১৭ জুলাই, ২০২৩ ১৮:০৮

ঘাতকের দল তামিমকে বাঁচতে দিল না

খোরশেদ আলম

ঘাতকের দল তামিমকে বাঁচতে দিল না

তামিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রেস ব্রিফিং। (ইনসেটে নিহত তামিম)

উত্তরার একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিল তামিম। বয়স সবেমাত্র ২৫। মাওলানা বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়াশোনা করে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু ঘাতকের দল তামিমকে বাঁচতে দিল না। খুন করলো একটা পরিবারের স্বপ্নকে। তামিম খুন হবার পরে তার বাবা এসে অভিযোগ জানায়। কোন ক্লু ছিল না। কোন প্রমাণাদি, স্বাক্ষী না থাকায় আমাদের একটু বেগ পেতে হয়। তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যের অতীতের মত ক্লু-লেস এই মামলায় জড়িত খুনিদের গ্রেফতার করি।

নিহত তামিম গত ২৬/০৬/২০২৩ মাগরিবের পর মীরের বাজার থেকে বোর্ড বাজার মামার বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়। অটোরিকশায় টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আমতলী এলাকায় আসলে ৫/৬ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে নিহত তামিম এবং অটোরিকশায় থাকা অন্য একজন যাত্রী সোহেলকে অপহরণ করে। দুইজনের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় ঘাতকের দল। বিকাশ থেকে তাদের টাকা উত্তোলন করে এবং মারধর করে।

নিহত তামিমের নিকট পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় ঘাতকের দল তামিমকে অপহরণ করে একটা অন্ধকার নির্জন গলিতে নিয়ে যায়। প্রাণনাশের হুমকি ও ভীতিপ্রদর্শন করে তামিমের পরিবারের নিকট টাকা চাওয়া হয়। বিকাশে ১০ হাজার টাকাও পাঠায় স্বল্প আয়ের তামিমের পরিবার। যেন তাদের সন্তানের কোন ক্ষতি না হয়।

খুনিরা আরও অর্থের লোভে নিরপরাধ তামিমের উপর নির্মমভাবে আঘাত করতে থাকে। তাদের মারধরের কারণে এক পর্যায়ে তামিম অজ্ঞান হয়ে যায়। তামিমকে মৃত মনে করে খুনির দল তামিমকে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। এই ঘটনায় তামিমের বাবা মামলা করে টঙ্গী পূর্ব থানায়। অজ্ঞাতনামা, কোন স্বাক্ষীপ্রমাণ ছাড়া মামলা রুজু হ। ক্লু-লেস মামলার দায়িত্ব এসে পড়ে আমার উপর।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাননীয় কমিশনার মাহবুব আলম বিপিএম, পিপিএম (বার) স্যারের নির্দেশক্রমে, ডিসি ডিবি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান পিপিএম স্যারের নির্দেশনায় আমার নেতৃত্বে আমার টিম ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদঘাটন করতে সক্ষম হই। অতীতেও বেশ কিছু ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামি ধরার কারণে পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জড়িত ২ খুনিকে গ্রেফতার করি।

নিহত তামিমকে অপহরণ করে চাঁদা আদায় এবং খুন করার অপরাধে পলাশ সরকার এবং মো. আল আমিনকে গ্রেফতার করি। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য সবাইকে খুব দ্রুত গ্রেফতার করতে আমি ও আমার টিম সর্বোচ্চভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা তামিমকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না। কিন্তু নিহত তামিমের হত্যাকাণ্ড এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অপরাধীকে আটক করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করে দিতে পারবো।

এসব মামলা ডিটেক্ট করতে গিয়ে পরিবার, পরিজন ছাড়া বিনিদ্র রজনী পার করতে হয়। আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের জীবন ও অনেক সময় ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে হয়। এসব নিয়ে আমার কোন দুঃখবোধ নাই। কিন্তু কোন খুনের কেইস সামনে আসলে আমায় ভীষণ ভাবে ব্যথিত করে। অপরাধীকে গ্রেফতার না করা অব্দি তখন মানসিকভাবে শান্তি পাই না।

দোয়া করবেন যেন আমার পবিত্র এই পেশায় যতদিন আছি দায়িত্ব নিয়ে ততদিন আপনাদের নিরাপদ রাখতে কাজ করে যেতে পারি এই রকম খুনি আল আমিন ও পলাশদের বিরুদ্ধে যাতে করে আর কোনো তামিম এর মায়ের বুক খালি না হয়।

লেখক: অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর