৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২২:৩৬

আরে মহাশয়, সেই মানুষদের আপনি কি খাওয়াচ্ছেন?

ইফতেখায়রুল ইসলাম

আরে মহাশয়, সেই মানুষদের আপনি কি খাওয়াচ্ছেন?

আমি কখনো সেই অর্থে কুকুর পুষি নাই, তবে রাস্তায় যখনি অভুক্ত কুকুর-বিড়াল যাই পেয়েছি একটু খাবার দেয়ার চেষ্টা করেছি। রাস্তা ঘাটে এরকম কুকুর-বিড়ালের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়! সর্বশেষ আগের অফিসের দুইটা কুকুরকে খাওয়াতাম; তাদের সাথে আরও কয়েকটি এসে ভিড় জমাতো! ওদের মনে ভয় ছিল না হয়তো।

ইসলামের দৃষ্টিতে কুকুরের লালাকে নাপাক বলা হয় কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় সম্পদ পাহারা দেয়া, শত্রু থেকে রক্ষা পাওয়ার নিমিত্তে কুকুর পালনকে নিরুৎসাহিত করা হয়নি!

কোনো এক হাদিসে পড়েছিলাম, স্বাভাবিক অবস্থায় থাকা কুকুর নিধন করা ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় (হাদীসের প্রামাণ্য যাচাইয়ের সুযোগ হয়নি, তাই সত্য, মিথ্যা জানি না)! এখন কথা হচ্ছে বহু কারণে মানুষ নাপাক হয় তাই বলে সেখান থেকে পাক হওয়ার সুযোগ মানুষের জন্য নেই তা কিন্তু নয়!

বিগত কয়েকদিনে কারো কারো পোস্ট থেকে যা বুঝলাম বাইকারদের খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, এজন্য কুকুর নিধনের বিষয়ে তারা একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। কোথাও কোথাও কোনো কোনো বাইকার এরকম সমস্যায় উপনীত হননি তা নয়! কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কি কুকুর নিধনেই নিহিত? দুঃখজনক হলেও সত্যি এদের জীবন না নিয়েও বিকল্প প্রক্রিয়ায় এর সমাধান যে আনা যায় তা নিয়ে একটি কথাও সেই প্রতিবাদকারীগণ বলছেন না! এরা আহতের বদলায় নিহত করার বিষয়ে জোর তাগিদ দিচ্ছেন! যে সব কুকুর পাগলা হয়ে গেছে, সেগুলো নিধন করাতে কারোই আপত্তি নেই! কুকুরের প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে বেওয়ারিশ কুকুরের পরিমাণও কমিয়ে ফেলা যায় অথবা বিভিন্ন জায়গাতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা যায় (কেউ কেউ করছেন, শুনেছি)!

প্রাণীর প্রতি মমতা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)ও দেখিয়েছেন। ইসলাম ধর্মও প্রাণীর প্রতি মানবিক আচরণ করার উপরই জোর প্রয়োগ করেছে! অথচ খেয়াল করে দেখবেন, আপনার আশেপাশের অনেকেই কারণ ছাড়া গরম পানি দেয়া, ঢিল ছুঁড়া, লাঠি দিয়ে পা ভেঙে দেয়া থেকে ধরে এমন কোনো অমানবিক কাজ নেই যা করেন না এই নিরীহ প্রাণীদের উপর! তখন কিন্তু দু পেয়ে এই আমাদের কোনো দোষ হয় না! অথচ উল্টোটা ঘটলে সকল ধ্বংস করে দাও, সকল নিশ্চিহ্ন করে দাও। এমনকি জীববৈচিত্র্যে প্রত্যেকেরই যে ক্ষুদ্র হলেও অবদান থাকে তাও কিন্তু মাথায় আসে না আমাদের অনেকেরই! কত বাসায় চোর, ডাকাত এসে ফেরত গিয়েছে চারপেয়ে এই নিরীহ প্রাণগুলোর জন্য তার ইয়ত্তা নেই; বিনিময়ে দু’দিন পর খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে ওদের মেরে ফেলা হয়েছে। আর যে দেশে, সাময়িক শত্রুতার কারণে পুকুরের হাজার হাজার মাছ নিধন করে ফেলা হয়, অকারণে জঙ্গলের বিভিন্ন প্রাণী নিধন করে ফেলা হয়, সেখানে কুকুরের জন্য মায়া দেখানো এক ধরণের বিলাসিতাই বটে!

অনেকেই একটা যুক্তি দেখান যে, মানুষ খেতে পায় না আর তারা কুকুর, বিড়াল খাওয়াতে আসছে? আরে মহাশয়, সেই মানুষদের আপনি কি খাওয়াচ্ছেন? আমি দেখেছি যারা প্রাণীর প্রতি মমতা দেখান, তারা মানুষের প্রতি আরও বেশি মমতা দেখান। কেউ যদি মানুষ ও নিরীহ প্রাণীর জন্য যুগপৎভাবে করতে পারেন, আপনার সমস্যা কোথায়? এখন সব কাজ করে নিশ্চয়ই আপনাকে দেখাতে হবে না! নাকি আপনাদের তুষ্ট করেই দান, দখিনা চালাতে হবে?

সবকিছুর পরে আমার ব্যক্তিগত অভিমত, কুকুর নিশ্চিহ্ন করে দেয়াটা সমাধান নয়।বিকল্প ভাবনা ভাবা যেতেই পারে! কারণ ওদেরও যে প্রাণ আছে। কয়েকটি পাগলা প্রাণের জন্য অনেক স্বাভাবিক প্রাণের এই নিশ্চিহ্ন হওয়াটা আমার মানবিক মন কেন যেন মেনে নিতে চাইছে না!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক : অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, পল্লবী জোন গোয়েন্দা বিভাগ (ডিএমপি)।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর