১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:৩০

জাপানের মূল রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাপানিজ

আরিফুর রহমান

জাপানের মূল রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাপানিজ

কাজী হেনরী নাকানো

কাজী হেনরি নাকানো ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখে সে একদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী হবে। তার পিতা কাজী মাহফুজুল হক লাল সাতক্ষীরার মানুষ, জাপানে প্রবাসী হয়েছেন বহু বছর আগে। 

হেনরির জাপানী মা বলেছেন, "হেনরী স্কুল জীবন থেকেই জনসেবামূলক খেলা খেলতে ভালোবাসতো। বাবা মাকে বলতো, আজকে আমাদের এখানে ভূমিকম্প হয়েছে, তোমাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তো?" 

হেনরী ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাপান আর্মিতে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০১৬ সনে টোকিও পাওয়ার ইলেকট্রিক কোম্পানিতে কাজ করেছে। আওয়ামা এবং মেইজি ভার্সিটি থেকে কৃষি ও ম্যানেজমেন্ট নিয়ে গ্রাজুয়েশন করে আওয়ামা ভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছে হেনরী। 

এরপরে চাকরিজীবী ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে জাপানের মূলধারার রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে সে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত জাপানের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে টোকিও মেট্রোপলিসের এদোগাওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে হেনরী নাকানো তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছে। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে সে এমপি পদে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন থেকে। 

টোকিও মূল শহরে বয়ে যাওয়া এদো নদীর নামে এদোগাওয়া ওয়ার্ডটি সাতটি অঞ্চলের সমন্বয়। ওয়ার্ডটির জনসংখ্যা প্রায় সাত লক্ষ যেখানে ৯৯.৫ শতাংশ আসল জাপানি আর ০.৫ শতাংশ ইমিগ্রেন্ট ভারতের। বাংলাদেশের যৎসামান্য। 

ওয়ার্ডটির অফিসিয়াল ফুল রোডেন্ড্রন হলেও চেরি বাগান আর অবারিত সবুজ পার্কের জন্যে টুরিস্টদের প্রিয় এলাকা এটি। যারা বনসাই গাছ ভালোবাসেন তারা এখানে বনসাই মিউজিয়াম দেখতে যান। অনেকে নদীর পাড়ের সবুজ ঘাসের উপর বসে মেঘ আর বহতা পরিষ্কার পানি দেখেন চুপচাপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা। 

কাজী হেনরী নাকানোর পিতা কাজী মাহফুজুল হক (লাল) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাপান শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি আমাকে ফোনে বললেন, "বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) এম রাশেদ চৌধুরী যখন সাময়িক ভাবে জাপানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তখন ২৬ মার্চের দিনে তিনি দূতাবাসে পতাকা উত্তোলন করতে গেলে আমার নেতৃত্বে শ' দুয়েক প্রবাসী তাকে খুনি খুনি বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাই। পরে আমরা কয়েকজন মিলে আওয়ামী লীগ জাপান শাখা খুলি। বিরোধী দলে এবং সরকারে থাকা অবস্থায় আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনবার আমার শহর এদোগাওয়া টাউন হলসহ কয়েক জায়গায় সংবর্ধনা দিয়েছি। কিন্তু জাপানে গত বছর দুয়েক ধরে অনুপ্রবেশকারী নব্য লিডার, হাইব্রিড আর কিছু আমলা-রাজনীতির কারণে আমার মতো অনেক প্রবাসী আদি তৃণমূল কর্মীরা হারিয়ে গেছি। এবার নেত্রীর জাপান সফরে আমাদের কোনো ভূমিকা রাখতে দেয়া হয়নি। তবুও আমরা দলকে ভালোবাসি আর সমর্থন করি, আমার জন্মভূমির সাথে আর নেত্রীর সমর্থনে সবসময় থাকি ও থাকবো।"  

তিনি বলেছিলেন, "আমার কাছে দেশের প্রতি, দলের প্রতি ভালোবাসার সব গল্প শুনে শুনে আমার সন্তান তার জন্মস্থান জাপানকে সার্ভ করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ছোটবেলা থেকে। আমি চাইতাম সে অন্য সবার মতো বড়ো চাকুরে হোক, হয়েও ছিলো। কিন্তু আমার বাংলার রক্তের উত্তরাধিকার তাকে এত কম বয়সে জাপানের মূলধারার রাজনীতিতে ঢুকিয়ে নিলো। আমি একটি সৎ রাজনৈতিক পরিবেশে থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। অসৎ প্রতিযোগিতা আর কানকথা আমাকে দূরে ঠেলে দিলো।" 

কাজী আরো বললেন, "হেনরী ওর রাজনীতির গল্প শোনায় আমাকে, আমি মনে মনে কাঁদি, আমরা বাংলাদেশকে জাপান বানাতে চাই, জাপানীদের অর্থ সাহায্য নেই, কিন্তু সভ্যতা ও শিক্ষা নেই না। অথচ সেটি নেয়া উচিত ছিলো সবার আগে।"

আমি বললাম, দেখা গেছে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী হয়ে যারা বাংলাদেশি রাজনীতি করে তারা দেশের কথা ভাবার চেয়ে নিজের একটা পদ পদবি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে। আপনি দেশকে নিয়ে এত ভাবেন আমাকে একটা কনস্ট্রাক্টিভ ভাবনা দিনতো যা আমাদের দেশকে আমূল বদলে দিতে পারে!  

কাজী একটু থেমে বললেন, "একমাত্র একটি একক ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশকে আধুনিক জ্ঞানী ও সভ্য জাতি হিসাবে গড়ে তুলবে। এটি করতে হলে সরকারকে হতে হবে নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব। যারা শুধু বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলবে আমাদের অতীত নিয়ে কোনো টানাটানি করবে না। অতীত শুধু বিচ্ছিন্নতা ও শত্রু শত্রু খেলা তৈরি করে। জাতিকে সব উন্নত দেশের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমার ছেলে জাপানী তরুণদের ঐক্যের গল্প বলে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।" 

বললাম, যখন হেনরী এমপি হবে তখন আমাকে জানাবেন, আমি বেঁচে থাকলে। কাজী লাল ভাই বললেন, আমিও বেঁচে থাকলে আপনাকে জানাবো।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর