২৯ এপ্রিল, ২০২০ ২০:৪৭

প্রয়াত সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের ছেলের আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস

অনলাইন ডেস্ক

প্রয়াত সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের ছেলের আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস

হুমায়ুন কবির খোকন। ছবি: আশরাফুল আবিরের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

রাজধানীর একটি হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার রাতে দৈনিক সময়ের আলোর চিফ রিপোর্টার সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার কুমিল্লার মুরাদনগরে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিগত তিন চার দিনের বাবার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন হুমায়ুন কবির খোকনের ছেলে আশরাফুল আবির।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া আশরাফুল আবিরের আবেগঘন স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
আমি ও আমার পরিবার এর কাছে মনে হচ্ছে, যে আমরা হয়তো কোনো বাজে স্বপ্ন দেখলাম। কিন্তু এইটা যে আসলেই বাস্তবেই হয়ে গেল আমরা এখনো বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমার কাছে এখনো মনে হচ্ছে যেন একটা বাজে স্বপ্ন দেখে হয়তো ঘুমটা ভাঙল।

আমার বাবা একজন অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান, পরিশ্রমী একজন ব্যক্তি ছিলেন। যিনি সারাটিজীবনে হয়তো নিজের কথা কখনো ভাবেননি। আমাদের জন্যই হয়তো সারাটাজীবন উৎসর্গ করে গেলেন। এই করোনা সঙ্কটময় দিনেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে প্রতিটা দিন অফিস এ গিয়েছেন বাসায় এসেছেন। আমি এই নিয়ে আমার বন্ধুদের ও বলে ছিলাম যে আমরা খুব ভয়ে আছি। কারণ আমার আব্বু আর আপু দুইজন চাকরিজীবী পরিবারে এবং তারা প্রতিদিনই অফিস এর গাড়ি দিয়েই অফিস এ আসা যাওয়া করেছেন।

আমার বাবা ৩-৪ দিন ধরে কাশি হচ্ছিল পরিমাণটা দিন দিন বেড়েই চলছিল। আমার তখনই সন্দেহ হচ্ছিল। আমি বাবাকে বললাম আপনার করোনা হয়নি তো? সে হেসে বললো অরে ধুর বেটা টন্সিল এর বেথা এইটা আগের থেকেই ছিল। ওই রকম কিছু না। কারণ সে চাচ্ছিল বাসায় থেকেই ট্রিটমেন্ট নিয়ে সুস্থ হতে। কারণ করোনা পজেটিভ হলে এলাকার ভিতর আতঙ্ক ছড়াবে। এছাড়া লজ্জার ভয়ে সে তখন ও এইটা সাধারণভাবেই দেখছিল। আমি ও ভাবলাম যে হয়তো এই রকম জ্বর-কাশি হয়তো সাধারণ হয়তো বাসায় ওষুধ খেলে গরম পানি খেলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। আমি এই কয়দিন বাসায় সাধারণভাবেই কাটাচ্ছিলাম বিভিন্ন স্কুল ডেভেলপেড করার জন্য অনেক কিছু শিখছিলাম। কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিল আম্মু ও জ্বর অনুভব করতে শুরু করলো তার দুই দিন আগে। তখন আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

আম্মুকে বললাম বললো যে করোনার নমুনা দুই একদিন এর ভিতরই নিতে আসবে বললো। কিন্তু বাবার কাশি বেড়েই চলছিল কাশির সাথে সাথে ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রমণ করছিল মনে হচ্ছে। হয়তো বাবার গলায় চুলকাচ্ছিল। আমি এর পরের দিন একটু দেরি তে উঠলাম দেখলাম আম্মু বাবা কে ভাতের জাউ রান্না করে খাওয়াচ্ছে। হটাৎ দেখলাম সে জানি কেমন করছে মনে হচ্ছে অনেক কষ্ট হচ্ছে মনে হলো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। সে ওই মুহূর্তে এই লড়াই এর সাথে পেরে উঠতে পারে নি। আম্মু কে বললাম বললো সকালে অ্যাম্বুলেন্স কে খবর দেওয়া হইসে। উত্তরার রিজেন্ট এ বেবস্থা করা হইসে। অ্যাম্বুলেন্স আসতেসে। আম্মু বললো তোর কাছে কি ভাংতি টাকা আছে আমাকে দে তো।

আমার কাছে ৩৫০০ টাকা ছিল আমি পুরাটাই আম্মু কে দিয়ে দিলাম সাথে সাথে। আমি ঘরে পড়ার জামা পরেই অ্যাম্বুলেন্স এ উঠে গেলাম। কারণ আমার মনে হচ্ছিলো এমনিতেই দেরি হয় গেসে। আমি ভাবলাম হাসপাতাল এ হয়তো অনেকেই থাকবে আব্বুর জন্য অফিস এর লোক। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম আমি আর আম্মু ছাড়া পরিচিত কেউ নেই। কারণ লকডাউন থাকার জন্য গাড়ি তেমন চলে না রাস্তায় এছাড়া অনেকেই হয়তো লক্ষণ গুলো বর্ণনা শুনে হয়তো কেউ আসতে সাহস করছিলো না। এইদিক সাবান আঙ্কেল সব বেবস্থা করে রেখেছিলো ওইখানে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টাই করেছিল আইসিউইতে রেখে অক্সিজেন দেয়ার কিন্তু ডাক্তার বললো তার পালস নেই এবং ব্রেন ও অক্সিজেন নিচ্ছে না। ডাইরেক্টলি বললেন ও না যে সে আগেই মারা গেছে বললো আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি দোয়া করেন যদি ব্রেইন হটাৎ মিরাকেল ভাবে যদি কাজ করতে শুরু করে। রাত ১০টার দিকে আম্মুকে উপরে ডাকলো শেষ বারের মতো দেখার জন্য। তখন আম্মু ফোনে কয়েকজনকে জানিয়ে দেয়।

এছাড়া নিউস স্ক্রলগুলাতেও অফিসিয়ালি আপডেট দিয়ে দেয় যে বাবা আর নেই। এখন বাবার করোনা টেস্ট হওয়ার আগেই মারা গেছেন তাই এইটা অফিসিয়ালি বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে করোনাভাইরাস এর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

সবাই বাবার জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করেন। উনার মতো ভালো,সৎ এবং নিষ্ঠাবান মানুষ খুব কম ই আছে সমাজে। এছাড়া আমি চাই না এখন সবাই আমাদের কে ডিমোটিভেট বা ভয়-ভীতি দেখাক। আমরা এমনিতেই অনেক কঠিন সময় পার করছি।

আমরা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করেই বাসায় আছি। বাসা বা এলাকা হয়তো লোকডাউন হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে মনে করি সবাই আমাদের জন্য দোয়া করুক।

আমার বন্ধুরা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য আমাদের সামনের দিন গুলো নিয়ে। আশা করি আমাদের পরিবার, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ সরকার পাশে থাকবেন। বাস্তবতা কঠিন হয়ে গেছে তবুও বাস্তবতার সাথেই সব কিছু এখন এডজাস্ট করে নিতে হবে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সচেতন হবেন। আপাতত আর কিছু লিখতে চাচ্ছি না।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর