একাধিকবার জাতীয়সহ নানা চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ছটকু আহমেদ সালমানের জীবদ্দশায় তাঁকে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’ ছবি দুটি। এবার তাঁর জীবনের একটি অংশ নিয়ে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন ‘স্বপ্নের রাজকুমার’ ছবিটি। কিন্তু তা কেন আর হচ্ছে না সে বিষয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ
গত মাসে সালমানের প্রয়াণ দিবসে ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রয়াত এ নায়ককে নিয়ে ‘স্বপ্নের রাজকুমার’ নামে একটি ছবি নির্মাণের-
সালমান শাহ ছিলেন দেশীয় চলচ্চিত্রের সত্যিকারের সুপার স্টার। তাঁর মৃত্যুর ২৮ বছর পরেও কারও মন থেকে এতটুকুও মুছে যায়নি সে। সালমান শাহ ছিলেন সত্যিই স্বপ্নের রাজকুমার। চলচ্চিত্রে সালমানকে জন্ম দিয়েছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। আর সেই সোহানই সালমানের অকাল মৃত্যুর পর সালমানের জীবনের ছায়া অবলম্বনে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন সিনেমেটিক গল্প- স্বপ্নের রাজকুমার। প্রায় ৪ বছর আগে আমাকে নিয়ে সোহান গিয়েছিলেন সালমানের স্ত্রী সামিরার বাসায়। সামিরা আমাদের বলেছিলেন, সালমানের সঙ্গে তাঁর প্রেম থেকে জীবনের শেষ দিনগুলোর কথা। কখনো সালমানের দুষ্টুমির কথা বলতে গিয়ে হেসেছেন, কখনো অভিমানের কথা বলতে গিয়ে ঝর ঝর করে কেঁদেছেন। আমরা স্তব্ধ হয়ে বসে অবাক বিস্ময়ে এক অনুপম প্রেম কাহিনি শুনেছি। তারপর সোহানকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্ক্রিপ্টের কাজ শেষ করেছি। অনেক যত্ন করে লিখেছি একটি অসাধারণ প্রেমের গল্প-স্বপ্নের রাজকুমার। খুবই দুঃখজনক যে, সোহান ছবিটি নির্মাণ শুরু করার আগেই প্রয়াত হন। এতে সুন্দর একটা রোমান্টিক গল্পের এভাবে অকাল মৃত্যু হোক এটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সবার সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করেছি সালমান ও সোহানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্বপ্নের রাজকুমারকে স্বপ্নের মতো করে সাজিয়ে দর্শকদের জন্য সিনেমার পর্দায় তুলে ধরব। নতুন নায়ক-নায়িকা বাছাই করে আমরা নতুন মুখ দিয়ে এ চলচ্চিত্রটি শুরু করব।
কিন্তু পরে আবার সেই ঘোষণা থেকে সরে এলেন কেন?
কারণ, হঠাৎ বজ্রাঘাতের মতো সালমান শাহর মা মিসেস নীলা চৌধুরী লন্ডন থেকে টেলিফোন করে সালমানকে নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মাণে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি জানান, এ প্রসঙ্গে তিনি অনেক আগেই উকিল নোটিস দিয়ে রেখেছেন। এ বাধার কী অন্তর্নিহিত কারণ তিনিই জানেন আমি জানি না। তবে আমি দেখেছি বিশ্বের অনেক বিখ্যাত মনীষীর জীবনী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং সেসব ছবি দেখে তার দর্শকরা অনুপ্রাণিত হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান, জনপ্রিয়, স্টাইলিশ, সফল এবং তারুণ্যের নায়ক ছিলেন সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এ অভিনেতার মৃত্যুর ২৮ বছর পরও দর্শক-ভক্তরা তাঁকে স্মরণ করে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অসম্ভব প্রতিভাবান ইমন কীভাবে তাঁর দারুণ মেধার গুণে, অভিনয়ের অনুপম দক্ষতায়, তাঁর নিজস্ব স্টাইলে ও মৌলিকতায় চলচ্চিত্রের সালমান শাহ হয়ে কোটি কোটি দর্শকমনে স্থান করে নিয়েছেন তা তুলে ধরার। কিন্তু নীলা চৌধুরীর আপত্তিতে আমি তা স্থগিত করলাম। এ উনাশি ছুঁইছুঁই বছরে কোনোরকম কন্ট্রাডিকশন কাজে আমি যেতে চাই না। আমাদের মহৎ উদ্দেশ্যকে সহযোগিতা না করে কেউ বাজে মানসিকতা দিয়ে বিচার করুক আমি চাই না। সুতরাং অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে আমি জানাচ্ছি যে, সালমানের স্মরণে নির্মিতব্য স্বপ্নের রাজকুমার ছবিটি আমি আর করছি না।
সালমানকে আসলে গত ২৮ বছর ধরে কারা বাঁচিয়ে রেখেছে?
চলচ্চিত্রনির্মাতারা যদি ইমনকে সালমান শাহ বানিয়ে ছবি তৈরি না করত তাহলে নায়ক সালমান শাহর জন্ম কি কখনো হতো। তাই চলচ্চিত্র নির্মাতারাই নায়ক সালমানের জন্মদাতা। তাঁকে নিয়ে আমাদের কাজের কারণেই ২৮ বছর আগে পরপারে চলে যাওয়ার পরেও এখনো কোটি কোটি মানুষের মন ও মননে বেঁচে আছেন সালমান এবং আজীবন থাকবেন।
সালমান শাহর ভক্তদের উদ্দেশে কী বলবেন?
ভক্তদের বলব, আমি নতুন একটি কাজের মাধ্যমে সালমান শাহকে চির অমর করে রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমরাও আমাকে ভুল বুঝে অযৌক্তিক সমালোচনা করে তা থামিয়ে দিলে। তাই সালমানকে নিয়ে আর কোনো কাজ আমি করব না। সালমান এখন সত্যিই আমার কাছে মৃত।