৭ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:২৯

ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ নেই, ক্ষোভ নেই, আছে ‘ছড়িয়ে দেয়া’ নিয়ে

আলী রীয়াজ

ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ নেই, ক্ষোভ নেই, আছে ‘ছড়িয়ে দেয়া’ নিয়ে

আলী রীয়াজ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া এক জঘন্য ঘটনা।’ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। যতগুলো ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান আসাদুজ্জামান খান (প্রথম আলো, ৬ অক্টোবর ২০২০)।

কথাগুলো বারবার পড়ার মতো কথা। উপুর্যপুরি নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ নেই, ক্ষোভ নেই, আছে ‘ছড়িয়ে দেয়া’ নিয়ে। ‘ভিডিও ভাইরাল’ হলে যে ‘তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া’ হবে সেটা বোঝা গেলো। তা হলে ভাইরালেই সমাধান, ভাইরাল না হলে ‘তদন্ত’ হবে না! ‘ভিডিও ছড়িয়ে’ না দিলে ‘ভাইরাল’ না হলে সব ঠিক? 

অত্যাচার নিপীড়নের ছবি যখন ছড়িয়ে পরে তখন অত্যাচারিতের জন্যে তা যে অবমাননার, নারীর জন্যে সে আরেক দফা নির্যাতনের সেটা বুঝতে না পারার কথা নয়, কিন্ত যখন ভাইরাল না হলে থানা-পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন নড়ে না সেখানে আর কি উপায় আছে বলুন? কেনো নড়ে না সেটা তো আমরা জানি। কার বুকের পাটা আছে যে, ‘ষড়যন্ত্রে’ যোগ দেবে? আইনমন্ত্রী যখন বলেন যে ধর্ষণের ঘটনা ‘ষড়যন্ত্র হতে পারে’ (ডেইলি অবজারভার, ৫ অক্টোবর ২০২০), সেই সময়ে যতক্ষণ না এই নিয়ে দেশে হৈচৈ শুরু হচ্ছে তার আগে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেবার সাহস কার আছে বলুন? সিলেটের এমসি কলেজের অধ্যক্ষের কথা মনে করুন, তিনি বলেছেন ‘মুখে তালা লাগিয়ে থাকতে হয়’ (প্রথম আলো, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০)। মুখে তালা লাগানো শিক্ষকের কাজ কিনা সেটা আরেক প্রশ্ন। কিন্ত এই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ তো আজকের না, ২০১৯ সালেও একই কথা বলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ২২ জুলাই নেত্রকোণায় জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচ তলাবিশিষ্ট নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘সাম্প্রতিক খুন-ধর্ষণের ঘটনা বিএনপি-জামায়াতের নিখুঁত ষড়যন্ত্র’ (ইউএনবি, ২২ জুলাই ২০১৯)। 

‘এই ঘটনা’ ‘জঘন্য’, ‘অমানবিক’ বলার মধ্যে এমন একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা আছে যে, এটি হচ্ছে আলাদা ঘটনা, সরকারি ভাষ্যে যাকে বলা হয় ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। বিচ্ছিন্ন ঘটনা এতো ঘটে যে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হবার মত অবস্থা। কিন্ত তারপরেও সেই একই ধরনের কথাবার্তা চলতেই থাকে।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর