১৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৮:১৫

মানুষকে মিথ্যে আশ্বাস দিতে নেই

ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন

মানুষকে মিথ্যে আশ্বাস দিতে নেই

তখন ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজে এপিডেমিওলজিতে মাস্টার্স পড়ি। সমগ্র ভারতে মাস্টার্স ইন এপিডেমিওলজির প্রথম কোর্সের প্রথম ব্যাচ। ছাত্র মাত্র দুইজন, আমি আর ভেলোরের স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক ডা. প্রভু দেবদাসা। আমাদের মূল শিক্ষক ছিলেন অধ্যাপক জে পি মূলিয়িল।

আমাদের তেমন স্ট্রাকচার্ড ক্লাস নাই, স্যারের যখন ইচ্ছে, ক্লাস নিতেন। আর প্রতিদিন সকালে রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে একসাথে বসে চা পান করতাম। আমি চা পান করি না, তবু আড্ডার লোভে চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ 'র' চা নিতাম, অনেকটা গরম শরবতের মত স্বাদ। এই চায়ের দোকানে বসে স্যারের কাছ থেকে এপিডেমিওলজি থেকে শুরু করে জীবনের অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপারে শিখেছি। সেই সাথে ছিল কাজ করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। ডিপার্টমেন্টের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সব কাজের সাথেই আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম। ফলে কাজ শিখেছি যেমন, নিজের প্রতি একটা আত্মবিশ্বাসও জন্মেছিল।

জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে স্যার সবসময় একটা উপদেশ দিতেন। বলতেন, ‘হাসনাৎ, নেভার গিভ ফলস হোপ টু ইওর পিপল’ (মানুষকে কখনো মিথ্যে আশা দেবে না)। স্যারের এই কথাটা একেবারে মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পেশাগত জীবনে কাজ করতে গিয়ে এটার গুরুত্ব ব্যাপকভাবে অনুধাবন করেছি। জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সব সময় উপকারভোগী জনগণকে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে, এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে কিংবা অন্ধকারে রেখে এগোলে জনগণের ভীষণ ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর বাংলাদেশের মানুষের সাথে লুকোচুরি খেলেছে। আমার অনুমান, তারা শীর্ষ নীতি নির্ধারকদেরও অসত্য তথ্য এবং ধারণা দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। করোনা মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি আছে জানিয়ে তারা জাতির সাথেও এক ধরণের প্রতারণা করেছে। এখন সবাই বাস্তবতাটা জানতে পারছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের আসলে তেমন কোন প্রস্তুতিই ছিল না। তারা জাতিকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে পুরো দেশের চরম সর্বনাশ করেছে।

ভিয়েতনাম, তাইওয়ান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার মত দেশে যেখানে নভেল করোনাভাইরাসের ‘ভাত পাবার কথা না’, সেখানে কতিপয় মানুষের ব্যর্থতার জন্য আজ সেসব দেশের অচল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা!

অনুজদের প্রতি তাই আমার পরামর্শ, জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার সময় কখনো মিথ্যে আশ্বাস দেবেন না, এতে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর