১ মে, ২০২০ ১১:০৮

বই এর সাথে থাকুন, আনন্দে থাকুন

পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ

বই এর সাথে থাকুন, আনন্দে থাকুন

করোনাকালে অনেকের ঘরে বসে সময় কাটতে চায় না। অসহ্য লাগে।বাহির টানে। আড্ডা টানে। প্রিয় স্থান টানে। প্রিয় মুখ টানে। যাওয়া যায় না।বাইরে ভয়ঙ্কর অদৃশ্য বিপদ। প্রাণঘাতী ভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে। সন্তান নিষেধ করে। প্রিয় মানুষেরা নিষেধ করে। বাইরে যাওয়া যাবে না। করোনায় আক্রান্তরা প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কষ্টের মৃত্যু। এই প্রচণ্ড আর কষ্ট এ দুটো শব্দ দিয়ে শ্বাসকষ্ট বুঝাতে পারব না। আমি দুই বার এমন কষ্ট অনুভব করেছি। দুইবারই হার্ট এ্যাটাকের কষ্ট। শ্বাস নিতে না পারার কি যে কষ্ট বুঝেছি তখন। যা দেখি না সেই অক্সিজেন কি বুঝেছিলাম তখন। সব দেখছি, শুনছি। বুকে ব্যথা। বাম হাতে ব্যথা। এই ব্যথার তীব্রতাও বুঝানো যায় না লিখে বা বলে। ব্যথা হচ্ছে। আবার দম নিতে পারি না। বারবার চেষ্টা করি। দম নিতে পারি না। কি যে কষ্ট বুঝানো যায় না।

করোনার মুত্যুতে এমন দম নেওয়ার কষ্ট হয়। এত কষ্টের মৃত্যুতে ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। নিরাপদে থাকুন।

তবে এটা ঠিক ঘরে দীর্ঘ সময় কাটানো ও যন্ত্রণার। সময়কে আনন্দময় করা লাগে। নাহলে মানুষের জীবন কি আর জীবন থাকে? ঘরে বসে সেই পুরনো আনন্দে ফিরে যান। বই এর কাছে যান। বই আনন্দ দিবেই। ওমর খৈয়ামের সেই বিখ্যাত উক্তি অনন্ত যৌবনা বই এর কথাতো সবাই জানি।গত বইমেলার পর থেকে সিদ্বান্ত নিয়েছিলাম এবার বেশ কিছু আত্নজীবনী পড়ব। বিখ্যাত মানুষদের আত্মজীবনী। রাজনীতিবিদদের আত্মজীবনী। মনীষীর আত্মজীবনী। অনেকের বিশাল বই। কিন্তু পড়তে গিয়ে নেশা ধরে যায়। শেষ না করে ঘুমাতে যাওয়া বা উঠা যায় না। আত্মজীবনীতে এক সাথে অনেক কিছু পাওয়া যায়। প্রেম, রাজনীতি, খেলা, সাহিত্য, ইতিহাস, সেই সময়। সব কিছু।

যদিও আত্মজীবনীতে হয়ত যিনি আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা লেখেন তিনি পুরো সত্য বলবেন, কিছুই লুকোবেন না তা নাও হতে পারে। সেইন্ট অগাস্টাইন এর কনফেশনস এ কোন অসত্য না-ও থাকতে পারে। তবে সবাইত আর সন্ত নন।

বার্ট্রান্ড রাসেল এর ছাত্র ছিলেন টি এস এলিয়ট। গৃহশিক্ষকের সাথে রাসেল এর মায়ের সম্পর্কের কথা আত্মজীবনীতে বলেছেন। কিন্তু এলিয়টের প্রথম স্ত্রী ভিভিয়েন এর সাথে নিজের সম্পর্কের কথা রাসেল তাঁর আত্মজীবনীতে বলেননি।

প্রশান্ত কুমার পাল রবিজীবনীতে বলেছেন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ যখন প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড যান, তখন তিনি আই.সি.এস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা) দিতে গিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে এ কথা বলেননি। জীবনস্মৃতিতে তিনি লিখেছেন "ভারতী যখন দ্বিতীয় বৎসরে পড়িল মেজদাদা প্রস্তাব করিলেন, আমাকে তিনি বিলাতে লইয়া যাইবেন।পিতৃদেব যখন সম্মতি দিলেন তখন আমার ভাগ্যবিধাতার এই আর একটি অযাচিত বদান্যতায় আমি বিস্মিত হইয়া উঠিলাম।....কথা ছিল, পড়াশুনা করিব ব্যারিস্টার হইয়া দেশে ফিরিব। তাই একদিন ব্রাইটনে একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হইলাম।"

সব কথা আত্মজীবনীতে নাই থাকুক। এতে পাঠক হিসেবে সমস্যা নেই। যতটুকু আছে তাতেই অনেক। অনেক পাওয়া যায়। পড়ুন। ভাল লাগবে।ভাল থাকবেন। অলস বসে থাকলে মেজাজ বদ হবে। ঘরে থাকা আনন্দের হবে না। অযথাই ঝগড়ায় জড়াবেন। সরাসরি বা মানসিকভাবে। কি দরকার এসবের। পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার না। আপনি সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও না। সমাধানও আপনার কাছে নেই। তার চেয়ে ভাল থাকুন। বই এর সাথে থাকুন। আনন্দে থাকুন। অনন্ত যৌবনা বই এর সাথেই সময় চলে যাক।অনেকের জীবনীতে অনেক কিছু জানবেন। ভাল লাগবে। ভাল থাকবেন।

লেখক: জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ এবং সংসদ সদস্য

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর