বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার রূপকার খন্দকার মোশতাকের ভাগ্নে, বঙ্গবন্ধুর সরাসরি খুনি কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার! তার উপর তিনি ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুন করার পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে তার সখ্যতা আছে এই ফেরদৌস খন্দকারের সঙ্গে। একুশে গ্রেনেড হামলা অন্যতম কারিগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডোনার! ২০ হাজার ডলার দিয়ে আমেরিকা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হয়েও পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে হয়েছিলেন বহিস্কৃত। এসব অভিযোগ নিউ ইয়র্কের চিকিৎসক ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে।
এমন খবর শুনে আমার সারাটা দিনই খুবই অস্তিরতার মধ্যে গেছে। জামায়াত শিবিরের কিংবা স্বাধীনতা বিরোধী কোন সদস্য যেখানে আমার ফেসবুকের ফ্রেন্ড নেই। একটু টের পেলই ব্লক করেই দেই। সেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনীর স্বজন এবং বঙ্গবন্ধুর কন্যার একমাত্র পুত্রের হত্যার পরিকল্পনাকারিরদের সঙ্গে যার সখ্যতা। এমন একটি মানুষ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড এবং তাকে নিয়ে পরপর পত্রিকায় রিপোর্টও করি। ডাক্তার ফেরদৌসকে প্রথম আনফ্রেন্ড করি এবং ব্লক করে দেই। তারপর খোঁজ নিতে থাকি আসলে ঘটনার সত্যতা কতটুকু। একের পর এক জায়গায় খোঁজ নিতে থাকি। ফেরদৌস খন্দকারের পরিবারের সঙ্গে খুনি মোস্তাকের কিংবা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ঘাতক কর্ণেল রশিদের সঙ্গে কোন আত্মীয়তার কোন এখনও পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। কুমিল্লার দেবিদ্বার এবং দাউদকান্দির বেশ কয়েকজন সোর্সের সঙ্গে কথা বললেও তারা কোনভাবেই নিশ্চিত করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ের ফেরদৌস খন্দকারও ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন গুজন রটনাকারিদের উদ্দ্যেশে- খুনী মোস্তাক এবং খুনী কর্নেল রশিদের আত্মীয়তার প্রমাণ করতে পারলে যা শাস্তি দেয়া হবে তাই তিনি মাথা পেতে নেবেন।
এবার আসুন ডাক্তার ফেরদৌস নাকি ছাত্রদল করতেন, নাকি ছাত্রলীগ করতেন সেটা শুনুন সেই সময়ের ছাত্রলীগের নেতাদের মুখেই।
ছাত্রদল, জামায়াত শিবিরের হামলা-মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহুবার, সেই অমি রহমান পিয়াল ভাইয়ের সঙ্গে কাঁধেকাধ মিলিয়ে ছাত্রলীগ করেছেন এবং বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার। তার সম্পর্কে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে পিয়াল ভাই লিখেন, ডাক্তার ফেরদৌস মোস্তাকের ভাগিনা কথাটা সত্য। মোস্তাক আহমেদ তার আপন মামা। তবে সে বঙ্গবন্ধুর খুনী মোশতাক না। সে বোস্টনে থাকে। এখনও জীবিত। তার যেহেতু ফেরদৌসের নামেও খন্দকার আছে, নামে নামে জমে টানে।
পিয়াল ভাই আরেক পোস্টে লেখেন, ফেরদৌসকে নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ করার সময়ে তাকে জামায়াত শিবির বানানো হয়েছিল। সেই সময় প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ সে ছাত্রলীগ করছে। ক্যাম্পাসে আমি তার স্বাক্ষী। এরপর যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ডিরেক্টর অব হেলথ পদে তার সাক্ষাৎকার নিলো, তারপরও অনেকে জিজ্ঞাসা করছে তাঁর রাজনৈতিক পক্ষপাত নিয়া। আমি যা দেখেছি তাই বলেছি। সে মানুষের জন্য কাজ করতেছে।
সেই সময়ের আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি মুক্তা সারোয়ার লিখেন, স্বৈরাচারি সরকারের পতনের পর বিএনপির আমলে ছাত্রলীগের যে কয়েকজন সিনিয়র ভাই পেয়েছিলাম তার মধ্যে উনি একজন। হোস্টেল থেকে বিতাড়িত হয়ে দামপাড়া মেস কক্ষে থাকতাম। আমরা গোপনে মেসে গিয়ে সেই আড্ডা মারতাম। ৯১-৯২ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের হেলাল জোসেফ কমিটির কার্যকরী সদস্য ছিলেন খন্দকার ফেরদৌস।
দেশের ক্রান্তিকালে সুদূর আমেরিকা থেকে যখনই দেশের মানুষের জন্য ছুটে আসছেন করোনা আক্রান্ত মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে, সেই সময় কপালে জুটলো ছাত্রদল, খুনী মোস্তাক আর রশিদের স্বজনের তকমা। শুধু কি তাই? তারেক রহমানের সঙ্গে যোগসুত্রসহ ভয়ঙ্কর সব অভিযোগ। ফেরদৌস খন্দকার দেশে চিকিৎসা দিতে আসায় কাদের স্বার্থে আঘাত লাগলো? এই গুজব সৃষ্টি করে কারা ফায়দা লুটতে চায়? শুনলাম বঙ্গবন্ধুর কন্যা তাকে বড় কোন পদে দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা করছিলেন! সেটাই কি এখন কাল হয়ে দাঁড়ালো ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের জন্য?
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: সাংবাদিক
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা