২১ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:০৮

ভয়াল ২১ আগস্ট

অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু

ভয়াল ২১ আগস্ট

গায়েবানা জানাজার ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার মুছে দিতে চেয়েছিলো ওরা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের চাঁদর দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের প্রিয় নেত্রীকে।
তা না হলে এ রাষ্ট্র এতদিনে আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্র হয়ে যেতে পারতো। মৌলবাদীদের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতো সব কিছুতেই।

আমি তখন কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আমাদের সকল নেতা কর্মীরা আপন ইচ্ছায় রাস্তায় নেমে এসেছিলো। পুলিশ নিজ থেকেই রাস্তা ছেড়ে দিয়ে কোথাও চলে গিয়েছিলো।

আমাদের ছেলেরা রাতেই বিএনপি অফিসে হামলা করে, বিএনপি নেতার সাত্তার খান কমপ্লেক্স ভাঙে, বিএনপির বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। পরদিন আমিসহ আমাদের অনেক নেতা কর্মীর নামে বিএনপির অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা হয়।

মরহুম জননেতা আফজল খানের পুত্র মরহুম ইমরান খান এবং আরো কিছু ছাত্রনেতার নামেও একটি মামলা হয়।
তবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি বরং গোপনে আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছে।

২২ আগস্ট আমরা টাউনহল মাঠে গায়েবানা জানাজা করি। সে জানাজায় জননেতা আফজল খান, অধ্যাপক মোঃ খোরশেদ আলম, মুজিবুল হক, অধ্যক্ষ আবদুর রউফ, এড. জহিরুল ইসলাম সেলিম, শফিক সিকদার উপস্থিত ছিলেন। অনেকেই সেদিন গায়েবানা জানাজায়ও আসেননি।

এরপর সাপ্তাহ খানেক বিএনপি নেতাদের রাস্তায় খুব একটা দেখা যায়নি। হয়তো ঝামেলা এড়াতে চেয়েছে। আবার অনেকেই মন থেকে তারেক রহমানের এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি।

আজ যারা কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ যুবলীগের কাগজে কলমে নেতা তাদের কেউ সেদিন আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি, মামলায়ও আসামি হয়নি।

ঢাকার রাজপথে সেদিন লাশ আর লাশ। বহু হাসপাতাল ভয়ে চিকিৎসা করেনি। রক্ত দিয়েছে বহু নেতা কর্মী। আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছে অনেকেই। সাংবাদিক, ছাত্র, যুবক, নারী-পুরুষ অনেকেই আজও গ্রেনেডের স্প্রিন্টার শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে।

পুলিশ সেদিন চাকরি রক্ষার্থে টিয়ারগ্যাস মেরেছে আহতদের। আলামত হিসেবে পাওয়া অবিস্ফোরিত গ্রেনেড নিজেরা ফুটিয়ে ফেলেছে। শেষে হামলাকারী হিসেবে হাজির করেছে জজ মিয়াকে !

সরকার চাইলে এতো বড় ঘটনাও ধামাচাপা দিতে পারে, সেদিন সরকার তা প্রমাণ করেছে। সরকার বদলের পর থলের বিয়াল বেড়িয়ে এসেছিলো।

সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী সেদিন আমাদের নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, তিনি নিজেই হয়তো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ভ্যানেটি ব্যাগে করে সমাবেশে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন।

১/১১ সরকারের সময় সেনা সদস্য মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, আব্দুর রহিম, কয়েকজন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং জঙ্গি মুফতি হান্নানসহ অনেককে গ্রেফতার করে তারা সবাই স্বীকারোক্তি দেয় যে, তারেক রহমানের নির্দেশে ও পৃষ্ঠপোষকতায়, বিএনপির ক্ষমতা দীর্ঘ দিনের জন্য নিশ্চিত করতে তারা এই জঘন্য হামলা করেছিলো।

পিতার পদাংক অনুসরণ করে ১৫ আগস্টের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তির পথে এগিয়ে গিয়েছিলো পুত্র। মহান আল্লাহ তা সফল হতে দেননি।
এ ঘটনার জন্য তারেক রহমানের সর্বোচ্চ সাজা না হলে, তা এ রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একটি দগদগে ক্ষত হয়ে থাকবে।

এতো গুলো নির্দোষ মানুষ নিহত হলো, এতো এতো মানুষ আহত হলো যার হুকুমে, তার ফাঁসির আদেশ না হওয়া একটি বিস্ময়কর রায়। এ রায় গ্রহণযোগ্য নয়।

গায়েবানা জানাজার ছবির জন্য সাংবাদিক ওমর ফারুকী তাপস ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

লেখক: সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর