২৮ এপ্রিল, ২০২০ ২২:১৯

এই ধরনের মূর্খ এবং কূপমণ্ডুক ভাবনা তাদের মনে তৈরি হয় কিভাবে?

শওগাত আলী সাগর

এই ধরনের মূর্খ এবং কূপমণ্ডুক ভাবনা তাদের মনে তৈরি হয় কিভাবে?

শওগাত আলী সাগর

১. অদিতি আর প্রদীপ্ত নামের তরুণ চিকিৎসক দম্পতির কথা পড়লাম সাংবাদিক লেখক চিররঞ্জন সরকারের লেখায়। মাত্র দুই মাস আগে বিয়ে করা তরুণ দুই চিকিৎসক করোনার এই কঠিন সময়ে বিবাহোত্তর ছুটির নামে দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নেননি। রোগীদের সেবা দেয়ায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। প্রদীপ্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং কর্তৃপক্ষ তাদের দু'জনকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে আইসোলেশনে রেখেছেন।

দু'দিন আগে পত্রিকায় গোপালগঞ্জের এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথা পড়েছিলাম। করোনাভাইরাস শনাক্ত হ্ওয়ার পর স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা তাকে শুকনো পুকুরে তালপাতার ঝুঁপড়ি বানিয়ে সেখানে থাকতে বাধ্য করে।

চিররঞ্জন সরকারের (Chiroranjan Sarker) লেখাটা পড়ার পর থেকেই দুটি ঘটনার মধ্যে পার্থক্য খোঁজার চেষ্টা করছি। প্রদীপ্ত চিকিৎসক, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যশোরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর গোপালগঞ্জের স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানকার সাধারণ মানুষ। একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে যেমন সামাজিক অবস্থানগত পার্থক্য আছে, দুজনের ব্যাপারে যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদেরও অবস্থানগত পার্থক্য আছে। কিন্তু দুটি সিদ্ধান্তই এক রকম - অবৈজ্ঞানিক, অস্বাস্থ্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য।

২.বিশ্বের সবদেশেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়াদের সিংহভাগের চিকিৎসা করা হয় বাড়িতে রেখে। শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো বড় ধরনের জটিলতা দেখা না দিলে তাদের হাসপাতালে নেয়াই হয় না। কানাডায় ৮০ শতাংশের বেশি রোগী বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের অনেকেই একবারের জন্যও চিকিৎসকের দেখা পায়নি। প্রয়োজনও হয়নি।

কিন্তু এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়- পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানসিক প্রশান্তি এবং ভালো খাবার দাবার। নিজ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। অনেকে এই সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন- যা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ফলে করোনাভাইরসে শনাক্ত হ্ওয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ নজর দেয়া হয়। চিররঞ্জন সরকারের লেখায় প্রদীপ্তর আইসোলেশন ব্যবস্থার যে চিত্র পা্ওয়া গেলো তাতে তো মনে হচ্ছে- থাকার পরিবেশটাই এই তরুণ চিকিৎসক দম্পতির মনে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে। এই পরিবেশটিই তো তার সুস্থতার প্রতিবন্ধক।

৩. দেশে দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর রোগীদের পরিবারের সাথে নিজ বাড়িতেই থাকতে দেয়া হচ্ছে। আলাদা কক্ষে সতর্কতামূলক কিছু পদক্ষেপ নিতে হয় শুধু। যাদের আলাদা কক্ষ দেয়ার মতো অবস্থা নাই তারা একই কক্ষের কোনার দিকে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করেন একজন- যিনি সতর্কভাবে সেটি করেন। গোপালগঞ্জের গ্রামের মানুষ না হয়- এসব জানবে না, কিন্তু যশোরের স্বাস্থ্যবিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা এগুলো জানবেন না কেন? তবে তারাও কি করোনাভাইরাস নিয়ে পড়াশোনা করে নিজেদের তৈরি করেননি? তারাও কি ফেসবুক বিজ্ঞানী আর বিশেষজ্ঞদেরই অনুসরণ করেন!

৪. বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে যত না সচেতন করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে। নইলে কারো করোনা হলেই তাদের একঘরে করে রাখতে হবে, এলাকায় থাকতে দেয়া যাবে না- এই ধরনের মূর্খ এবং কূপমণ্ডুক ভাবনা তাদের মনে তৈরি হয় কিভাবে?
যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বলবো- আপনারা অন্তত চিকিৎসকের মতো আচরণ করুন, বিজ্ঞানভিত্তিক আচরণ করুন।

প্রদীপ্তকে তার নিজের বাসায় আইসোলেশনে থাকতে দিন। আপনারা তো জানেন- নিজ বাসায় আইসোলেশনে থাাকাটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান সমর্থন করে! যদি এর সঙ্গে আপনাদের দ্বিমত থাকে তা হলে আমাদের উদ্বিগ্ন হবার যথেষ্ট কারণ আছে।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুন দেশ ডটকম।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর