২৫ এপ্রিল, ২০২০ ১০:৫৩

জীবন যুদ্ধে জয়ী হোক সুনামগঞ্জের হাওরবাসী

পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ

জীবন যুদ্ধে জয়ী হোক
সুনামগঞ্জের হাওরবাসী

জীবন যুদ্ধে জয়ী হোক সুনামগঞ্জের হাওরবাসী। আগাম বন্যার আশঙ্কায় দ্রুত ধান কাটা চলছে। দম ফেলার সুযোগ নেই। সুনামগঞ্জের হাওরবাসীর। পুরো বছরের স্বপ্নের ফসল বোরো ধান। আছে বন্যার শঙ্কা। বাংলাদেশ এবং ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস ভাল নয়। শঙ্কিত কৃষকেরা।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও বরাক অববাহিকায় মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বললেন, এই বৃষ্টিপাত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। যে কারণে সিলেট, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলার নদীসমূহের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৪-৬ মিটার বৃদ্ধি পাবে। এটি নিশ্চয় আমাদের জন্য বিপদের। আশঙ্কার। নিকট অতীতেও সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢল আর সুরমার পাড় তলিয়ে ফসলহানি ঘটেছে।

এবার ফসল রক্ষার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণে সুনামগঞ্জে ব্যয় করা হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। পিআইসির মাধ্যমে এসব বাঁধের কাজ করানো হয়েছে। বাঁধের বরাদ্দের পরিমাণ অনেক। সরকার প্রচুর টাকা দিয়েছে। বাঁধের কাজে জড়িত পিআইসিগুলো নিয়মিত বাঁধ মনিটরিং করতে হবে। এত বিশাল অঙ্কের টাকার বাঁধ যেন পানির প্রথম স্পর্শেই তলিয়ে না যায়। ফাটল দিয়ে পানি প্রবেশ না করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পিআইসির সাথে সক্রিয় থাকুন। এই ধান হাওরবাসীর প্রাণ।

২০১৭ সালে ফসলহানীর পর মহামান্য রাস্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানুষের কষ্টে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে ব্যাপক খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। জেলায় এবার বোরো ফসলের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। আমার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ সদরে ৯৪ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন এবং বিশ্বম্বরপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৬১ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন। যদিও বিশ্বম্বরপুর উপজেলার অনেক মানুষের জমি তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে। বন্যার আশঙ্কা থাকায় মানুষ দিন রাত পরিশ্রম করছেন হাওরে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ফসল নিরাপদ করার বিষয়ে আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে। ধান কাটা, মাড়াইয়ের জন্য জেলায় নুতন ৪০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন দেয়া হয়েছে। নুতন ৪০টিসহ জেলায় ১১৪ টি হার্ভেস্টার মেশিন এবং ১১৭ টি রিপার মেশিন ধান কাটায় ব্যাবহার করা হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসেন। ধানকাটা শ্রমিকের জন্য টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় তিনি যোগাযোগ করেন। লকডাউনের মধ্যে ও ধান কাটা শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে ফোনে নিশ্চিত করেছিলেন কয়েকদিন আগে। গতকাল ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার বাহির থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক রয়েছেন ১০ হাজার ৬৯৪ জন। বিষয়টি আমাকে নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জে কৃষিসম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. সফর উদ্দিন।

আশংকার মধ্যেও একটি ভাল দিক হল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়নি। পূর্বাভাস ছিল ১৭ -২১ এপ্রিল পর্যন্ত এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে ২২০ মিলিমিটার। সুসংবাদ হল সেটি হয়নি। ২৪ এপ্রিল বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১ মিলিমিটার। এটি আমাদের জন্য ভাল। তবে এবার ধান কাটা নিয়ে জেলার সমস্ত শ্রেণী পেশার মানুষ আন্তরিক ভূমিকা রাখছেন। জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ প্রতিদিন হাওরে ছুটে যাচ্ছেন।

২৩ এপ্রিল রাতেও জেলা প্রশাসক সদর উপজেলার একটি হাওরে নিজে অংশ নিয়ে উৎসাহ প্রদান করেন ধান কাটার। ঘোষণা অনুযায়ী, ধানকাটা শ্রমিকদের ত্রাণ দিচ্ছেন। জেলা-উপজেলা প্রশাসন দিনরাত ছুটে যাচ্ছেন হাওরে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ হাওরে যাচ্ছেন। উৎসাহ প্রদানের জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং জনপ্রতিনিধিরাও অংশ নিচ্ছেন। ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সংঠগনের নেতা কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। রোভার স্কাউট ছুটে গিয়ে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন।

আমার নির্বাচনী এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা নিয়মিত শ্রমিকের বাইরে নিজেদের উদ্যোগে ধান কাটা শ্রমিক সংগ্রহ করেছেন। গ্রাম পুলিশরা অংশ নিচ্ছেন ধান কাটায়। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের উদ্যোগে শাল্লায় এক কৃষকের ধান কেটেছেন পুলিশ।

অনেক রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন ধান কাটায় অংশ নিয়েছেন। মানুষকে উৎসাহ প্রদানের জন্য যারা এই ধান কাটায় অংশ নিয়েছেন আপনাদের শ্রদ্ধা এবং অভিনন্দন জানাই।

প্রশাসন, জনপ্রতিনিধির বাইরে অনেক সংগঠন নিয়মিত মাইকযোগে প্রচারণা চালাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী অংশ নিয়ে দ্রুত ধান কাটতে। তারা সবাই আন্তরিকতার সাথে কাজ করছেন কৃষি এবং কৃষকের জন্য। আমাদের খাদ্যের জন্য।

আমাদের কৃষকরা বিআর ২৯ জাতের ধান করেন বেশি ফলনের আশায়। এই জাতের ধান পাকতে সময় নেয় একটু বেশি।বিআর২৮ কাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিআর ২৯ অনেক জায়গায় এখনও কাটার উপযুক্ত হয়নি। মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের এক কৃষক জানালেন মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় পেলে পুরো পাকা ধান তুলে নিতে পারতাম। গৌরারং ইউনিয়নের লোকজন জানান, এক সপ্তাহ সময় পেলে ধান তুলে নিতে পারব। ধানের মা খ্যাত করচার হাওরে প্রচুর ধান হয়।

শঙ্কার বিষয় হল বৃষ্টিপাত আমাদের সে পর্যন্ত সময় দিবে কি না? কাজেই কিছু ক্ষতি স্বীকার করেও দ্রুত কেটে ফেলতে হবে।জেলা প্রশাসনও দ্রুত কাটার জন্য প্রচারণা করে যাচ্ছেন। হাওরের মানুষ আছেন সমস্যায় । বন্যার আশংকা আর করোনার ভয় মিলে কঠিন সময় পার করছেন। দেখতে দেখতে জেলায় ১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সর্বশেষ গতকাল ২৪ এপ্রিল সদর হাসপাতালের একজন ডাক্তারের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে পরীক্ষায়। সবাইকে অনুরোধ করব স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনে আপাতত হাসপাতালে যাবার আগে হাসপাতালের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতালে যাবেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে আমি কথা বলেছি। করোনা বিষয়ে স্বাস্থ্যবিভাগের সাথে মতবিনিময় সভা করে সদর হাসপাতালের পুরনো ভবনে করোনার জন্য ১০০ শয্যার চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এটি স্বয়ংসম্পূর্ন না। আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ৫০ বেডের করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি জেলা প্রশাসক এবংসিভিল সার্জনের মাধ্যমে।সেটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। আমি আশাবাদি এটি বাস্তবায়ন করতে পারব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহানুভুতির মাধ্যমে।

আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। তবে হাওরের মানুষেরা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষ। হাওরের আফালের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া মানুষ আমরা। এবারের লড়াইতেও হাওরবাসী জয়ী হবে নিশ্চয়। পবিত্র রমজান মাসে পরম দয়ালু আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। 

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ এবং সংসদ সদস্য

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর