৪ মে, ২০২০ ১২:৩৫

গুলশানের ফ্ল্যাটে থেকে মানসিকতার উন্নয়ন খুব একটা ঘটেনি

ইফতেখায়রুল ইসলাম

গুলশানের ফ্ল্যাটে থেকে মানসিকতার উন্নয়ন খুব একটা ঘটেনি

ইফতেখায়রুল ইসলাম

"স্যার আমি কিচ্ছু করি নাই, এই রোজা রাইখা গরমের মইধ্যে ঝাড়ু বিক্রি করতে বাইর হইছি শুধু পেটের দায়ে"

বলেই কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে লোকটি বলতে লাগলো ওই বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড তাঁর মালিকরে কম টাকায় ঝাড়ু দেই নাই দেইখা, আমারে ৩টা থাপ্পড় মারছে। মালিকের কাছে একটা ফুলের ঝাড়ু ৬০ টাকা অনেক বেশি মনে হয়েছে!

গুলশানের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থেকে মানসিকতা আর মানবিকতার উন্নয়ন খুব একটা ঘটেনি।

লোকটির করুণ চোখে তাকিয়ে বললাম, আমাকে দেখান কোন বাসার গার্ড মেরেছে আপনাকে! কথা শেষ না হতেই তাঁর দৌড় শুরু! নিজের আত্মসম্মানটুকু ফিরে পাবার কি প্রাণান্ত চেষ্টা একজন ঝাড়ু ওয়ালার(পড়ুন মানুষের)! আমার গাড়ি অনুসরণ করতে থাকলো তাঁকে। পৌঁছানোর পরপরই বিশালদেহী এক গার্ড বেরিয়ে এলেন, পুলিশের গাড়ি দেখেই ভোল পাল্টে বলা শুরু করলেন, স্যার আমি মারি নাই! উপর থেকে ম্যাডাম ঝাড়ু কিনতে বলছে, সে ৬০ টাকা দাম চেয়েছে ওর ব্যবহার ভাল না! এক নাগাড়ে বলা কথা গিলে ফেললো একটি ধমক খেয়ে। পরবর্তী সময়ে ঝাড়ু ওয়ালার কাছে নমনীয় হয়ে কথা বলেছেন বিশালদেহী সেই সিকিউরিটি গার্ড, গার্ড আদতে মালকীনের মত মালিকই হয়তো ভাবেন নিজেকে।

নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চারগুণ বেশি দামে একটি ঝাড়ু কেনার পর মানুষটি চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারছিলেন না। গাড়িতে আরও একটি ঝাড়ু দিয়ে দেয়। বেশি লাভ করার ইচ্ছে নেই তাঁর! প্রাপ্যটুকুই বুঝে নিতে চায়। আহারে মন আমার, আহারে ভালবাসা! এই শ্রেণিভুক্ত এই নিরীহ চোখ জোড়ায় আমি প্রতিনিয়ত ভালবাসা খুঁজে ফিরি এবং কখনোই হতাশ হই না বরং প্রতিবার বিস্মিত হই এবং নতুন করে শিখি, আমাদের কথিত মতে এই ক্ষুদ্র মানুষদের কাছ থেকে!

এই দুর্দিনে এদের সাথে দাম নিয়ে দয়া করে খুব বেশি দর কষাকষি করেন না। সুযোগ থাকলে একটু বেশি গুঁজে দিয়ে এসেন। ভিক্ষাও করছে না, কাজ করেই খেতে চাচ্ছে! তাঁর দায় তিনি তো মেটাচ্ছেন, আপনি, আমি আসুন আমাদের দায়টুকু মেটাই।

আপনার, আমার কাছে তাঁর দৌড় টুকু শুধুই দৌড় হতে পারে কিন্তু তাঁর কাছে সেটি নিজের আত্মসম্মান ফিরে পাওয়ার দৌড় ছিল!

এই ছোট্ট ঘটনায় আমি পুলিশের প্রতি মানুষের ভালবাসা, আস্থা ও অনুভবের চিত্র খুঁজে পেয়েছি। একজন ঝাড়ু বিক্রেতা অবলীলায় যখন নিজের বেদনার কথা পুলিশকে বলতে আসেন, তখন আমার বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে হয় আগামীর সময় বাংলাদেশের, আগামীর সময় বাংলাদেশ পুলিশের।

করোনার এই যুদ্ধে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় সহকর্মী ও স্বজনদের! এই শোক থেকে শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে চলেছে আপনার, আমার, সকলের জন্য। প্রার্থনায় রাখুন পুলিশসহ সকল ফ্রন্ট ফাইটার্সদের! প্রার্থনায় থাকুন। একইসাথে নিজের আশেপাশের মানুষগুলোর প্রতি নজর রাখুন। একটি মানবিক বাংলাদেশ যদি না হয় তবে, মানবিক কোনো কিছুই প্রত্যাশা করা নিঃসন্দেহে অযাচিত চাওয়া হয়ে যাবে!

আগামীর বাংলাদেশ হোক মানবিকতার বাংলাদেশ।

লেখক : অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন), ওয়ারী বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর