৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৩৮

ফেসবুকে যা লিখলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মেয়ে

অনলাইন ডেস্ক

ফেসবুকে যা লিখলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর মেয়ে

সোহেল চৌধুরী ও দিতির একমাত্র মেয়ে লামিয়া চৌধুরী (ডানে)

দীর্ঘ ২৪ বছর আগে চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার পলাতক ও অভিযোগপত্রের এক নম্বর আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে দশটার দিকে রাজধানীর গুলশানের পিংক সিটি সংলগ্ন ১০৭ রোডের ২৫/বি ‘ফিরোজা গার্ডেন’ থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল।

এদিকে, বাবার খুনি গ্রেফতার হলেও চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর ছেলে-মেয়ে এ বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি। তবে তার মেয়ে লামিয়া চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আসামি আশিষ রায় চৌধুরীকে গ্রেফতারের রাতে লামিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, “ভালো আছি, ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।” ধারণা করা হচ্ছে, চিঠিটি বাবার উদ্দেশে পাঠিয়েছেন মেয়ে, অথবা মা চিত্রনায়িকা দিতির উদ্দেশেও লেখা হতে পারে। তবে সোহেল-দিতি দম্পতির পুত্র শাফায়েত চৌধুরী আছেন একেবারেই নিশ্চুপ। কোথাও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে হত্যার কারণসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন আশিষ বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে র‍্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে আশিষ রায় চৌধুরী বলেছেন, “১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশিষ ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত নানান অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। একপর্যায়ে ক্লাবটি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। আজিজ মোহাম্মদ ভাইও সেখানে যেতেন। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে মিটিং করতে এই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ঘটনাক্রমে বান্টি ও আশিষের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন তিনজন ক্লাব ব্যবহার করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। বনানী জামে মসজিদের পাশেই ছিল ক্লাবটি। সোহেল চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে বারবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। সোহেল চৌধুরীর প্রতিবাদের কারণে ক্লাব মালিক বান্টি ও আশিষের ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত আসে। একই কারণে আজিজ মোহাম্মদের স্বার্থেও আঘাত লাগে। ক্লাবটি বন্ধের চেষ্টা করায় বান্টি, আশীষ, আজিজ, তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের চক্ষুশূলে পরিণত হন সোহেল চৌধুরী। ঘটনার এক পর্যায়ে ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই আজিজের সঙ্গে নায়ক সোহেল চৌধুরীর তর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আজিজ ক্ষুব্ধ হয়ে সোহেলের ওপর প্রতিশোধ নিতে বান্টি ও আশিষকে অনুরোধ জানান।”

র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আশিষ আরও বলেছেন, “জনসমক্ষে আজিজকে অপমান করায় সোহেলের ওপর প্রতিশোধ নিতে তিনি (আশিষ) ও বান্টি একটি পরিকল্পনা করেন। ক্লাবে ইমনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তখন বান্টি, আশিষ ও আজিজ শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দিয়ে সোহেলকে হত্যার প্রস্তাব দেন। ইমন এ প্রস্তাবে রাজি হন। পরে ইমন এ হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করেন।”

উল্লেখ্য, বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী এ মামলায় ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। চার্জশিটে আছে আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর নাম।

২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। দুই বছর পর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় এক আসামি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এমএ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। 

এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এরপর গত ২০ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন ওই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ মার্চ দিন ধার্য করেন। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত তিনজনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর