শিরোনাম
১৭ মার্চ, ২০২২ ২২:৪৯

সংসার জীবন নিয়ে যা বললেন ন্যান্সি

নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি

সংসার জীবন নিয়ে যা বললেন ন্যান্সি

ফাইল ছবি

গেল বছরের সেপ্টেম্বরে নতুন করে সংসার পেতেছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। বর্তমানে গান আর স্বামী মহসীন মেহেদীর সংসারে ব্যস্ত সময় পার করছেন মা হতে যাওয়া এই গায়িকা। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও বেশ সরব। যেখানে প্রায়ই নিজের বিষয়ে বিভিন্ন আপডেট দিয়ে থাকেন ন্যান্সি। আজ বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে সংসার জীবন নিয়ে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সেখানে সংসার জীবনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন এই গায়িকা।

নিচে পুরো স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

আমার আর মেহেদীর সংসার জীবনের বয়স সাত মাস। এদিকে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমাদের দু’জনের জন্যই নতুন করে অল্প দিনের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জীবন সঙ্গী হবার সিদ্ধান্তটুকু নেয়া কঠিন ছিল। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেয়া যেন আনন্দের চাইতেও দ্বিগুণ ভীতি। আমার দু’ভাই, ভাবী এবং রোদেলা বাদে দু’পরিবারের কোনো সদস্যদের নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে নেই কোনো উচ্ছ্বাস, উল্টো রয়েছে বিদ্রূপ মেশানো হতাশা। সেই সাথে নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে অর্থ বা সম্পদ বণ্টনে কে কি পাবে আর কি হারাবে সে সব নিয়ে রয়েছে চুলচেরা হিসেব! আমি নিজেও যেন ভাবতে বসলাম, আচমকাই গোলক ধাঁধায় পরে গেলাম। মনে হলো স্বস্তি খুঁজতে গিয়ে অশান্তি কে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এলাম। বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।

দু’জনই ভালোবেসে যার হাত ধরেছিলাম সেটা যেকোনো কারণেই হোক, শেষ পর্যন্ত টেকাতে পারিনি। জীবন চলায় ব্যর্থতার তকমা কপালে জুটেছে। এখন দু’জন দু’জনের কাছে ভালোবাসার পাত্র-পাত্রী হবার চাইতেও আস্থার হয়ে ওঠাটাই যেন বড় পরীক্ষা! আর প্রতিদিনকার জীবন-যাপন করবার প্রক্রিয়া দু’জনের এতটাই ভিন্ন যে, সেটা রপ্ত করাটাও বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। খাওয়া, ঘুমানো, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করবার ভঙ্গি, নিত্য দিনের কথা বলা, মত প্রকাশ, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া, কাছে আসা- এর সবই যেন নতুন করে শেখবার বিষয়। মনে হলো অল্প দিনেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি।

পূর্বের সংসারে সন্তান যেহেতু আছে, কাজেই তাদের সাথে যোগাযোগও আছে। সন্তানদের কারণে উভয়ের জীবনেই প্রাক্তনদের উপস্থিতি আছে। সেটা উভয়ের সবসময় মন থেকে সহজভাবে মেনে নেয়াটা কঠিন। এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। তার ওপর হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের চাইতেও আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নাটকীয় উদ্বেগ অন্য অনেকের যেন উথলে উঠছে। মেহেদির দুই সন্তান তাদের মায়ের বর্তমান স্বামী অর্থাৎ সৎ বাবাকে ঠিকই বহু আগেই হাসি-মুখে মেনে নিয়েছে কিন্তু সৎ মা হিসেবে আমায় সহ্যই করতে পারে না। অন্যদিকে আমার ছোট মেয়ে নায়লা মেহেদিকে কোনোভাবেই সম্পর্ক অনুযায়ী সৎ বাবার আসন টুকু দিতে নারাজ। কিন্তু স্বচ্ছন্দে তার বাবার জন্য পাত্রী দেখছে এবং তাদের সঙ্গে হাসি-মুখে কথাও বলছে।

ব্যতিক্রম আমার বড় মেয়ে রোদেলা। দিনশেষে সে, সবাই যার যার মত করে সুখে আছে এটাই দেখতে চায়। এ কারণে বেচারিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট নোংরা মন্তব্যেরও মুখোমুখি হতে হয়। আমার রোদেলা! সন্তানের চাইতেও বেশি যে আমার জীবনে মা এর রূপে এসেছে। আজ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলতে রোদেলাই আছে এবং থাকবে জানি।

এই সাত মাসের পথ চলায় এতো বেশি হোঁচট খেয়েছি, সম্পর্কের বিষাক্ত দিক দেখেছি, সন্তানের অবহেলা পেয়েছি, অসম্মানিত হয়েছি, কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে যোগাযোগ হারিয়েছি, সৎ ছেলে-মেয়ের কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে বারংবার কটু কথা শুনেছি, শ্বশুর বাড়ির তিরস্কার দেখেছি, নিজের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছি, পিতা-মাতাহীন নিজেকে অসহায় ভেবেছি, দু’মুখো মানুষ দেখেছি, থমকে দাঁড়িয়েছি, অবাক হয়েছি, ঘেন্না করেছি, তীব্র ভয় পেয়েছি, কেঁদেছি, টালমাটাল হয়েছি, অভিযোগে দিশেহারা হয়েছি, এতো বছরের সংসার জীবনের মাঝপথে এসে নিজেকে একা আবিষ্কার করেছি, চিৎকার করেছি, গালি দিয়েছি।

সুন্দর চেহারার আড়ালে কদর্য রূপ দেখেছি, শিক্ষিত মানুষের বিকৃত রুচি দেখেছি, আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনা দেখেছি, নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি, অভিমানে বোবা হয়ে গেছি, বিশ্বাস হারিয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছি, সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছি, নিজের মৃত্যু কামনা করেছি, মানসিক অবসাদে ভুগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি-  পূর্বে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হলেও এতো কিছু একবারে, একসাথে আগে কখনো ঝড়ের গতিতে জীবনে আসেনি।

আমাদের বিয়ে শুরু থেকেই রসালো আলোচনা, সমালোচনা, গবেষণা, নিন্দা, স্বল্প সংখ্যক শুভেচ্ছা, কাল্পনিক গল্পতে ভরপুর ছিল এবং এখনো আছে; আশা করছি ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে। মেহেদী আর আমার একসাথে ছবি দেখলে মেহেদীর সন্তানেরা তাদের বাবার ওপর নাখোশ হয়। মেহেদী কষ্ট পায়, সেই কষ্টের রেশ আমার সংসার ছুঁয়ে যায়। নায়লাকে চাইলেও আগের মতো নিজের কাছে এনে রাখতে পারি না, সত্যি বললে দীর্ঘ দশ মাস হলো সামনাসামনি দেখিনি। আমারও মন ভার হয়, ফলাফল সংসারে শীতল আবহাওয়া। নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত আমরা স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের কাছে অপরাধী!

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের স্বামীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করলে উপহার হিসেবে একগাদা গালি; আতঙ্ক নিয়ে পোস্ট মুছে দিলে পুনরায় সংসার ভাঙার খেতাব! মাঝে মাঝে মনে হয়, বিশ্বজোড়া দজ্জাল শ্বশুর বাড়ি নিয়ে বসে আছি যাদের কাজ হলো আমার খুঁত ধরা।

এতো কিছুর পরও মেহেদী আর আমি সংসার চালিয়ে যেতে চাই, একসাথে বৈরী পথ চলতে চাই, অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে চাই, একে অপরকে জীবনে প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের মতো ভালোবাসি বলতে চাই, হাতের ওপর হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে চাই, দিন শেষে সাত মাসের চেনা ঘরে ফিরতে চাই। সংসারের পরিচিত গন্ধে শ্বাস নিতে চাই, নিজেদের আনন্দের মুহূর্তগুলো সবার সাথে ভাগাভাগি করতে চাই, রাত জেগে অহেতুক ঝগড়া শেষে জড়াজড়ি করে ঘুমোতে চাই। কি অদ্ভুত আমাদের চাওয়া পাওয়া!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর