১ মে, ২০২০ ২১:০৯

সারাক্ষণ শুধু খাই খাই খাই! লুটে-পুটে খাই!

সুপন রায়

সারাক্ষণ শুধু খাই খাই খাই! লুটে-পুটে খাই!

সুপন রায়

কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না ত্রাণে চাল চুরি! ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ করা ১৫ টন চাল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হচ্ছে, সকুল, গুদাম, বাসা-বাড়ি, না কোথাও নেই গরীবের জন্য সরকারের দেয়া সেই চাল। চাটার দল সব চেটে-পুটে খেয়ে ফেলছে। 

যে ইউনিয়নের নামে ১৫ টন চাল তুলে দেয়া হল, ডিও লেটারে সই নিয়ে যে চেয়ারম্যান ১০ দিন আগে চাল বুঝে নিলেন ইউএনও এর কাছ থেকে, তিনি অনেক দিন এলাকা ছাড়া। আজ ১ সপ্তাহ হতে চলল, তার চিকিটিরও সন্ধান পায়নি পুলিশ। তাকে বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়! জলে-সহলে-অন্তরীক্ষে, কোথাও নেই জাহাঙ্গীর! ফলে, আজ পর্যন্ত সরকারের বরাদ্দ দেয়া সেই ১৫ টন চাল কাগজে কলমে অস্তিত্বহীন। 

ঢাকার কেন্দ্র থেকে, টেলি কনফারেন্স এর মাধ্যমে, ত্রাণ চুরি বন্ধে, যে কঠোর বার্তা দেয়া হল এতোদিন, মাঠে গিয়ে সেই বার্তা কেমন করে প্রতিফলিত হচ্ছে, তার একটি পরিষ্কার উদাহরণ হতে পারে এটি। 
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে, ১৫ টন চাল চুরি নিয়ে পিআইও (PIO) একটি মামলা করেছেন। পুলিশ সেই মামলা তদন্ত শুরু করেছে। তথ্য প্রমাণও সংগ্রহ করছে তারা। কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাসুদুর সাহেব আমাকে বলছিলেন, ‘পুলিশ এখন মাঠে ঘটনার তদন্ত করছে, কাগজ পত্র যাচাই করছে, আমরা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে আনবোই’।
 
ঘটনাটি কক্সবাজার ও পেকুয়া’তে ক’দিন ধরেই মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। Word & mouth যাকে বলে মানুষ! মুখরোচক নানা গল্প ডালপালা ছড়াচ্ছে! চলছে, দোষারোপের ঘৃন্য, পুরোনো নোংরা খেলা। সেই নোংরামির প্রাথমিক ধাক্কা লেগেছে, ইউএনও-র সায়কা সাহাদাতের গায়ে। তার প্রতি ইঙ্গিত করে, সহানীয় রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে, সর্বোচ্চ আসনের আসীন, জন প্রতিনিধিও সরাসরি পালিয়ে থাকা ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়ে এখানে-ওখানে দৌড-ঝাঁপ করছেন। তৈরি হচ্ছে নতুন সংকট। 

করোনার এই মহা সংকটেও, সর্বোচ্চ জন প্রতিনিধিদের মূল্যায়ন উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করা, এখনো সম্ভব হচ্ছে না বলেই এই ঘটনায় প্রমাণিত হল। সেই চাপের ধাক্কায় ইউএনওকে পেকুয়া থেকে প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়। এই Status দেবার পর কমেনট থেকেই অবহিত হই যে, আগের আদেশ বাতিল করা হয়েছে! আদেশ হওয়া ও পরে বাতিল হওয়ার এ খেলা থামছেই না যেন। এ ধরনের চিঠি চালাচালি মাঠে যিনি কাজ করেন, তাকে Demoralised করে দেয়।

চাল বিতরণ করা হল না, কিন্তু উপজেলা থেকে গ্রহণ করা হল, প্রাথমিক ভাবে তা প্রমাণিত হওয়ায় চেয়ারম্যান বরখাস্ত হলেন। কিন্তু UNO তো এখনো সন্দেহাতীত ভাবে দোষী প্রমাণিত হননি, তারপরও কেন তাকে (দুপুরে টেলিফোন আলাপ) সরিয়ে দেয়া হল, এ প্রশ্নে কক্সবাজারের ডিসি কামাল হোসেন যেটি বললেন, সেটি অবশ্য যুক্তির ভেতর পড়ে! তিনি আমাকে বলছিলেন, ‘ইউএনও র হয়তো সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল, কিন্তু গরীব মানুষের হাতে ত্রাণ তুলে দেয়া হচ্ছে কিনা, যথাযথ বন্টন হচ্ছে কিনা, সেটিতো আরও কারোরও দেখার দায়িত্বে পড়ে’। 

ইঙ্গিত বুঝতে কষ্ট হয় না, মুখে তিনি না বললেও বুঝি, কাদের কথা বলছেন তিনি। তাদের দ্বারা কাজের কাজ হচ্ছে না বলেই ৬৪ জেলায় ৬৪ সচিবকে মনিটরিং করার বিশেষ দায়িত্ব দেন HPM। তাতেও কী কাজ হচ্ছে না তাহলে? কক্সবাজারের দায়িত্ব পেলেন হেলালুউদ্দিন। তিনি সিনিয়র সচিব। কক্সবাজার তার আবার নিজের এলাকা! তাই, সমস্যার গভীরে পৌঁছাতে তার সময় লাগার কথা নয়। তাকে সে কথা মনে করিয়ে দিতেই তিনি আমাকে বললেন, ‘এটা তদন্তের মধ্যে আছে, দেখি কী পাই, পরে জানাব’? এ টুকু বলে এ বিষয়ে আর অগ্রসর হতে চাননি তিনি। 

মাঠে দিনরাত কাজ করবার পরও, যার বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর্যক ইঙ্গিত, সেই ইউএনও সায়কা সাহাদাত এর সঙ্গে কথা বলি সবার শেষে। তিনি বললেন, ‘যারা নানারকম অভিযোগ আজ তুলছেন, তাদেরকে সামনে তো অতীতে অনেক ত্রাণ দিয়েছি, এখনো দিচ্ছি, কই আগে তো কখনো কেউ কোনো অভিযোগ তোলেননি! এখন কেন তারা তুলছেন, সেটা কিন্তু তারা বলছেন না’ 

১৫ টন চালের দাম সর্ব সাকুল্যে সাড়ে ৫ লাখ টাকা হবে হয়তো। ভাবছি, এই ঘোর অন্ধকারেও সামান্য ক’টা টাকার লোভ সামলাতে পারে না মানুষ? 

সারাক্ষণ শুধু খাই খাই খাই! লুটে-পুটে খাই! করোনা কখন ধরবে চাল চোরকে? 

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর