২৬ এপ্রিল, ২০২০ ১১:০৮

গ্রামের ঘরে ঘরে কোরআনের সুর ধ্বনিত হয় না কেন?

শাহজাহান সাজু

গ্রামের ঘরে ঘরে কোরআনের সুর ধ্বনিত হয় না কেন?

ছোটবেলায় ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম আমার দাদা আলী আমজাদ সুর করে কোরআন তিলাওয়াত করছেন। আমাদের বাড়ির পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে পথচারীরা সেই কোরআন তিলাওয়াত শুনতেন। তাছাড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে তখন আমাদের মা, চাচী, দাদী, নানীরা সুমধুর কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত করতেন। আমরা মক্তবে কোরআন পড়তে যেতাম।

আমার নানা মোকসেদ আলী যাত্রাপুর গোরস্থান মসজিদ থেকে নিজ কণ্ঠে (তখন মাইক ছিল না) আজান দিতেন। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে আমাদের বাড়ি থেকে সেই আজানের ধ্বনি আমরা শুনতাম। আমি যখন কায়দা, ছিপাড়া শেষ করে কোরআন পড়া ধরব, আমার বাবা সেই কি খুশি, আমাদের বাড়ির লজিং মাস্টার রহমতুল্লাহ হুজুরকে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে সেখান থেকে আমার জন্য নুরানি কোরআন শরীফ আনিয়েছিলেন। ছোটখাটো অনুষ্ঠান করে কোরআন পাঠে আমার হাতেখড়ি হয়েছিল।

তখন দেশে এত মসজিদ, মাদরাসা ছিল না। এত এত হজুর, মাওলানা, পীর ছিল না। হজুরদের মধ্যে এত দলাদলি ছিল না। এখনতো পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় এমনকি বাড়ি বাড়ি মসজিদ। তখন অধিকাংশ মসজিদে বিদ্যুৎ ছিল না, মাইক ছিল না, খালি কণ্ঠে আজান দেওয়া হতো। ইমাম সাহেবদের বেতন ছিল না। স্বেচ্ছাশ্রমে ইমাম এবং মোয়াজ্জিনরা সেবা দিতেন।

এখনতো ইমাম-মোয়াজ্জিনরা সম্মানজনক বেতন পান। অধিকাংশ মসজিদেই আবার এয়ারকন্ডিশন। তখন ৫০ গ্রাম খুঁজেও একটি কউমি মাদরাসা ছিল না। এখনতো ঘরে ঘরে মাদরাসা। এতকিছুর পরও গ্রামে-গঞ্জে, বাড়ি-বাড়ি মুরুব্বিদের কণ্ঠে সেই সুমুধুর কোরআনের ধ্বনি শোনা যায় না কেন? আমাদের ঈমান দিনে দিনে এত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কেন? হজুরদের মধ্যে এত দলাদলি কেন? কথায় কথায় এত ফতোয়া কেন? সমাজে হিংসা বিবেদ এত বাড়ছে কেন? মুরুব্বিদের প্রতি মান মর্যাদা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে কেন? বিষয়গুলো আমাদের ভেবে দেখা দরকার। শান্তির ধর্ম ইসলামে আজ এত অশান্তি কেন তা খুঁজে বের করা দরকার।

লেখক: সচিব, শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট, শিক্ষা মন্ত্রণালয়

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর