শিরোনাম
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৯:২২

আহারে! মায়েরা কেন এমন হন?

কাজী ওয়াজেদ

আহারে! মায়েরা কেন এমন হন?

কাজী ওয়াজেদ

রাস্তার পাশে ফুটপাতে পেপার বিছিয়ে বসে থাকা নারীগুলোর অনেকের হাতেই তসবিহ। সবার মুখই বিবর্ণ! বিড়বিড় করে কি যেন পাঠ করছেন। মনে হলো দোয়া দরূদ পড়ছেন। চেহারার মলিনতা দেখে অনুমান করা যায় হয়তোবা না খাওয়ার কারণেই এমন লাগছে, অথবা প্রচণ্ড টেনশন! এই অনুমানটা নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে করা। কারণ আমার মাকেও দেখেছি এই সময়গুলোতে রোজা রাখতেন।

এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অভিভাবকদের এই দৃশ্যটা আজ দেখা। আহারে! মায়েরা কেন এমন হন? প্রিয় সন্তানকে পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে বসে পড়েছেন ফুটপাতে। দোয়া দরূদ পড়ছেন সন্তানের পরীক্ষা যেন ভাল হয়, রেজাল্ট যেন ভাল করে। যার পরীক্ষা তার কতটুকু টেনশন জানি না, তবে মা কিন্তু তাঁর সাধ্যমত চেষ্টা করছেন সন্তানকে সুশিক্ষিত করবেন, মানুষের মত মানুষ করবেন। নিজের শরীরের উপর কষ্ট দিয়ে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছেন, সংসারের কাজ ফেলে সন্তানের জন্য রাস্তার পাশে বসে তসবিহ জপছেন।

মা জাতের মানুষগুলো আসলেই অদ্ভুত টাইপের হন! আমার মাকেও দেখেছি আমাদের যেকোনো পরীক্ষার সময়, কোথাও ইন্টারভিউ এর সময়, রাস্তায় জার্নির সময় ছাড়াও আমাদের মঙ্গলার্থে বিভিন্ন উছিলায় নিজের শরীরে নানান সমস্যার মধ্যেও প্রায়শই রোজা রাখতেন।

আমার দাদীকেও দেখতাম একই কাজ করতেন। দুধে আলতা কালারের অসম্ভব সুন্দরী এই নারীর শীর্ণকায় শারীরিক গঠনের একমাত্র কারণই ছিল নাতি-নাতনি আর সন্তানদের জন্য বছরের বেশিরভাগ সময়ই রোজা রেখে আর নামাজ পড়ে কাটানো। এগুলো দেখে তখন বলতাম, আমি পড়াশোনা না করলে তুমি রোজা রাখলেই কি আমি পরীক্ষায় লিখতে পারবো? জবাবে বলতেন, “ও তোরা বুঝবি না।”

আসলেই তখন এসবের মর্মার্থ বুঝতাম না। তবে বাবা হয়ে এখন কিছুটা বোঝার সুযোগ এসেছে সেসবের। ৫ বছর আগে মেয়ের একটা ছোট্ট অপারেশন হবে জেনে মনে পড়লো মা আর প্রয়াত দাদীর কথা। ছোটবেলায় অবজ্ঞা আর অবহেলায় তুচ্ছ ভাবা সেই রোজা রাখার কাজটা এবার আর হেলাফেলা ভাবিনি। অপারেশনের দিন নিজে রোজা রেখে বুঝেছি প্রিয় সন্তানের জন্য নিজের শারীরিক কষ্ট কতটা আনন্দের, কতটা স্বস্তির!

কিন্তু কষ্টটা আজ ঠিক অন্য জায়গায়। মায়া লাগে রাস্তায় বসে তসবিহ জপা ওই মায়েদের জন্য। এত কষ্ট করার পরও আমাদের মাঝে কিছু কুলাঙ্গার এই মায়েদের কষ্ট দেই, তাঁদের যাবতীয় ত্যাগকেই তুচ্ছ ভাবি। ন্যূনতম দায়িত্বটাও পালন করি না।

করুণা তাদের প্রতি, সুযোগ থাকার পরও যারা এই মায়ের যত্ন নেয় না, ধিক্কার তাদের প্রতি, ফুটপাতে বসে সন্তানের জন্য আজ না খেয়ে তসবিহ জপা এই মাকে যারা কোনোদিন অবহেলা করবে।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সূত্রাপুর থানা, ডিএমপি।

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর