১ মে, ২০২০ ১২:৩০

করোনা মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া

এম আর করিম রেজা

করোনা মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া

চীন সরকারিভাবে উহানে করোনা মহামারী ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই ইন্দোনেশিয়া আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, বাণিজ্যিক কারণে বিপুল সংখ্যক চীনা নাগরিক ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস করে এবং দেশটির বড় শহরগুলোর সাথে চীনের বিমান যোগাযোগ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে সার্স এবং মার্স মহামারী প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে থাকে দেশটি। দেশব্যাপী ১২০টি হাসপাতালে সম্ভাব্য রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়। চীনের হুবেই প্রদেশে বসবসরত নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে একটি দ্বীপে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা রোগী সনাক্ত হলেও ইন্দোনেশিয়ায় কোন রোগী সনাক্ত না হওয়ার কারণে সমালোচনার সম্মুখীন হয় দেশটি। ২ মার্চ দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ২ জন করোনা রোগী সনাক্তের ঘোষণা দেন।

কোভিড ১৯ মহামারী মোকাবেলায় ইন্দোনেশিয়া পুরোপুরি লকডাউনের পথ অনুসরণ না করে দক্ষিণ কোরিয়ার দেখানো সামাজিক দূরত্ব রক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। গণপরিবহন, অফিস আদালত এবং কলকারখানায় সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে চালু রাখা হয়। গণজমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন না করে স্থানীয় সরকারের উপর প্রয়োজনে নিজ এলাকায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। দেশব্যাপী ১২০টি হাসপাতালের পাশাপাশি দুটি দ্বীপ এবং জাকার্তায় ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমস ভিলেজে জরুরি অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল চালু করা হয়। তবে কিটের অভাবে সনাক্তকরণ পিসিআর টেস্টের সংখ্যায় পিছিয়ে থাকে দেশটি। পিসিআর টেস্ট কিট সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি গণহারে ব়্যাপিড টেস্ট শুরু করা হয়, ড্রাইভ থ্রু টেস্টের ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন স্থানে। পিসিআর টেস্টে সনাক্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি ব়্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে সম্ভাব্য আক্রান্তদের পৃথক করে নিজেকে বাসস্থান এবং প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের নীতি গ্রহণ করে দেশটি। দূরপাল্লার যোগাযোগ বন্ধ না করায় বড় শহরগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ আদি বাসস্থানে পাড়ি জমাতে থাকে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

সংক্রমণের কেন্দ্রভূমি ছিল রাজধানী জাকার্তা। ১০ এপ্রিল ৩ কোটি মানুষের এই মহানগরী আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়। মেট্রো বাস, ট্রেন চলাচলের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়। দূরপাল্লার গণপরিবহন চালু থাকলেও সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়। এলাকাভিত্তিক গণহারে ব়্যাপিড টেস্ট শুরু করা হয়। ফেসমাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রত্যেক নাগরিককে ২টি করে ফেসমাস্ক বিনামূল্যে দেয়া হয়। সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় ২৪ এপ্রিল জাকার্তা মহানগর এলাকায় অফিস আদালত, শপিং মল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দূরপাল্লার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়, তবে মহানগরের অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন এখনও চালু রয়েছে। সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল চালু রাখা হয়েছে।

মহামারীর প্রথম দিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই সংকট থাকলেও দ্রুততার সাথে সামাল দেয়া হয়েছে, পর্যাপ্ত পিসিআর কিট সংগ্রহ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। দিনে প্রায় ১০ হাজার পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে এখন। এই মহামারী মোকাবেলায় শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া সমালোচনা এবং সতর্কবাণী উপেক্ষা করে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার বিষয়টি কড়াকড়িভাবে আরোপ করার মাধ্যমে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে কলকারখানা চালু রাখার। এখনও দেশটির এক তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানা চালু রয়েছে। এই মহামারী সামাল দিতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেয়া হযেছে। দেশটির ৯-১০% গরীব মানুষের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থায় মাসিক অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের বিল মওকুফ করে দেয়া হয়েছে।

বিগত এক সপ্তাহ ধরে ইন্দোনেশিয়ায় দৈনিক কোভিড ১৯ রোগী সনাক্তের সংখ্যা কমতির দিকে। জাকার্তায় সনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও অন্যান্য এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত ৭৮২ জন এবং সুস্থ ১৫২২।

বলা যায় চলমান কোভিড ১৯ মহামারী মোকাবেলায় বিশেষ কোন দেশ বা মডেল অনুসরণ না করে, নিজস্ব একটি ঝুঁকিপূর্ণ নীতিতে চলছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির অনুসৃত এই স্বাতন্ত্র্য নীতি ঠিক না ভুল সেটি ভবিষ্যতে জানা যাবে হয়তো।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর