২ আগস্ট, ২০২২ ১৭:২৪

জিন্নাহর জীবনের শেষ ষাট দিন

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

জিন্নাহর জীবনের শেষ ষাট দিন

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র মৃত্যু আজও রহস্যের জালে ঘেরা। মৃত্যুর আগে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পরিবর্তে রাজধানী করাচি থেকে দূরে নির্জন অবস্থানে কেন কাটিয়েছেন? অবশেষে তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় কোয়েটার অদূরে স্বাস্থ্য নিবাস ‘জিয়ারত’ থেকে বিমানযোগে করাচিতে আনা হয়, তখন কোনো চিকিৎসায় তাঁর নিরাময় লাভের সুযোগ ছিল না। তিনি মারা যান। তাঁর জীবনের শেষ ষাট দিনের ওপর বিস্তারিত লিখেছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইলাহি বখশ।

জিন্নাহর মৃত্যু নিয়ে যেমন রহস্য, তেমনি তাঁর নেতৃত্ব ঘিরেও ধূম্রজাল আগেও ছড়ানো হয়েছে এবং এখনও হয়। বলা হয় তিনি ভারতকে বিভক্ত করার জন্য দায়ী। তার “টু নেশন থিওরি” বা দ্বিজাতিতত্ত্বকে ভ্রান্ত বলে তাকে যথেচ্ছ গালমন্দ করা হয়, কিন্তু কোনোটার জন্যই তিনি দায়ী ছিলেন না। তাকে দায়ী করা হলে ভারত-পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এর ইতিহাসকে পুনরায় ঘুরিয়ে লিখতে হবে। এ সম্পর্কে সত্য বলারও বিপদ রয়েছে, যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল পরলোকগত বিজেপি নেতা ও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী জসওয়ান্ত সিংকে। 

জসওয়ান্ত সিং ২০০৯ সালে প্রকাশিত তাঁর “জিন্নাহ: ইন্ডিয়া-পার্টিশন-ইন্ডিপেন্ডেন্স” গ্রন্থে প্রশ্ন তুলেছেন, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ কি ভারত বিভাগের জন্য দায়ী? তিনি ১৯৪৭-পূর্ব ভারতীয় উপমহাদেশে জিন্নাহ’র নেতৃত্বের প্রশংসা করে দাবি করেছেন, যে জিন্নাহ’র শক্তিশালী ফেডারেল ব্যবস্থার বিপরীতে কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুর ক্ষমতার “চরম কেন্দ্রীকরণ নীতি” ভারত বিভক্তির জন্য দায়ী। গান্ধী জিন্নাহ’র প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু নেহরু তা মেনে নেননি। জসওয়ান্ত সিং ভারত বিভাগের জন্য জিন্নাহ’র পরিবর্তে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল ও কংগ্রেস নেতৃত্বকে। 

তিনি লিখেছেন, “হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দূত, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতার পাকিস্তানের কায়দে আজম হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ছিল জিন্নাহর বীরত্বপূর্ণ অভিযানের সাফল্য।” তিনি তার গ্রন্থে গান্ধীকে প্রায় পুরোপুরি ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং জিন্নাহকে সন্দেহাতীতভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা-সম্পন্ন বলে বর্ণনা করেছেন। 

জসওয়ান্ত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টি - বিজেপি’র নেতা। অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স) সরকারে তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিজেপি তাকে আহবান জানায় জিন্নাহ সংক্রান্ত তার বক্তব্য সংশোধন করতে। তিনি তা করতে অস্বীকার করেন এবং তাঁর বক্তব্যে অটল থকেন। ফলে তাঁকে বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিস্কার করা হয়। 

২০১০ সালে সিএনএন এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জসওয়ান্ত সিং বলেন, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতাকে ভারত ‘খলনায়কে’ পরিণত করেছে এবং ভারতের মুসলমানদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। 

জসওয়ান্ত সিং বলেছেন, “জিন্নাহ পাকিস্তান জিতেননি, কারণ কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ নেহরু ও প্যাটেল পাকিস্তানকে জিন্নাহ’র হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং সদা-সহায়ক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ধাত্রীর কাজ করেছিল।”

তিনি বলেন, “ভারতে জিন্নাহর বিরুদ্ধে প্রচারণা সত্য-নির্ভর নয় বলেই আমাদের তা শুধরানো প্রয়োজন।” সিএনএন’কে তিনি বলেন, “আমি  জিন্নাহকে অবশ্যই একজন মহান ভারতীয় বলে স্বীকার করি। কারণ তিনি একেবারে শূন্য থেকে পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিলেন, এককভাবে কংগ্রেসের বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে এবং ব্রিটিশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, যারা তাঁকে পছন্দ করতো না। স্বয়ং গান্ধী যদি জিন্নাহকে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান’ বলে উল্লেখ করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন এ সত্য স্বীকার করতে পারবো না। আমরা কেন উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি না যে কী কারণে গান্ধী তাকে ‌‘গ্রেট ইন্ডিয়ান’ বলতেন।”

তিনি আরও বলেন, “জওহরলাল নেহরুর পরিবর্তে ভারত সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যদি মহাত্মা গান্ধী, রাজা গোপালাচারি অথবা মাওলানা আজাদ গ্রহণ করতেন, তাহলে একটি অখণ্ড ভারত অর্জন করা সম্ভব হতে পারতো। ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের চোখের দিকে তাকান এবং নিজ দেশে তারা যে দুর্দশা ও যন্ত্রণা নিয়ে বাস করে আপনি যদি সত্যিই তা দেখেন তাহলে বিচলিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। অখণ্ড ভারতে তারা তাৎপর্যপূর্ণ শক্তির অধিকারী হতে পারতো --- আমি জানি, আমি যা বলছি, তা পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পছন্দ করবে না। ”

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর