২১ জুলাই, ২০২৩ ২১:৩২

হঠাৎ করেই কেউ যদি বলে বসেন, আমিই প্রথম নিজেকে প্রমাণ করেছি...

ইফতেখায়রুল ইসলাম

হঠাৎ করেই কেউ যদি বলে বসেন, আমিই প্রথম নিজেকে প্রমাণ করেছি...

ভদ্রলোক আসলেন, তাঁর আগে আরও অনেকে এসেছেন, প্রমাণও করে গেছেন নিজেদের বারবার! কিংবদন্তীতুল্য একজন অভিনেতা নিজেকে বাণিজ্যিক, অফ ট্র্যাকের প্রতিটি ধারায় সফল হিসেবে প্রমাণ করে গেছেন! তারপরও কেউ বলছে তিনিই প্রথম কিছু একটা করে দেখালেন! অথচ কিংবদন্তীতুল্য অভিনেতাদের মাঝেও সেই আত্মম্ভরিতা দেখা যায়নি! জ্ঞানলব্ধ কথাবার্তা, নিজ ব্যক্তিত্ব দিয়ে তাঁরা নিজেদের অনেকের আদর্শ হিসেবে প্রমাণও করে গেছেন! এখন হঠাৎ করেই কেউ যদি বলে বসেন, আমিই প্রথম নিজেকে প্রমাণ করেছি সেটি আলোচনায় থাকার একটি কৌশল কিনা তা ভাবনার বিষয়! বিষয় যাই হোক না কেন, এটি যথাযথ কৌশল মোটেও নয়!

তাঁর বলা নিয়ে অতিরঞ্জন হয়েছে সেটি চোখেও পড়েছে আবার তিনি কিছু কিছু জায়গায় মজা নিতে চেয়েছেন সেটিও প্রমাণিত! বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন পেশার অনেককেই আমরা পছন্দ করি! যারা প্রবল জনপ্রিয় তাঁদের কাছে প্রত্যাশা থাকে তাঁদের আদর্শিক অবস্থান সুদৃঢ় হবে এবং এটা শুধুই আমাদের চাওয়া! কেউ কেউ নিজেদের ধরে রাখতে পারেন, অনেকেই আবার পারেন না! সেই না পারাতে তাঁদের অবস্থান আমাদের কাছে নাজুক হয়!  আমরা ভুলে যেতে চাই সবকিছুর পর তাঁরাও মানুষ! ভুল, ত্রুটির ঊর্ধ্বে নন!

কিংবদন্তীতুল্য একজন লেখকের প্রতি তাঁর অনেক ভক্তের মনোবেদনা হয়েছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের যাপন নিয়ে, অথচ তিনি কোনো বিধি বহির্ভূত কাজ করেননি কিন্তু তাঁর ভক্তরা তাঁকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন সেটা তিনি পারেন নি তাই বলে তাঁর যোগ্যতার জায়গা কি বিলীন হয়ে যায়!? কখনোই না!
 
ব্যাপক পরিচিত মানুষ ভুল করবেন না তা নয় তবে সেই ভুলের উপর অটুট থাকাটা যথাযথ নয়! একটি ক্ষেত্রে যাত্রা শুরু না করেই যদি নিজের পুরনো অবস্থান থেকে অন্যের প্রতি আচরণ সংবেদনশীল না হয় তবে ব্যক্তি নিজেও শ্রদ্ধার আসন হারাবেন!
 
এ দেশের একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা যিনি বছরের পর বছর নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন, (ব্যক্তিগত অবস্থা বাদ দিয়ে বলছি) তাঁকে পচাতে পারলে অনেকেরই মনে হয় খুব জাতে উঠা হয়ে যায়! এই ভদ্রলোকের ক্যারিয়ার গ্রাফ দেখলে দেখা যাবে তিনি অনেক স্ট্রাগল করেই নিজেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন, এখনো চলছেন! তাঁর বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ সময়কে আপনি উপেক্ষা করলে আপনি নিজেই হারিয়ে যাবেন! চলচ্চিত্রের সফলতা শুধু ক্লাস অডিয়েন্স দিয়ে হয় না, এখানে ম্যাস পিপলের বড় অবদান থাকা লাগে! তিনি একসময় ক্লাসের ছিলেন না, কিন্তু এখন ক্লাস, ম্যাস সকলের হয়ে উঠেছেন! আর নাক সিটকানো গ্রুপ শুধু ড্রয়িং রুমের অডিয়েন্সের কাছে ছিলেন বা তারও একটু বেশি কারো কাছে! সেই অবস্থান দিয়ে একজনকে মেপে, ফেলে দিতে চাইলে নিজের অর্জিত সম্মান হারাতে হতে পারে! সবে তো শুরু যেতে হবে বহুদূর!

একজনের একটি দুর্বলতাকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেখা যাচ্ছে ব্যক্তি তাঁর নিজের সেই অবস্থানকেও খুব একটা খোলাসা করেননি! যার যার ব্যক্তিগত চাওয়া অবশ্যই থাকবে কিন্তু সেটি যেন অন্যকে আহত না করে সেদিকে নজর দেয়াও জরুরি। প্রথমেই যদি দেখা যায় নিজের বলা নিয়ে বিভ্রান্তি আসছে তখন ব্যক্তির বলা সুনির্দিষ্ট হওয়া জরুরি হয়ে যায়, কিন্তু তারপরও যখন দেখা যায়  ব্যক্তি ভাসা ভাসা বলছেন, করছেন তখন বুঝতে হবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত খেলায় তিনি নিজেও মজা পাচ্ছেন ও নিচ্ছেন, যেটি হওয়া উচিত নয়!

হঠাৎ করে শিল্পী তৈরি হয় না, সময়ের পরিক্রমায় শিল্পী তৈরি হয়, নিজেদের সম্মান নিজেরা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে অন্যরা তা থেকে ফায়দা নেবেই! ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি থাকবেই তবে সেটি ব্যক্তির চরিত্রের কাঁদা ছোড়াছুঁড়িতে না নেয়াই উত্তম! দিনশেষে কেউই শতভাগ পরিশুদ্ধ নন, সেটি মাথায় রাখা জরুরি! পর্দা বড় বা ছোট বিষয় নয় মন মানসিকতা বড় হওয়া জরুরি!

(ছুটিতে থাকায় অবসর সময়ে একটু লিখেই ফেললাম, পড়তে পারেন নাহলে উপেক্ষাও করতে পারেন)

লেখক : এডিসি, ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত, ডিএমপি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর