৬ নভেম্বর, ২০২০ ২৩:০৭

অস্ট্রেলিয়ার বর্ণিল গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অভিযান

নাজমুন নাহার

অস্ট্রেলিয়ার বর্ণিল গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অভিযান

নাজমুন নাহার

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূলে কোরাল সাগরের গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ যখন পৌঁছেছিলাম আকাশ ছিলো ভীষণ পরিচ্ছন্ন। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটি বস্তু দৃশ্যমান তার মধ্যে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অন্যতম। প্রবাল, পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি ক্ষুদ্র অর্গানিজমস দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত।

নীল সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ানো মাথার উপর অপূর্ব ছাদ যেন আকাশ আর সমুদ্রের মধুর মিলনে আমার স্বপ্নকে জাগিয়ে দিলো জীবনের এক বাস্তব রেখাচিত্রে। আমি দেখেছি জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাডভেঞ্চার হল স্বপ্নের জীবনযাপন করা।  "মনবন্দি নয়, ঘরবন্দি নয়- জীবন যেমনই হোক স্বপ্ন যদি হয় বড়- তবে মুক্তি মিলবেই।"

এভাবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে একদিন জীবনযাপন করতে শুরু করলাম ছিলাম নিজের মত করে। পাহাড়-পর্বত পার হয়ে একদিন সমুদ্র অভিযানে যেতে ইচ্ছে হলো। বইতে পড়েছিলাম গ্রেট ব্যরিয়ার রিফের কথা। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর যা প্রায় ২৯৯, ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২,৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে ২,৯০০ টি পৃথক রিফ এবং ৯০০ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। রিফটি অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূলে কোরাল সাগরে অবস্থিত।
 
এখানে অনেক প্রানের অস্তিত্ব আছে। এই প্রবাল প্রাচীরকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাচার্য্যের একটি বলে ঘোষণা করে। সমুদ্র জীবন যে এত সুন্দর হয় তা আমি বইতে পড়েও বুঝতে পারিনি, যখনই আমি খুব কাছ থেকে সমুদ্রের কোরাল জীবন দেখেছি, বুঝতে পারলাম আসলেই সৃষ্টির রহস্য কত অপূর্ব। 

পৃথিবীর মাঝে লুকিয়ে থাকা অপরূপ সুন্দরকে সন্ধান করতে করতে এভাবে আমি অভিযাত্রা করেছি সমুদ্র থেকে মহাসমুদ্রের অতল গভীরে। সমুদ্রের ভিন্ন জীবনের রহস্যকেও আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি অবলীলায়। এমন সমুদ্র অভিযাত্রা খুব একটা সহজ না হলেও, ইচ্ছের অভিযানে আমি নিজেকে সপেছি সমুদ্রের বিশালতার মাঝে। যখন প্রচন্ড ঢেউয়ের খুব তোড় এসেছিল তখন সেইলিং বোটের লোহার রড ধরে নিজেকে রক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।

২২ জনের যাত্রীবাহী সেইলিং বোট, অস্ট্রেলিয়ার সানডে প্যাসেজ পার হয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে ভাসতে ভাসতে ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ পার হয়ে হয়ে একসময় পৌঁছে গিয়েছিলাম পৃথিবীর বিখ্যাত এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে। সমুদ্রের গভীর তলদেশে স্কুবা ডাইভিং এর সময় পাইপ লিক হয়ে যখন লবণাক্ত পানি পেটের মধ্যে চলে গিয়েছিল তখন বাঁচার জন্য যুদ্ধ করে আবার ফিরে এসেছি। এভাবে চলতে চলতে জীবনের বহু যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে হয়েছে আমাকে। তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি যুদ্ধ করতে পারি অবলীলায়। 

ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষার এক উদাসীন অনুভূতির নাম ছিলো স্বপ্ন পূরণের সেই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের সময়গুলো। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পরিব্রাজকদের সাথে সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে, উত্তাল ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক নিদারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অভিযানে। 

লেখক: নাজমুন নাহার
বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী, ১৪০ দেশ ভ্রমণকারী।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর