বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে ভালো-মন্দের সংঘাত আর সুপারহিরো ব্যাপারটা শুরুর দিকে বলিউড হলিউডের মতো ছিল না। ছিল না কোনো অ্যাকশন বা মারামারির দৃশ্য। কিন্তু বলিউডের হিন্দি ছবিগুলো যখন হলিউডের অ্যাকশন ছবির আদলে দ্বন্দ্ব-সংঘাত যুক্ত করে উপমহাদেশের বাণিজ্যিক ছবিতে বৈচিত্র্য আনে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকারেরাও তখন নিজেদের ছবিতে তা যুক্ত করার চিন্তা করতে থাকেন। আর এভাবেই সত্তর দশকে ঢাকাই চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রের যাত্রা শুরু হয়। অবশ্য এদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। সেই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্রটিই ছিল খলনায়কের। কারণ এ চলচ্চিত্রের নির্মাতা আবদুল জব্বার রচিত ‘ডাকাত’ গল্প অবলম্বনেই নির্মিত হয় ‘মুখ ও মুখোশ’। এতে গল্পের প্রয়োজনে মূল চরিত্র ডাকাত মানে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন ইনাম আহমেদ। সে হিসেবে এদেশের চলচ্চিত্রের প্রথম খলনায়ক হলেন ইনাম আহমেদ। এরপর সত্তর দশকের শুরুর দিক পর্যন্ত ঢাকায় নির্মিত হতে থাকে পারিবারিক ও রোমান্টিক গল্পের চলচ্চিত্র। ১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রংবাজ’ মুক্তি পায়। যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র। ‘রংবাজ’ ছবির মাধ্যমেই বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নায়ক বনাম খলনায়কের দ্বন্দ্ব-সংঘাত বা ভালো-মন্দের সংঘাত এবং ভালোর জয়- এ ধারাটি শুরু হয়। যার ফলে এরপর বাংলাদেশের ছবিতে ‘খলনায়ক’ হিসেবে আরেকটি শক্তিশালী পক্ষ পেয়ে যাই। যেখানে এখন পর্যন্ত অনেক দারুণ ও সফল খল চরিত্রের অভিনেতাদের আমরা পাচ্ছি। রংবাজ চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে জসিমের। সে হিসেবে জসিম হলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রথম ‘খলনায়ক’। শহুরে গডফাদার কিংবা গ্রামের ডাকু, সবদিকেই জসিম দারুণ খলনায়ক ছিলেন। জসিমের সময় আরেকজন অভিনেতা খল চরিত্রে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তিনি হলেন খলিল উল্লাহ খান খলিল। আশি ও নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে জাম্বুর কোনো বিকল্প ছিল না। কৃষ্ণবর্ণের বিশাল শরীরের টাক মাথার এক দুর্র্ধর্ষ ভিলেন ছিলেন জাম্বু। রুদ্রমূর্তির মতো চাহনি, ঠোঁটের কোণে নিষ্ঠুর পৈশাচিক হাসি, কর্কট কণ্ঠস্বরের অতি ভয়ংকর চরিত্রের এক অভিনেতা। খলনায়ক বিশেষ করে গ্রাম্য মোড়লের চরিত্রে এ টি এম শামসুজ্জামান ছিলেন অনবদ্য। ১৯৭৬ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমনি’ চলচ্চিত্রে গ্রাম্য মোড়ল চরিত্রে প্রথম তাঁর অভিনয় এবং এ ছবিতেই ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সুউচ্চ আসনে উপবিষ্ট হন তিনি। সুভাষ দত্তের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসা এবং খলনায়ক চরিত্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আরেকজন অভিনেতা হলেন আহমেদ শরীফ। কাজী হায়াতের ‘খোকনসোনা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসা নায়ক রাজীব পরবর্তীতে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রে শক্তিশালী একটি অবস্থান তৈরি করে নেন। রাজীবের অভিনয় দক্ষতার সঙ্গে ঝাঁজালো ভরাট কণ্ঠ, ভয়ানক চোখ খলনায়ক হিসেবে রাজীবকে করেছিল তখন সবার থেকে আলাদা। খলনায়ক হিসেবে রাজীব দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। ছবি দুটো ছিল কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’ ও ‘চাঁদাবাজ’। রাজীবের সঙ্গে পরবর্তীতে আরেক শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির রসায়নটাও ছিল চমৎকার। এমনও ছবি আছে শুধু রাজীব ও হুমায়ুন ফরীদির রসায়ন দেখতে সিনেমা হলে গিয়েছে দর্শক। ১৯৯১ সালে শহিদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’ ছবির মাধ্যমে খল চরিত্রে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে মঞ্চ-টেলিভিশনের দুর্দান্ত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির। যার জনপ্রিয়তার কাছে অনেক নায়কও ব্যর্থ হয়ে যান। হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের খলনায়কদের মধ্যে সেরা একজন ডায়নামিক অভিনেতা। এমনও ছবি আছে শুধু খলনায়ক ফরীদির অভিনয় দেখতে দর্শকরা সিনেমা হলে ছুটে যেতেন। বলা যায় খলনায়ক জসিমকে দিয়ে যে ধারার সূচনা হয় ফরীদিকে দিয়ে তার পূর্ণতা পেল বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র। দেশীয় চলচ্চিত্রের আরেক শক্তিমান খলনায়ক হলেন মিশা সওদাগর। চার দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তিনি। বর্তমান সময়ের খলনায়কের কথা এলে তাঁর নাম সবার আগে আসে। ১৯৮৬ সালে তাঁর শুরুটা হয়েছিল নায়ক হিসেবে ছটকু আহমেদের ‘চেতনা’ ছবি দিয়ে। কিন্তু নায়ক হিসেবে সাফল্য না পেলেও খলনায়ক হিসেবে তিনি বেশ সফল। ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় আরেক খলনায়ক হলেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। ১৯৯৩ সালে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘টাকার পাহাড়’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। এরপর আবিদ হাসান বাদল পরিচালিত হাবিলদার সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। চলচ্চিত্রে ডিপজলের আত্মপ্রকাশ ঘটে নায়ক হিসেবে। টাকার পাহাড় ও হাবিলদার, দুটি সিনেমায় নায়কের অভিনয় করেছেন তিনি। এরপর নেন দীর্ঘ বিরতি। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘তেজী’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ডিপজল। তারপর একাধারে দীর্ঘ সময় ধরে এ চরিত্রে জনপ্রিয়তার সঙ্গে অভিনয় করে যান তিনি। উল্লেখিত এসব খলনায়ক ছাড়াও আরও বেশ কজন দুর্দান্ত অভিনেতা খলনায়ক চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেন। যাদের মধ্যে ফতেহ লোহানী, কাজী খালেক, তুলিপ, জাভেদ রহিম, ফিরোজ ইফতেখার, লিটন আখতার, কায়েস, রাজু আহমেদ, মতিন, মঞ্জুর হোসেন, কেরামত মাওলা, সিরাজ হায়দার, সাদেক বাচ্চু, নাসির খান, জুবের আলম, দারাশিকো, রাজ, গোলাম মোস্তফা, মেহফুজ, মঞ্জুর রাহি, আদিল, বাবর, কাবিলা, ড্যানী সিডাক, ড্যানীরাজ, ডন অন্যতম।
শিরোনাম
- রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম নিয়ে রিভিউয়ের পরবর্তী শুনানি ১৮ মে
- শাহরুখের প্রাক্তন দীপিকা, সুহানা তাদের মেয়ে!
- তেলমাছড়ায় পানি সংকটে লোকালয়ে ছুটছে বন্যপ্রাণি
- ভারতে শিক্ষার্থীদের ২০৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও কোচিং সেন্টার
- শেরেবাংলা ফজলুল হক ছিলেন উপমহাদেশের বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ : তারেক রহমান
- ফাইনালে হেরে রিয়াল ছাড়ার প্রশ্নে যা বললেন আনচেলত্তি
- হৃৎপিন্ডের যত্ন নিয়ে কিছু কথা
- পাকিস্তান যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে : শেহবাজ
- মেহেরপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বোমা সদৃশ বস্তু উদ্ধার
- আমের আচার বানাতে যেসব ভুলগুলো এড়িয়ে চলা দরকার
- ডা. তাসনিম জারা ও জাহাঙ্গীর কবিরকে দেওয়া লিগ্যাল নোটিশ প্রত্যাহার
- যত্নে থাকুক ডায়াবেটিক ফুট
- খুশকি দূর করতে টকদই যেভাবে ব্যবহার করবেন
- মঙ্গলবার থেকে শুরু হজ ফ্লাইট
- আইন উপদেষ্টার বাসভবনে ‘ড্রোন’, নিরাপত্তা জোরদার
- কোপার ‘রাজা’ বার্সা
- ভাঙ্গায় সালিশ চলাকালে সংঘর্ষ, আহত ২০
- বিচারক বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার আহবান
- ১০ বছর ধরে রান্না না করে বাইরের খাবারেই ভরসা নারীর
- অবশেষে প্রথম শিরোপার সামনে হ্যারি কেইন!
যেভাবে খলনায়ক তাঁরা...
আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
সর্বশেষ খবর