১৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৬:৪৩

দেরি হোক, যায়নি সময়!

রচনা হাওলাদার

দেরি হোক, যায়নি সময়!

বিপদ দেখলেই শামুক যেমন তার খোলসে ঢুকে যায়, আজকাল আমরাও ঠিক তেমনই যে যার নিজস্ব খোলসে ঢুকে দিন যাপন করছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছি। অবশ্য সামাজিক দূরত্ব তৈরী হয়েছে অনেক অনেক আগেই। বলা ভালো, আমরা এখন একে অন্যের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছি যেন অকালে প্রাণ না যায় সেই আশায়। তবে দূরত্বটা সামাজিক বা শারীরিক যাই বলি না কেন, সবাই যে তা পুরোপুরি মানছে, তাও ঠিক না। কারণ, যে কারণে মানুষে মানুষে দূরত্ব রেখে চলার কথা বলা হচ্ছে তাও খুবই আনকোরা একটা বিষয় আমাদের কাছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত নিজে আক্রান্ত না হচ্ছি, এর মর্ম আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।

কভিড-১৯ এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ইতোমধ্যে আমরা সবাই কমবেশি জানি বা জেনে গেছি। তারপরেও ইংল্যান্ড, আমেরিকা, স্পেন, ফ্রান্স কিংবা ইতালির মতো উন্নত দেশগুলো যেখানে ক্রমাগত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে, সেখানে আমরা বলা চলে এক রকম হেলাফেলাতেই দিন কাটাচ্ছি।

যে চীন থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি, সে চীন এখন অনেকটা স্বাভাবিকের পথে, অথচ আমাদের দেশে এখন প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা; সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এর কারণটাও আমরা জানি। আমজনতার কিছু অংশ এখনো ইচ্ছামতো বাইরে ঘোরাফেরা করছেন, কেউ কেউ এখনো প্রতিদিন বাজারে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন, লকডাউন কতটা কার্যকর কিংবা রাস্তায় সেনাবাহিনী নামলো কি না তা দেখার জন্য কেউ কেউ বড় রাস্তায় একটু উঁকিঝুঁকি দিয়ে আসছে অথবা কোনো বাড়ি লকডাউন হলে তার আশেপাশে একঝাঁক কৌতূহলি লোক অকারণেই ঘোরাফেরা করছে। এহেন উদাহরণ ভুরিভুরি।

অথচ এদেরই কেউ অসুস্থাবস্থায় হাাসপাতালে ভর্তি হয়ে মারা গেলে তার আত্নীয়-স্বজনেরা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে হাজারটা অভিযোগ তুলতে এক মুহূর্ত দেরি করে না। তারা ভেবেই দেখে না সরকারের হাজারো নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাইরে গিয়ে করোনাকে দাওয়াত দিয়ে নিজের শরীরে বয়ে নিয়ে আসার কাজটা সে নিজ দায়িত্বেই করেছিল। এ দায় আর কারো নয়। যে রোগের কোনো ওষুধ তৈরী হয়নি, যার ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার জন্য আমাদের প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে, তার সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আগে নিজের ভিতরের কলকব্জা সম্বন্ধে একটু ওয়াকিবহাল হয়ে যাওয়াটা প্রথম কর্তব্য ছিল।

সব স্থানেই এ ভাইরাস ছড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। সরকার তার সাধ্যমত বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চালাচ্ছে এ রোগ দমন করার। কিন্তু এ দেশের জনগণ নিজ দায়িত্বে এ রোগ ছড়াচ্ছে যেন ডাবল ডিজিট মৃত্যু দেখেও ঠিক পোষাচ্ছে না, উন্নত বিশ্বকে টপকে যাওয়ার জন্যে আমাদেরও মৃত্যুর মিছিল চাই।

৫, ১০ ও ১৫ করে মৃত্যু বেড়ে চলেছে প্রতিদিন। এ কি কেবলই সংখ্যা? এখনো কি আমাদের সময় আসেনি সচেতন হওয়ার? এখনো কি আমরা ঘরে বসতে পারি না? এখনো কি আমরা কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন শব্দগুলোর মানে অনুধাবণ করতে পারি না? সংক্রমণ প্রতিরোধে স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয়েছে, সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, সংক্রমিত এলাকাগুলোকে নজরদারিতে রেখে লকডাউনে রাখা হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও কিছু মানুষ সব বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে বাইরে চলাফেরায় মত্ত রয়েছে। এ যেন এক কথায় ‘হারিকিরি’কেই বেছে নেওয়া।

নিজেদের সামান্য অসাবধানতাবশত যারা প্রাণ হারাচ্ছেন, তাদের নিদারুণ কষ্টের শেষ দিনগুলোর কথা আমরা দেখি/শুনি বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে। মৃত্যুর পরে একটি সাধারণ জানাজাও কাউকে দেওয়া যায় না। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মৃত মানুষটির গায়ে ভালোবাসার শেষ পরশ বুলিয়ে দেয় না আর কেউ। নিশ্চয়ই এমন মৃত্যু আমাদের কাম্য নয়।

তবে আজ, এই মূহূর্ত থেকেই কি আমরা সাবধান হতে পারি না নিজেদেরকে এই অদৃশ্য ভয়াল শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে? আসুন, মানবজাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে আজ আরেকটু বেশি মানবিক হই আমরা। ঘরে থাকি, অকারণে বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকি, নিজের খাবারের সাথে ক্ষুধার্থ মানুষের কথা ভাবি। নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচতে সহায়তা করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে একটি রোগমুক্ত সুন্দর পৃথিবী তুলে দেওয়ার জন্য আমরা সম্মিলিতভাবে বলি!

লেখক: সাংবাদিক

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর