রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
এফডিসিতে এসেছিলেন অড্রে হেপবার্ন

কী কথা হয়েছিল ববিতা-শাবানা-ওয়াসিমের সঙ্গে

আলাউদ্দীন মাজিদ

কী কথা হয়েছিল ববিতা-শাবানা-ওয়াসিমের সঙ্গে

এফডিসিতে শাবানা, ববিতা ও ওয়াসিমের সঙ্গে প্রখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন ছবি : শফিকুল ইসলাম স্বপনের সৌজন্যে

‘পাশ্চাত্যে বসে আমরা জানি, ‘বাংলাদেশ বন্যা আর দুর্যোগের দেশ। কিন্তু আমার কাছে বাংলাদেশ মানে কবিতা আর সৌন্দর্যের দেশ।’ ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে ছয় দিনের সফরে বাংলাদেশে এসে এমনটি বলেছিলেন প্রখ্যাত হলিউড অভিনেত্রী ফেয়ার লেডি খ্যাত অড্রে হেপবার্ন। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের সে সময়ের প্রকাশিত সংবাদ এমন সাক্ষ্য দেয়। রোমান ছুটি কাটানো রাজকন্যা তথা আমৃত্যু ইউনিসেফের দূত অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন মন জয় করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশের। জাতিসংঘের হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। হেপবার্নের কাজের প্রতি সম্মান জানাতে নিউইয়র্কে ইউনিসেফের সদর দফতরে একটি প্রতিমূর্তি স্থাপন করেছে জাতিসংঘ। ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন অড্রে হেপবার্ন। ঢাকায় তিনি আসেন ১৯৮৯ সালের ১৮ অক্টোবর। এক সপ্তাহ থেকে চলে যান ২৪ অক্টোবর। বাংলাদেশে ইউনিসেফের বিভিন্ন কর্মকান্ড ঘুরে দেখেন তিনি। আজও সেই স্মৃতি আঁকড়ে আছেন চিত্রনায়িকা শাবানা এবং ববিতা। যারা তখন তার সঙ্গে সে সব কর্মসূচির অংশ হয়েছিলেন।

 পোলিও টিকা কর্মসূচিতে অড্রে হেপবার্ন ববিতা ও শাবানা

ইউনিসেফ ১৯৮১ সালে তাকে শুভেচ্ছাদূত নিয়োগ করে। হেপবার্নও ভালোবেসে এই সম্মান লুফে নেন। ওই কর্মকান্ডের অংশ হিসেবেই বন্যা-পরবর্তী ১৯৮৯ সালে ছয় দিনের এক সফরে বাংলাদেশে আসেন। এখানে তিনি পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে সময় কাটান। তারই এক ফাঁকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আসেন। সেখানে তাকে সাদর সম্ভাষণ জানান তৎকালীন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। হেপবার্নের আগমন বার্তায় এফডিসিতে সেদিন বসেছিল তারকাদের হাট। সর্বোচ্চ আতিথেয়তা দিয়েছিলেন মি. ইউসুফ। বাঙালির আতিথেয়তার সে ব্যাপারটি পরে হেপবার্নকে বেশ ছুঁইয়ে গিয়েছিল। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন আশির দশকের সর্বাধিক জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা। সবুজের জমিনে লাল পাড়ে শাড়ি ভ্যানিটি ব্যাগটিতেও জাতীয় পতাকার চেতনাকে ধারণ করেছিলেন। ওই সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন সর্বাধিক ব্যবসাসফল সিনেমার অভিনেতা ওয়াসিম। তাদের দুজনকে অড্রে হেপবার্নের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সৈয়দ ইউসুফ হোসেন। ওয়াসিম বা ববিতা দুজনেই ইংরেজিতে মাতৃভাষার মতোই অনর্গল কথা বলতে পারতেন, এমন একটি স্থিরচিত্র ওয়াসিমের প্রয়াণের পর প্রকাশিত হয়েছে। স্থিরচিত্রটি তুলেছেন খ্যাতিমান সিনেমাটোগ্রাফার ও স্থিরচিত্রগ্রাহক বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম স্বপন। তার তোলা আর্কাইভ ভেল্যুসমৃদ্ধ ছবিগুলোতে দেখা যায় আলাপের এক ফাঁকে হেপবার্ন বডিবিল্ডার হিরো ওয়াসিমে বুঁদ হয়ে আছেন। পাশেই ববিতা কিছু বলার অপেক্ষা করছেন। ছবিতে ববিতার পোশাক রুচি বেশ প্রশংসা পেয়েছিল। যে প্রশংসা শুরু থেকে এখনো পেয়ে থাকেন। ওয়াসিমের পোশাক অ্যাজইজুয়াল বা সহজ নায়কসুলভ। ওই সময় একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে, আর সেটি ছিল হেপবার্ন ওয়াসিমকে হলিউডে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ববিতা বলেন, অড্রে হেপবার্ন মূলত আমাদের ওয়াসিম ভাইয়ের পার্সোনালিটি ও তার শুদ্ধ ইংরেজি উচ্চারণে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আমাদের দুজন এবং অভিনেত্রী শাবানা আপার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতার সময়ও দিয়েছিলেন ব্যস্ত অড্রে হেপবার্ন। তার কথাবার্তা আমাদের মুগ্ধ করেছিল। তার সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পেরেছিলাম কিংবদন্তি হওয়া এত সহজ নয়। আমার চোখে তিনি শুধু একজন সেরা অভিনেত্রীই নন, একজন অত্যন্ত মানবিক ও যথার্থ জ্ঞানী মানুষও বটে। দেশে ফিরে অড্রে হেপবার্ন লস অ্যাঞ্জেলেসসহ একাধিক গণমাধ্যমকে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্ভাবনার কথা বলেছেন। যা আজ দৃশ্যমান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনাময় একটি দেশ। কারণ এ দেশের জনসংখ্যা রয়েছে। জনসংখ্যাকে যদি কর্মের হাতে পরিণত করে তা হলে দেশটিকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কবিতার মতোই সুন্দর এ দেশ পর্যটনশিল্প বিকাশে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ দেশের মানুষের আতিথেয়তা ও পোশাক রুচির প্রশংসা করতেও ভোলেননি হেপবার্ন। ববিতা-ওয়াসিমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দেশটি সম্পর্কে এমন অভিমত প্রকাশ করেন, জানান ববিতা। যেহেতু তার ছয় দিনের সফর ছিল সেটি। কয়েকটি অঞ্চলে গিয়ে সেই আলোচনাগুলো মিলিয়ে পরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সেই পজিটিভ বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথাই তুলে ধরেছেন।

সর্বশেষ খবর