তারকাদের বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অনেকের মতে, তারকাদের সংসার গড়া হয় ভাঙার জন্য। বিবাহবিচ্ছেদের বিষয় যেন এখন ছেলেখেলা! যে হারে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে, তাতে দেশের সাধারণ মানুষও তারকাদের নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন। তবে এমন অসংখ্য তারকা দম্পতি আছেন, যারা যুগের পর যুগ একই ছাদের নিচে বাস করছেন। এসব নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল
বিয়ে কারও পৌষ মাস, কারওবা সর্বনাশ-এ কথা সবারই জানা। বিয়ের আগে সব ঠিক। কিন্তু বেঠিক হয় তখনই, যখন বিয়ের পর দিন গড়াতে থাকে। আনন্দের এ বিষয়টিকে ঘিরে দুঃখের সাগরে ভাসতে কারও কারও সময়ও লাগে না। এ দুর্ঘটনা যদি তারকাদের হয় তবে তো কথাই নেই। চারদিকে রব ওঠে, এ কী হলো? কেউ বলে, ঠিক আছে। কেউ বলে, এমন কাজটি করতে পারল? এসব কারণে তারকাদের সংসারকে বালির বাঁধ বলে আখ্যায়িত করেন কেউ কেউ। প্রথমে প্রেম তারপর বিয়ে। এরপর ভাঙন। কারও সংসার অনেক বছর পর ভাঙে। কারোটা আবার বছরও গড়ায় না। অমুক তারকার বিয়ে আজ, তো কাল ওই তারকার ছাড়াছাড়ি! এসব নিয়ে ভক্ত-দর্শকের মাঝে কাদা ছোড়াছুড়ি তো চলেই। তাই কোনো তারকার বিয়ে হলে ভক্তরা প্রার্থনা করেন, যেন সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারেন। ভাঙনের বিষয়টা এখন এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, বিবাহবিচ্ছেদটা যেন অন্তত শান্তিতে হয় সেই প্রার্থনাই করেন তারা! এখন তো বিয়ের আসল কারণটাই কখনো ব্যাখ্যা করতে চান না তারকারা। প্রেম করেন লুকিয়ে আবার বিয়ে করেন কাউকে না জানিয়ে। আলাদাও থাকেন সবার অলক্ষ্যে। কিন্তু যখন এ ঢাকঢাক গুড়গুড় অবস্থা মিডিয়া জেনে যায়, তখন এই না সেই না করে এড়িয়ে যান। ওঠে গুজব। চলতে থাকে রেললাইনের মতো। কিন্তু প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবন আলাদা। যেকোনো ব্যক্তির সংসার ভেঙে যাওয়া বেদনাদায়ক। এমন অনেক উদাহরণ আছে যাদের সংসার ভাঙনে ভক্তরা হয়েছেন বেদনাহত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরী-রাজ, জয়া-ফয়সাল, মোনালিসা-ফাইয়াজ, এজাজ মুন্না-মম, অপি-উজ্জ্বল, অপূর্ব-প্রভা, হিল্লোল-তিন্নি, তারিন-সোহেল আরমান, বিজরী-ইমন, দেবাশীষ-তানিয়া, তাজিন-এজাজ মুন্না, ন্যান্সি-সৌরভ, শমী-রিঙ্গো, রিয়া-ইভান, অমিতাভ রেজা-জেনি, মিঠু বিশ্বাস-মৌসুমী নাগ, হুমায়ুন ফরীদি-সুবর্ণা মুস্তাফা, রোকেয়া প্রাচী-আসিফ নজরুল, তারানা হালিম-আহমেদ রুবেল, আফসানা মিমি-গাজী রাকায়েত, নকীব খান-সামিনা চৌধুরী, রবি চৌধুরী-ডলি সায়ন্তনী, ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি, আলমগীর-খোশনূর, হুমায়ূন আহমেদ-গুলতেকিন আহমেদ, জেমস-রথি, শাকিল খান-জনা, জহির রায়হান-সুমিতা দেবী, তাহসান-মিথিলা, পারভেজ সানজারি-মিলা, বাঁধন-সনেট, দেবাশীষ-তানিয়া, বাপ্পা-চাঁদনী, স্বাগতা-রাশেদ জামান, নিলয়-শখ, শিমুল-নাদিয়া, হৃদয় খান-সুজানা, স্পর্শিয়া-রাফসান, নোভা-রায়হান, জসিম-সুচরিতা, দিতি-সোহেল চৌধুরী, এজাজ মুন্না-তাজিন আহমেদ, অপূর্ব-অদিতি, শবনম ফারিয়া-অপু, শাকিব-অপু বিশ্বাস, শাকিব-বুবলী, তমা মির্জা-হিশাম চিশতি, মাহি-অপু, মাহি-রাকিব, পুতুল-নুরুল, পার্থ বড়ুয়া-শ্রাবন্তী, আরফিন রুমি-লামিয়া ইসলাম অনন্যা, সালমা-শিবলী প্রমুখ।
এক সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, সবার বিচ্ছেদের ঘটনাই প্রায় সমান। সন্দেহ, অবিশ্বাস আর পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার অভাবে মূলত সংসারে ভাঙন দেখা দেয়। বিয়ে করে সুখী ছিলেন না এসব তারকা দম্পতি। তাদের সম্পর্কের মধ্যে এসে পড়েছে উচ্চাকাক্সক্ষা, লোভ, হতাশা, অর্থ, পরকীয়া, মানসিক অশান্তি-সবকিছুই। ভাঙনের পর আবার অনেকে নতুন করে সংসার শুরু করেন। কারও সেই সংসার টেকে না। মনে রাখতে হবে, তারকা শিল্পীরা সব ক্ষেত্রে মানুষের আদর্শ নন। কারও গান, কারও অভিনয় কিংবা সিনেমা বানানোর দক্ষতা ভালো লাগতে পারে। তবে তারকাদের বিচ্ছেদের বিষয় নিয়ে অভিনেত্রী আফরোজা বানুর রয়েছে ভিন্ন মত। তিনি বলেন, ‘এটা কি শুধু তারকাদের ক্ষেত্রেই হয়? আমি আমার বন্ধু-বান্ধব বা আমার মেয়ের বন্ধু-বান্ধবদের দেখেছি, অনেকের বিচ্ছেদ ঘটে গেছে। ওরা তো মিডিয়ার না। সাধারণ মানুষ। এখন আধুনিক পৃথিবীতে সবাই স্বাধীন। আগে ছেলেরা ঘর থেকে বের হতো, এখন মেয়েরাও বের হয়। আগে মেয়েরা মার খেয়ে চুপ করে থাকত। এখন থাকছে না। সবাই তো চাকচিক্যের পেছনে ছুটছে। পশ্চিমা সমাজের মতো এখানেও পুঁজিবাদী চিন্তা-চেতনা প্রবেশ করেছে। প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সামাজিক, পারিবারিক গঠন ও সাংস্কৃতিক চেতনা।’ তবে এমন অসংখ্য তারকা দম্পতি আছেন, যারা যুগের পর যুগ একই ছাদের নিচে বাস করছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সৈয়দ হাসান ইমাম-লায়লা হাসান, শাবনাজ-নাঈম, তারিক আনাম খান-নিমা রহমান, মোশাররফ করিম-জুঁই করিম, মীর সাব্বির-ফারজানা চুমকী, শহীদুজ্জামান সেলিম-রোজী সিদ্দিকী, বিপাশা- তৌকীর, নাতাশা-শাহেদ, জাহিদ হাসান-মৌ, ওমর সানী-মৌসুমী, ফারুকী-তিশা প্রমুখ। এ প্রজন্মের তারকা দম্পতিদের সুখী থাকার একটি কৌশলও বাতলে দিলেন লায়লা হাসান। তাঁর মতে, ‘ধৈর্য আর সহনশীলতাই সংসার জীবনে সুখী থাকার আসল চাবিকাঠি। পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার ঝামেলাগুলো মিটিয়ে ফেলারও পরামর্শ দেন তিনি। নিজেদের মধ্যে যদি টুকটাক ঝামেলা হয়, তাহলে তা যেন নিজেরাই মিটিয়ে ফেলেন। আর বাদ দিতে বললেন অহংবোধ।’ অন্যদিকে রোজী সিদ্দিকী বলেন, ‘এখনো সংসার করছি। এত বছর এক ছাদের নিচে। এটা হলো একটা অলিখিত বোঝাপড়া। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়ায় সমস্যা হলে এই দীর্ঘ সময় ধরে কি একই ছাদের নিচে থাকতে পারতাম? সে আমাকে বোঝে, আমিও। রাগারাগি, মান-অভিমান থাকবেই, কিন্তু একজন অন্যজনকে বুঝতে হবে। ভালোবাসা শুধু কি মুখে প্রকাশ করলেই ল্যাঠা চুকে গেল? না, এটা হলো এক ধরনর কেমেস্ট্রি।’ এদিকে নাঈম-শাবনাজের সংসার তিন দশকের বেশি। নাঈম বলেন, ‘দীর্ঘ এই সংসারে আমি দিন শেষে সব সময়ই খুশি। এর কারণ- শাবনাজ। প্রথমেই বলব, সংসার ধরে রাখার জন্য সব সময় শাবনাজ চেষ্টা করে গেছে। এখানে দুকথা হবে, সেটা স্বাভাবিক; কিন্তু ভুল কোনো সিদ্ধান্ত কখনোই নিইনি।’ নাঈমের দর্শন হলো- একতরফা ভালোবেসে যাওয়া। এর পেছনে কোনো শর্ত থাকবে না। সেই ভালোবাসাই তাঁকে সুখী করেছে। একটি সংসারে সবার আগে বোঝাপড়া, প্রাইভেসি থাকা দরকার। ট্রল হওয়া শিল্পীদের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে দেয়। সবার মধ্যে সংসার নিয়ে পজিটিভ ভাবনা থাকাটাই জরুরি। মোশাররফ করিমের সহধর্মিণী রোবেনা করিম জুঁই বলেন, ‘ঝগড়াঝাঁটি, মান-অভিমান তো থাকবেই। তবে একটা ব্যাপার কি, আমাদের দুজনের মধ্যকার ঝগড়া বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আমরা দুজন দুজনকে বুঝি। ভুল হলে ‘সরি’ বলি তাড়াতাড়ি। যার দোষ সে দ্রুত স্বীকার করে নেয়।’ তৌকীর আহমেদ মনে করেন, ‘ভালোবাসা হলো নির্ভেজাল সম্পর্কের বন্ধন। ভালোবাসা আছে বলেই মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার প্রেরণা আছে। স্বপ্ন আছে। বিপাশা একজন ভালো মা। একজন ভালো স্ত্রী। তার মধ্যে কোনো অহংকার নেই। ঈর্ষা নেই। এমন সহধর্মিণী পাওয়া কিন্তু অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।’