২৩ আগস্ট, ২০২১ ১৬:৫৭

দুই বোনের চিত্রকর্মে আগ্রহ বাড়ছে তরুণীদের

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

দুই বোনের চিত্রকর্মে আগ্রহ বাড়ছে তরুণীদের

করোনার অবসন্নতা কাটাতে লক্ষ্মীপুরের কলেজে পড়ুয়া দুই বোনের শিল্পকর্মে এখন মুগ্ধ হয়ে উঠেছেন দেশি-বিদেশি ক্রেতারা। শখের বশে দুই বোনের রং-তুলিতে ক্যানভাস রাঙানোর নৈপূন্যতা দেখে চিত্রকর্মে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন প্রতিবেশী অন্য তরুণীরাও। প্রতিভাবান এ দুই বোন তাসনিম আর তাফহিম। পৌর শহরের মজুপুরে অবস্থিত তাদের ভাড়া বাসার পড়ার রুমটা এখন যেন চারু-কারু শিল্পের মিনি প্রতিষ্ঠান। তবে তারা স্থানীয়ভাবে একটা চারু-কারু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন বলে জানান।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের উত্তর মজুপুরে অবস্থিত চাকরীজীবি ফজলুর রহিম মাহমুদ থাকছেন ভাড়া বাসায়। তার কলেজে পড়ুয়া দুই কন্যা রয়েছে।  বড়জন ফাতেমাতুজ জোহরা তাসনিম ও  আর ছোটজন রুবাইয়া আক্তার তাফহিম। তাসনিম পড়াশুনা করছেন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের একাউন্ডিং বিভাগে আর তাফহিম একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসার ড্রয়িং রুমটা যেন চিত্রকর্মের এক্সিবিশন ফ্লোর। পড়ার রুমটা এখন যেন চারু-কারু শিল্পের মিনি প্রতিষ্ঠান। আশে পাশের তরুণীদের চারু-কারু কাজ শেখানোতে ব্যস্ত রয়েছেন তারা। 

এই দুই চিত্রশিল্পী বোনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা রংতুলির চিত্রকর্ম শিখেছিল ছোটবেলায়। কোন প্রতিষ্ঠানে নয়। দাদার কাছে। দাদাও শখবাজ আঁকিয়ে ছিলেন তাদের। এরপর বড়বোনের প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও মনোবলে আগ্রহী হয়ে উঠেন ছোট বোন তাফহিম। দু'বোন মাঝেমধ্যে সময় পেলে টুকটাক আঁকতো। সেগুলো তাদের নিজেদের ঘরে শোভা পেত আর নিজেদের মনের খোরাক মেটাতো। আঁকাআঁকি নিয়ে এ পর্যন্তই  থাকতে চেয়েছিল তারা। মূল লক্ষ্য ছিল লেখাপড়ায় উচ্চশিক্ষা আর ভাল চাকরি করার। কিন্তু গত বছর থেকে মহামারি করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে তারা চিত্রকর্মে মনযোগী হয়ে উঠে। নিজেরা বেশ কিছু কাজ করে এ কাজের একটা ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে তা ছড়িয়ে দেয়। তা দেখে মুগ্ধ হয় দেশ-বিদেশের দর্শক। অনলাইনে অর্ডার আসে। এক দুই করে অনেক অর্ডার আসতে থাকে। তারা আরও উদ্বুদ্ধ হয়। বেশ উপার্জনও আসে তাদের। বাড়তে থাকে কাজের পরিধি। সম্প্রতি আমেরিকায় তাদের আঁকা ৫টি ছবি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন তারা। পরে তাদের কাজে একে একে যোগ হয় অয়েল পেইন্টিং, মান্ডালা ড্রয়িং,ডুডল আর্ট,ক্যালিগ্রাফি, ক্র্যাফট ডিজাইন, টাইফোগ্রাফি, টিশার্ট, শাড়ি, বোরকা, জামা ইত্যাদি তাদের রংতুলির শৈল্পিক ছোঁয়ায় হয়ে উঠে মনোমুগ্ধকর। 

তাদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী শিক্ষার্থী ও বেকার যুবতীরা তাদের কাছে চিত্রশিল্পের এ কাজ শেখার আগ্রহ নিয়ে ছুটে আসে। তারাও রাজি হয়। বর্তমানে নিজেদের বাসার পড়ার রুমটায় আগ্রহীদের শেখানো হচ্ছে চারু-কারু কাজ। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বলছেন ব্যাপক উৎসাহ ও স্বপ্ন নিয়ে শিখছেন তারাও। আর চিত্রকর্মের গ্রাহকরা মুগ্ধ হয়ে তাদের এ শিল্পকর্মকে সাধুবাদ জানান।

এদিকে তাদের এ শিল্পকর্মের অর্জন হিসেবে অনলাইনে একটি বিদেশী প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে তারা কেপিআর এ্যাওয়ার্ড আর্ট কম্পিটিশন-২ সম্মাননা সনদ অর্জন করেন বলে জানা যায়। আঁকাআঁকিতে তাদের ব্যবহৃত মিডিয়া : আর্কিলিক অন ক্যানভাস।  

এখন এ দুই বোন লক্ষ্মীপুরে একটা চারু-কারু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন।  এর মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রতিভার পাশাপাশি অন্যদের প্রতিভাকেও বিকশিত করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আর তরুণ প্রজম্মকে চাকরীর পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান এ দুই চিত্রশিল্পী। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর