৫ মে, ২০২০ ০৮:২৭

মানুষ করোনায় মৃত্যু মেনে নেবে, কিন্তু অনাহারে মৃত্যু মানতে চাইবে না

আনিসুর রহমান মিঠু

মানুষ করোনায় মৃত্যু মেনে নেবে, কিন্তু অনাহারে মৃত্যু মানতে চাইবে না

আনিসুর রহমান মিঠু

বাংলাদেশে পরিপূর্ণ লক ডাউন অসম্ভব। ঢিলেঢালা লক ডাউনের কোন মানে নেই, এই লক ডাউন বাতিল করা উচিৎ।

আমাদের দেশ অতি ঘনবসতি পূর্ণ একটি দেশ। যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সুশিক্ষিত নয়। আরো বড় অংশ অতি দরিদ্র। এই অতি দরিদ্রদের কখনো ক্ষুধামন্দা রোগ হয়না! এদের বাচ্চারা পান্তা ভাত পেলে, হামলে পড়ে খায়!

আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীকে প্রতিদিন রোজগার করে খেয়ে বাঁচতে হয়। স্বাভাবিক সময়েই এদের বেঁচে থাকতে কস্ট হয়!

আমাদের দেশের মতো মেথর পট্টি, মুচি পট্টি, বেদে পট্টি কি আছে কোন দেশে? শত শত বৃদ্ধ মানুষ শহরে ওরা কোদাল নিয়ে বসে থাকে কাজের আশায়! অন্তত একলাখ নারী অন্যের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে!

আমাদের দেশে এমন বসতি আছে, যেখানে সামান্য একটু জায়গায় কয়েক হাজার মানুষ থাকে! এক টয়লেটে যায় কয়েশ মানুষ! এক ঘরের সাথে অন্য ঘরের দূরত্ব দুই ফুট!

এই দুই-ফুটি করিডোর দিয়ে কেউ কাউকে পেরিয়ে যেতে, গায়ে না লাগার উপায় নেই! এই অবস্থায় কোয়ারেন্টাইন করে কি লাভ হবে!

তাছাড়া বাংলাদেশের মতো একটি গরীব রাষ্ট্র কতদিন লকডাউন করে রাখা যাবে? দুই মাস লক ডাউন থাকলে, আবার মাথাতুলে আগের যায়গায় যেতে রাষ্ট্রের দশ বছর লাগবে।

আমেরিকা লকডাউন করেছে ভিন্ন উদ্দেশ্যে। তারা লকডাউন করেছে যাতে এক সাথে বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত না হয়!

 স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প অল্প সময়ের মধ্যে লকডাউন্ড তুলে নেয়ার কথা ভাবছেন। ইস্টার সানডের পর লকডাউন প্রত্যাহার করতে চেয়েছিলেন, পারেননি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তিনি লকডাউন প্রত্যাহার করবেন বুঝা যাচ্ছে -

তিনি বলেছেন, দীর্ঘদিন লকডাউন চললে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মানুষ হতাশ হয়ে আত্মহনন করতে পারে! কারণন আমেরিকানরা গরীব মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকা পছন্দ করবেনা!

আমাদের বুঝা উচিৎ বিশ্বের এই ধনি রাষ্ট্রের জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ আছে আমাদের দেশে। এবং আমরা অনেক গরীব ও ছোট্ট একটি দেশ।

আমাদের দেশের নেতা, ব্যবসায়ী, আমলা, কিছু শহুরে মানুষ ধনি হলেও, রাষ্ট্র গরীব। এদেশে ব্যাংকের চাইতে ঋণ খেলাপি ব্যক্তি ধনি।

আমেরিকার মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাংলাদেশে হলে, কোন ভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। মহামারী হয়ে যাবে। আমাদের এতো হাসপাতাল, ডাক্তার এবং কবরস্থানও নেই!

আমরা আক্রান্ত হলে, দিনে চারবার ভাপ নেয়া, চারবার গরম পানি খাওয়া, চার কাপ লিকার চা খাওয়া এবং চার বার গরম দুধ খাওয়ার উপর আমাদের নির্ভর করতে হবে। এই টোটকা চিকিৎসাই আমাদের ভরসা। আল্লাহ্‌ মেহেরবানী অবশ্যই করবেন। তা নাহলে লাশের ঢের লেগে যাবে!

এই লকডাউন আমাদের অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা, সন্ত্রাস রাহাজানি বৃদ্ধি পাবে।

তাছাড়া এখন যে লকডাউন বাংলাদেশে চলছে, এটা লকডাউনও না আবার স্বাভাবিকও না। এ রকম লকডাউনে কোন উপকারও আসবে না।

তাই আমি মনে করি, বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প, ইপিজেড এবং অন্যান্য মিল কারখানা খুলে দেয়া উচিৎ। শপিং মল, ঈদের মার্কেট খুলে দেয়ার পর, তারাবি, জুম্মা, ঈদের নামাজ আটকে রাখার কোন মানে নেই। তাছাড়া আমাদের দেশের সরকারের পক্ষে তিন/চার মাস এভাবে চলা অসম্ভব হবে। আর দীর্ঘ দিন এভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশ একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে!

আমাদের বুঝা উচিৎ, করোনায় মৃত্যু মানুষ মেনে নেবে, কিন্তু অনাহারে মৃত্যু কেউ মেনে নিতে চাইবে না।

ইতিমধ্যেই ত্রাণের ট্রাক ছিনতাই হয়েছে! কোন পেশাদারী ছিনতাইকারী তা করেনি, করেছে নিরিহ গরিব মানুষেরা! মানুষ অচিরেই অধৈর্য হয়ে উঠতে পারে।

বহু ব্যবসায়ী, বহু শ্রমিক নেতা, বহু আমলা, বহু বুদ্ধিজীবী, বহু সরকারি কর্মকর্তা, রং বদলানো বহু মাস্তান বসে আছে উপযুক্ত সময়ের আশায়! সে সময়ে বহু মিডিয়াও পিঠ দেখাবে!

করোনাভাইরাস সমস্যা পনের দিন একমাসে শেষ হয়ে যাবে এমন মনে হচ্ছে না। এ সমস্যা বহুদিন থাকতে পারে।

তাই আমাদের উচিৎ, করোনা যাতে মানুষ নিজে পরীক্ষা করে নির্নয় করতে পারে, সম্ভব হলে এমন কিছু বের করে, লকডাউন তুলে দেয়া! এবং প্রত্যেক জেলা সদরে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র ব্যবস্থা করা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ

বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর