কেউ ভুলেও কখনো কল্পনা করতে পেরেছিল। সালমান শাহকে বলা হতো ঢাকাই ছবির সাফল্যের বরপুত্র। তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। সালমানের অভিনয় স্টাইল, পর্দায় তাঁর সপ্রতিভ উপস্থিতি আর নায়কোচিত ইমেজ আজও অন্য তারকাদের কাছে অনুকরণীয়। ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান নির্মিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় তাঁর অভিষেক। শুরুতেই বিশাল সাফল্য দিয়ে সালমান প্রাণসঞ্চার করেন মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রে। তারপর শুধুই ইতিহাস। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬। শুধুই সাফল্যের পথে হেঁটে যাওয়া। প্রয়াণের মাত্র কদিন আগে কথা প্রসঙ্গে অকাল মৃত্যু নিয়ে সালমান শাহ বলেছিলেন, ‘শুধু আমার নয়, কারও ভাগ্যে যেন বিধাতা এমন মৃত্যু না লিখেন।’ বেঁচে থাকার জন্য যার আকুতি ছিল এমন, তিনি কী করে আত্ম অভিমানে নিজেকে সংহার করবেন। এমন প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।  সালমান ছিলেন অভিনয়ে, আছেন হৃদয়ে, থাকবেন এ ধরনীতে অনন্তকাল। সালমানের মৃত্যু নেই। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। শ্রদ্ধাভরে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

অপ্রতিদ্বন্দ্বী ফ্যাশন আইকন

মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি সিনেমার নায়ক সালমান শাহ। আর এ ২৭ সিনেমায় সালমান শাহ ফ্যাশন নিয়ে যা করে গেছেন, দীর্ঘ ২৪ বছরে ঢাকাই সিনেমার আর কোনো নায়ক তা করতে পারেননি। সালমান শাহর মৃত্যুর পর সিনেমার আর কোনো তারকা এখনো ভক্তদের ‘ফ্যাশন আইকন’ হয়ে উঠতে পারেননি। ১৯৯৩ সালে প্রথম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায়ই ফ্যাশনে ভিন্নতা দেখিয়েছিলেন সালমান। ওই সিনেমায় তিনি মাথায় ভিন্ন স্টাইলের ক্যাপ পরেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সিনেমায় সালমানের ফ্যাশনের তালিকায় ছিল মাথায় রং-বেরঙের টুপি, স্ট্রিচ জিন্স প্যান্টের হাঁটুতে রুমাল বাঁধা, ছোট চিপের ব্যাকব্রাশ করা চুলের ডিজাইন, চুল ঝুঁঁটি করা, কানে দুল, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা, টি-শার্টের সামনের দিকে ইন করে পেছনের দিকে একটু খুলে রাখা, বড় বকলেসওয়ালা বেল্ট পরা, ডান হাতে ঘড়ি পরা, কপাল ঢেকে রাখা ব্যান্ডেনা, গলায় আরবীয় রুমাল প্যাঁচানো, পুলিশি পোশাক ও টুপিতে রোদচশমা আর গোঁফ, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, চুলে ঠোঁটের কোণে সিগারেট রাখাসহ এমন অসংখ্য নিজস্ব স্টাইল তৈরি করেছিলেন সালমান। চুলের স্টাইলেও এনেছিলেন পরিবর্তন। সে সময় নতুন সিনেমা মুক্তির সঙ্গে সালমানের নিত্যনতুন স্টাইল দেখে পাড়া-মহল্লায় ফলো করার হিড়িক লেগে যেত। সালমানের মতো স্টাইলে চুল রাখত তাঁর ভক্তরা, পরত গোল ফ্রেমের চশমা, বিভিন্ন রঙের টুপি। এ ছাড়া কপাল ঢেকে রাখা ব্যান্ডেনা ও স্ট্রিচ জিন্স প্যান্টের হাঁটুতে রুমাল বাঁধা নব্বই দশকে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সালমানের জন্যই।

 

ভালোবাসার স্বাক্ষর

সালমানের ভক্তকুলের অভাব নেই। এখনো অনেক ভক্ত তাঁকে ভালোবেসে অনেক কিছু তৈরিও করেছেন। তাঁর নামে ধামরাইয়ের ফিল্ম ভ্যালিতে হয়েছে শুটিং ফ্লোর। গাজীপুর সিটিতে তাঁর নামে হয়েছে বাসস্ট্যান্ড; তৈরি হয়েছে ভাস্কর্য। সালমান শাহর সবচেয়ে সুপার হিট সিনেমা ‘স্বপ্নের ঠিকানা’। এ সিনেমাটির নামে তাঁর ভক্ত মো. রাশেদুল ইসলাম (রাশেদ খান) নির্মাণ করেছেন একটি রিসোর্ট। যেখানে তৈরি হয়েছে সালমানের একটি নান্দনিক ভাস্কর্য। গাজীপুরের উলুখোলায় বীরতুল উত্তরপাড়ায় সালমানের এ ভাস্কর্যটি স্থাপিত হয়।

 

২৩ তরুণীর আত্মহত্যা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা হার্টথ্রব নায়ক সালমানের অকাল মৃত্যুর খবর কেউই মেনে নিতে পারেনি। শোনা যায়, প্রায় ২৩ জনের মতো তরুণী আত্মহত্যা করে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে। নজরুল নামে তাঁর এক বন্ধু ছিল। সালমান মারা যাওয়ার পর সে শুধু পাগলের মতো এফডিসির সামনে ঘুরে বেরাত। ফারুক নামে আরেকজন বন্ধু ছিল তাঁর। সে-ও কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

 

হৃদয়বিদারক দৃশ্য

চলচ্চিত্রনির্মাতা সায়মন তারেক বলেন, ‘যখন আমরা ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে সিলেটে রওয়ানা দিই তখন রাস্তার দুই পাশে সালমানভক্তদের চিৎকার, আহাজারি, কান্না দেখেছি। অনেক ভক্ত সেদিন গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন, লাশ না দেখালে তারা রাস্তা থেকে উঠবেন না...

 

মজার ঘটনা

একবার একটি মেয়ে অনেকদূর থেকে কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছে সালমান শাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য। সে তাঁর ফ্ল্যাটের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। সালমান এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছে সে। তারপর মেয়েটিকে চলে যেতে বললেন। আর এতে রাগ হয়ে মেয়েটি তাঁর সামনেই ব্লেড দিয়ে তার একটি হাত কেটে ফেলল। সালমান যতক্ষণ এফডিসিতে থাকতেন গেটের বাইরে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষায় থাকত তাঁকে একবার দেখার জন্য।

 

সালমানের কর্মযজ্ঞ

সালমান শাহ অভিনীত ছবি

কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, স্নেহ, প্রেমযুদ্ধ, কন্যাদান, দেনমোহর, স্বপ্নের ঠিকানা, আঞ্জুমান, মহামিলন, আশা ভালোবাসা, বিচার হবে, এই ঘর এই সংসার, প্রিয়জন, তোমাকে চাই, স্বপ্নের পৃথিবী, সত্যের মৃত্যু নেই, জীবন সংসার, মায়ের অধিকার, চাওয়া থেকে পাওয়া, প্রেম পিয়াসী, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভেতর আগুন।

[মোট ছবি ২৭টি]।

বিজ্ঞাপন চিত্র

মিল্কভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা

ধারাবাহিক নাটক

পাথর সময়, ইতিকথা

একক নাটক

আকাশছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী

 

সালমানের যত নায়িকা

১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও শাবনূর ছিলেন সালমানের সর্বোচ্চ ১৪টি ছবির নায়িকা। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।

 

 

সর্বশেষ খবর