৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২০:১০

পরপারে ভালো থাকুন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

অজয় দাশগুপ্ত

পরপারে ভালো থাকুন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে লেখক

জ্যোতি বসু যেমন গম্ভীর অবয়বের নেতা ছিলেন তেমনি মমতা দিদি কর্কশতমা। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিলে দলের সিনিয়র নেতাদের দেখলে মনেই হয় না তাঁরা হাসতে জানেন। রিজভী কিংবা গয়েশ্বররা তো কঠিন চেহারার পেরাসানী নেতা। এক সময় রাজনীতি ছিলো, রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, তখন তারা ছিলেন রসিকজন।

দাদার সাথে সিডনিতে শেষ দেখার সময় দীপাকে দেখে প্রশ্ন করেছিলেন; তুমি এই লোকটার সাথে এত বছর ঘর করো কেমনে? " আমার সাথে যত চোটপাট করুক বাইরের মানুষের সামনে দীপা সবসময় অপ্রস্তুত। তাই আমি আগ বাড়িয়ে হেসে বলেছিলাম, জয়া বৌদিকে দেখে কি এটুকু শিখবে না দাদা? ওর তো এখনো আপনাদের কাছাকাছি পৌঁছাতে অনেক পথ বাকি। এতোবড় নেতা অথচ হাসিমুখে সে রসিকতা হজম করে আমাকেও ছাড় দেননি। 
তখন সংসদ ছিলো। বিরোধী দল ছিলো। আলোচনাও ছিলো। সে জমজমাট অধিবেশনের এক সংসদে নীরব নিশ্চুপ কোন কথা না বলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: একটা কিছু ক গোলাপি একটা কিছু ক"। বলাবাহুল্য তখন এসব বলা যেতো আর শোনার কান ও ছিলো বৈকি। সে কথা প্রবাদের মতো ছড়িয়ে গেছিলো দেশে।

আমাদের যৌবনের শুরুতে টালমাটাল দেশ। সামরিক বাহিনীর শাসনে কে যায় কে আসে বোঝা মুশকিল। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর গদীতে বসলেন বিচারপতি সাত্তার। বয়স্ক মানুষ। সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে দাদা বলেছিলেন, আমরা গেলাম বঙ্গভবনে। বুড়া মানুষ সাত্তার সাহেব। কিছুই বলতে পারেন না। খালি বলেন চট ট ট ট ট, মানে চট্টগ্রামে ট ট জাতীয় কিছু হইছে। এটা যে গুলির শব্দ টের পাইলাম পরে। এমন স্যাটায়ার করা সবার কাজ না।

তুখোড় সাংসদ গণতান্ত্রিক ধারার এই নেতা যখন ভোটে জিততেন তখন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো না। মারামারি রিগিং বা অভিযোগ ছাপিয়ে নির্বাচন ও ফলাফল ছিলো সর্বজনগ্রাহ্য। সে সংসদে একের পর এক এমপি হয়ে আসা এই তরুণ নেতা হয়ে উঠেছিলেন গণতন্ত্রের কন্ঠস্বর।

সামান্য মন্ত্রীত্বের জন্য বস্তাভরা টাকা ড্রাইভার সহকারী মিলেমিশে যে নাটক তার আর কোন হদিশ নাই। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের সমাজে তিনি হয়ে থাকলেন কথিত কালো বেড়াল। 

ঠিক দাদা। চারদিকে দুধ সাদা সফেদ চরিত্রবান নেতাদের ভিড়ে আপনিই ছিলেন কালো বেড়াল।

আমি রাজনীতি করি না। রাজনীতি ও দেশ নিয়ে লিখতে ভালোবাসি। নিশ্চিত জানি সময় নাই আপনাকে মনে রাখার। কাল ব্যক্তিগত ঝামেলায় লিখিনি বটে কিন্তু ভুলিনি আপনার প্রয়াণ দিন। পরপারে ভালো থাকুন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

লেখক: সিডনি প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও ছড়াকার।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর