শিরোনাম
১৯ মার্চ, ২০২১ ১৬:৫৮

দিনাজপুরে সেঁউতি-ডোঙার ব্যবহার এখনো হারায়নি

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর:

দিনাজপুরে সেঁউতি-ডোঙার ব্যবহার এখনো হারায়নি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় যান্ত্রিক সভ্যতার যাঁতাকলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন কৃষিযন্ত্র সেঁউতি ও ডোঙা। এক সময় গ্রাম বাংলার কৃষিতে সেচযন্ত্র হিসেবে টিন বা বাঁশের তৈরি সেঁউতি ও ডোঙার ব্যাপক চাহিদা ছিল। টিন বা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি ডোঙা দিয়ে খাল বা নিচু জমি হতে উপরে পানি সেচ সিঞ্চন করতো (স্থানীয় নাম জাত)। গ্রামবাংলার কৃষকদের আদিকাল থেকেই চিন্তা চেতনার ফসল হিসেবে ব্যবহৃত হতো এ সেঁউতি ও ডোঙা। 

কিন্তু এখনও দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের নশরতপুর ও সাতনালা ইউনিয়নে নদী থেকে জমিতে সেচ সুবিধা দিতে সেঁউতি ও ডোঙার মাধ্যমে ইরি-বোরোক্ষেতে পানি সেচ দিতে দেখা গেছে। কৃষকরা ডোঙা দিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি সেচ দেয়ার সুবিধা পায়। কায়িক পরিশ্রম হলেও এতে সেচ খরচ কম লাগে। 

এ অঞ্চলে ইছামতি, কাঁকড়া, ভেলামতি, আত্রাই, বেলান নদী এ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। এসব নদী শুকনো মওসুমে কোথাও পানি আছে, কোথাও চাষের জমি হয়েছে। 
তবে এ উপজেলার অনেক মানুষ আধুনিক যুগের শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে ফসল চাষ করছেন। 

চিরিরবন্দরের সাতনালা ইউনিয়নের খামার সাতনালা গ্রামের হেদলাপাড়ার মো. সামসুদ্দিন (৫৬) বলেন, 'হামরা গবিব মানুষ। এখন পানি সেচের জন্য কত আধুনিক যন্ত্রপাতি বাইর হইছে। শ্যালো, ডিপমর্টার আরও কতো কী ? হামার এত টাকা নাই, যা দিয়া হামরা ওইলা যন্ত্র কিনিবার পারি। এমনিতেই পানির দাম দিবার পারি না।'
 
তিনি আরো বলেন, 'মোর কপাল ভালো যে, মোর ভুই’র(জমি) পাশোত তাও পানি আছে। না হইলে যে মোর কি হইল হয়?'

কৃষক আমিরউদ্দিন (৬০) বলেন, 'হামরা বাপ-দাদার ঘরক দোন ও সেঁউতি দিয়া সেচকাম করির দ্যাখিছি। হামরা গরীব মানুষ। মেশিন কিনিমো কীভাবে। তাই জাত দিয়া নদী থাকি পানি তুলি জমিত দিয়া ফসল ফলাই। এখন আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতি আসায় এগুলোর ব্যবহার আর তেমন হয় না।'

কৃষক ইসমাইল হোসেন (৬৪) বলেন, ডোঙা দিয়ে পানি সেচ কায়িক পরিশ্রম হলেও সেচের মাধ্যমে কাউকে ফসলের ভাগ দিতে হয় না। জমিতে যে ফসল ফলে তাই ঘরে ওঠে। 

ইছামতি ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান জানান, আগের মতো চোখে না পড়লেও এখনও গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের দোন ও সেঁউতি দিয়ে পানি উত্তোলন দেখতে পাওয়া যায়। 

চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্তকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান জানান, নদী-পুকুরে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দোন/ডোঙা আর সেঁউতির ব্যবহার আর আগের মতো চোখে পড়ে না। তবে যে জায়গাগুলোতে সেচ পাম্প অপ্রতুল সে জায়গাগুলোতে এখনও দোন ও সেঁউতির ব্যবহার দেখা যায়।  রবি মৌসুমে কৃষকরা নদী-নালা, খাল-বিল থেকে দোন/ডোঙা আর সেঁউতির মাধ্যমে জমিতে সেচ সুবিধা দিয়ে থাকে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর