১৩ জুলাই, ২০২২ ১৪:৫২

‘সেই অন্ধকার দৃশ্য দেখতে পারবেন অন্ধকার হওয়ার ৪৬০ কোটি বছর পরে’

মাহবুব কবির মিলন

‘সেই অন্ধকার দৃশ্য দেখতে পারবেন অন্ধকার হওয়ার ৪৬০ কোটি বছর পরে’

মাহবুব কবির মিলন

হ্যালির ধুমকেতু দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। ৭৬ বছর আবার দেখা যাবে ২০৬১ সালে। এটা ৭৬ বছর পরপর আমাদের পাশ দিয়ে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলে যায়। এমন অনেক কমেট আছে, তা হয়ত ১ লাখ বা ১ কোটি বছর পরপর আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছে।

কাজেই হ্যালির ধুমকেতু পরেরবার দেখার জন্য ২০৬১ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকব না, তাই ১৯৮৬ সালের হ্যালির আগমন শেষ রাতের দক্ষিণ আকাশে খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যেত বলে যতদিন তা ছিল, প্রতি রাতের শেষ প্রহরে দক্ষিণের জানালা দিয়ে অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকতাম। কোথা থেকে আসে এরা, কী নিয়ে আর কী দিয়ে যায়! সৃষ্টির এক অপার রহস্য সেটা।

ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ৪৬০ কোটি বছর "আগের" বা "পুরাতন" গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের ছবি নিয়ে অনেকেই কনফিউশনে আছেন। আগের, পুরাতন এবং দূরত্ব একই বিষয়, সৌরজগতের ক্ষেত্রে। পুরাতন মানে ৪৬০ কোটি বছর আগের তোলা ছবি নয়। ক্যামেরা ধারণ করেছে এখন, কিন্তু গ্যালাক্সিগুলোর অবস্থান ৪৬০ কোটি বছর আগের। সেই অবস্থানের আলোর রেখাগুলো ৪৬০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের পথ পাড়ি দিয়ে টেলিস্কোপের চোখে এসে পড়েছে। অর্থাৎ আমরা ওই এলাকার ছবি এখন থেকে প্রতিনিয়ত যা দেখব, সব ৪৬০ কোটি বছর আগের।

আমরা কখনই হালনাগাদ বা বর্তমানের ছবি দেখতে পারব না। সব সময় ৪৬০ কোটি বছর আগের বাসি বা পুরাতন অবস্থানেরটাই দেখব। আর ওই গ্যালাক্সি ক্লাস্টার সৃষ্টি হয়েছিল ১৩০০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং এর মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর পরে। এটা একটা বিশাল বিষয় যে, আমরা এই ছবির মাধ্যমে বিগব্যাং এর ইনিশিয়াল স্টেজ বা প্রাথমিক পর্যায়ের অবস্থা দেখতে পাচ্ছি।

ছবিটার দিকে চেয়ে একবার ভাবুন তো, আমরা বিশ্বজগত তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ের অবস্থান দেখছি, যার প্রতিটি বিন্দু বা দাগ এক একটি গ্যালাক্সি। এরকম এলাকা পুরো সৃষ্টিজগত জুড়ে রয়েছে। পুরো আকাশের তুলনায় এ ছবি একটি বালুকণার অগ্রভাগও নয়।

এবার একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি। সূর্যের আলো পৃথিবীর বুকে এসে পড়তে প্রায় ৮ মিনিট সময় লাগে। তার মানে আপনি যখনি চোখ খুলে সূর্যকে দেখবেন তা ৮ মিনিট আগের সূর্যের বাসি বা পুরাতন ছবি। আপনি পৃথিবী থেকে কখনোই হালনাগাদ বা এই মুহূর্তের ছবি দেখতে পারবেন না। আপনাকে তা ৮ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যা দেখবেন তা ৮ মিনিট আগের।

সেরকম ওই গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের হালনাগাদ বা এই মুহূর্তের ছবি কখনই দেখতে পারবেন না। যা দেখবেন, তা ৪৬০ কোটি বছর আগের। এই মুহূর্তের ছবি দেখতে হলে আপনাকে ৪৬০ কোটি বছর বেঁচে থাকতে হবে। ঐ গ্যালাক্সি ক্লাস্টার কোনোদিন যদি ধ্বংস হয়ে অন্ধকার হয়ে যায়, সেই অন্ধকার দৃশ্য দেখতে পারবেন অন্ধকার হওয়ার ৪৬০ কোটি বছর পরে।

এই ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নির্ঘাত আমাদের মাথা নষ্ট করে দেবে। যেদিন ১ লাখ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এবং ১ লাখ কোটি বছর আগের ছবি ধরা পড়বে, সেদিন তা বুঝতে যে কী অবস্থা হয় আমাদের!

বিজ্ঞানের কল্যাণও আল্লাহপাকের নেয়ামত ও রহমত। আল্লাহর জন্য মাথা নত হয়ে আসার এটি একটি উত্তম পন্থা।

২০০১ সালে কম্পিউটার কেনার পর প্রথম যে হাজার হাজার ছবি ডাউনলোড করে রেখে দিয়েছিলাম, তা হচ্ছে এইসব ছবি।

লেখক : অতিরিক্ত সচিব

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর