বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

নৈসর্গিক শোভায় হৃদয়ছোঁয়া ইত্যাদি

শোবিজ প্রতিবেদক

নৈসর্গিক শোভায় হৃদয়ছোঁয়া ইত্যাদি

আন্দোলনের এক মাসপূর্তির পর গত ৬ সেপ্টেম্বর মিডিয়ার খরায় যেন এক পশলা বৃষ্টির মতোই নতুন বাংলাদেশে প্রচারিত হয় ইত্যাদির নতুন একটি পর্ব। যা ধারণ করা হয় সীমান্তকন্যা শেরপুর জেলায়। আপন আলোয় উদ্ভাসিত এবং স্বমহিমায় ভাস্কর হয়ে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে দর্শক হৃদয়ে গেঁথে আছে প্রিয় অনুষ্ঠান হিসেবে ইত্যাদি। দর্শকরা এক এক অনুষ্ঠানে এক একটি জেলার সঙ্গে পরিচিত হন। ইত্যাদিতে থাকে না কোনো রাজনীতি বা দলীয় মতবাদ। তবে থাকে রাজনীতি ও সামাজিক অসংগতি নিয়ে সমালোচনা। তাই দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই হানিফ সংকেত এবং তার ইত্যাদি অত্যন্ত প্রিয়। লক্ষাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে এবারের ইত্যাদি ধারণ করা হয় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে। এতে শেরপুরের পরিচিতিসহ তুলে ধরা হয় বিভিন্ন পর্যটকের জন্য আকর্ষণীয় সব দর্শনীয় স্থান। যা পর্যটকদের শেরপুর ভ্রমণে আগ্রহী করে তুলবে। সহিদুল ইসলামের দুর্লভ কুপিবাতি সংগ্রহের ওপর করা প্রতিবেদনটি আমাদের ছেলেবেলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অর্ধ-শতাধিক স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি শিল্পীদের নিয়ে পরিবেশিত শেরপুরের পরিচিতিমূলক নৃত্যগীতের আয়োজন ছিল বর্ণাঢ্য। স্থানীয় শিল্পী তারা বয়াতি এবং পান্থ কানাইয়ের লোকসংগীতটিও ছিল উপভোগ্য।

এবারের প্রতিটি নাট্যাংশই ছিল দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ, অসৎ রাজনীতিবিদ, ছাগলাতংক, কোটি টাকার গরু, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে অবৈধ অর্থ রেখে তাদের দুর্নীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে রচিত।  প্রতিটি বিষয়ই ছিল সময়োপযোগী এবং আপন দ্যুতিতে দীপ্তিমান। ভালো লেগেছে চীনের প্রাচীর, চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন এবং চায়না টাওয়ারের ওপর করা তথ্যবহুল প্রতিবেদনটি। ব্রিটিশ আমল থেকে প্রশংসিত শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী তুলসীমালা চাল এবং হাজং সম্প্রদায়ের দরিদ্র কৃষি গবেষক সেন্টু হাজংয়ের উদ্ভাবিত সেন্টু ধানের প্রতিবেদনটি ভালো লেগেছে। অচিরেই হয়তো আমরা একটি নতুন জাতের ধান দেখতে পাব। এবারের দর্শকপর্বটি ছিল বেশ ব্যতিক্রমী। শেরপুর অঞ্চলকে নিয়ে করা প্রশ্নের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের চারজন দর্শক নির্বাচন করে তাদের মাধ্যমে শিল্পী অনিমেষ রায়ের হাজং ভাষায় গাওয়া একটি গানের অংশবিশেষ অনুবাদ করে যার যার ভাষায় পরিবেশন করা হয়। যা ছিল উপভোগ্য। যেহেতু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষ মিলেমিশে শেরপুরে গড়ে তুলেছে এক শান্তি-সম্প্রীতির জনপদ- তাই সবাই মিলে শেষে গাইলেন একটি দেশাত্মবোধক গান। দর্শকরাও তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন। অসাধারণ লেগেছে সেই দৃশ্য। গারো পাহাড়ের কোলঘেঁষে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা স্থানগুলোতে হাতির তান্ডব ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তিকে নিয়ে করা প্রতিবেদনটি ছিল অত্যন্ত মানবিক। হাতির আক্রমণে পিষ্ট হয়ে যাওয়া স্থানীয় দিনমজুর নুর ইসলামের পরিবারকে নিয়ে করা প্রতিবেদনটি ছিল অত্যন্ত হৃদয়ছোঁয়া। ইত্যাদির প্রচেষ্টায় এই পরিবারকে বনবিভাগ থেকে তিন লাখ টাকা এবং ইত্যাদির মাধ্যমে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। যা এই অসহায় পরিবারটিকে ঘুরে দাঁড়াতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। প্রায় প্রতিটি পর্বে ইত্যাদির এই অনুদানের বিষয়টি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সবশেষে বন্যার্তদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নতুন সরকারের কাছে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত,  গণতান্ত্রিক সুন্দর আগামীর বাংলাদেশের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আন্দোলনে ও বন্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে শেষ করা হয় ইত্যাদির শেরপুর পর্ব। সব মিলিয়ে এবারের ইত্যাদিও ছিল হৃদয়ছোঁয়া, অনবদ্য এবং সময়োপযোগী।

 

সর্বশেষ খবর