বাদুড় নিয়ে আছে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার। বেশির ভাগ মানুষ বাদুড়কে ক্ষতিকর কিংবা ভীতিকর প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করেন। নাটক-সিনেমাতেও বাদুড়কে ভয়ংকর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এ কারণে বাদুড় দেখলে মেরে ফেলার একটা প্রবণতাও মানুষের মধ্যে দেখা যায়। গবেষকরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাদুড়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতির চেয়ে এর উপকারী দিকটাই বেশি।
১৭ এপ্রিল ছিল ‘আন্তর্জাতিক বাদুড়ের প্রশংসা দিবস’। বাদুড়কে ভালোবাসার, বাদুড় সম্পর্কে জানার জন্য একটি দিন। ইংরেজিতে দিনটিকে বলা হয়েছে ‘গ্লোবাল ব্যাট অ্যাপ্রিসিয়েশন ডে’। বাদুড় নিয়ে সচেতনতা তৈরি ও গবেষণার উদ্দেশ্যে দিনটির সূচনা করেছে আন্তর্জাতিক বাদুড় গবেষণা সংস্থা ব্যাট কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল।
গবেষকরা বলছেন, বাদুড় অন্য অনেক প্রাণির চেয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বেশি ভূমিকা রাখে। পোকামাকড় দমন, উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ায় বাদুড় সেরা। গবেষণামতে, তিন শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদের পরাগায়ন বাদুড়ের মাধ্যমে ঘটে। বাদুড়ের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ৭০ শতাংশ কীটপতঙ্গ খায়। গবেষণা বলছে, বাদুড় যেসব কীটপতঙ্গ শিকার করে, তার ৬০ ভাগ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। সাধারণ অবস্থায় একটি বাদুড় প্রতি রাতে তার দেহের ওজনের অর্ধেক পরিমাণ পোকামাকড় শিকার করে। আর গর্ভধারী বাদুড় তার দেহের ওজনের সমপরিমাণ পোকামাকড় শিকার করে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা দেখিয়েছেন, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে বাদুড় প্রতিবছর আনুমানিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ফসলের ক্ষতিসাধন রোধ করে।
একসময় আমাদের দেশজুড়ে তেঁতুলগাছ, বটগাছ কিংবা বড় আকারের কোনো গাছে যে বাদুড় দল বেঁধে ঝুলে থাকত, সেই বাদুড় আর আগের মতো দেখা যায় না। বাদুড়ের আবাস ধ্বংস, বাদুড়ের বিশ্রাম করার জায়গা নষ্ট করে ফেলা, বৃহদাকার গাছ কেটে ফেলা, খাদ্যের জন্য বাদুড় শিকার ইত্যাদি কারণে বাদুড়ের সংখ্যা দিন দিন কমেছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, পরাগায়নকারী পশুপাখি, কীটপতঙ্গ রক্ষা করা না গেলে ধ্বংস হয়ে যাবে মানবসভ্যতা।